ভাগ্যিস লকেট গিয়েছিলেন, মিড ডে মিলের মেনু নিয়ে এখন জেলায় জেলায় প্রতিযোগিতা

দিনের পর দিন ছোট ছোট ছেলে মেয়েগুলোর পাতে জুটছিল নুন ভাত। আলে কালে একটা আলু সেদ্ধ। হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়ার বাণীমন্দির প্রাথমিক স্কুলে মিড ডে মিলে এটাই মেনু হয়ে গিয়েছিল। খবর পেয়ে গত ১৯ তারিখ ওই স্কুলে ছুটে যান হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। হইহই পড়ে যায়। খবর ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। তারপরই টনক নড়ে নবান্নের। মিড মিলে কবে কী খাওয়ানো হবে তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। আর তারপরই শুরু হয়ে গিয়েছে জেলায় জেলায় প্রতিযোগিতা। এই জেলা এক দিন ডিম এক দিন মাছ খাওয়ালে আর একটা জেলা বলছে তারা দু’দিন ডিম একদিন মাংস খাওয়াবে। সব দেখে অনেকেই বলছেন, ভাগ্যিস লকেট গিয়েছিলেন! না হলে আজও হয়তো বাচ্চাগুলোকে নুন ভাত খেয়ে ক্লাস করতে হতো।

এমনিতে মিড ডে মিল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ভুরি ভুরি। কোথাও চাল লোপাট হয়ে যায়। কোথাও দেখা যায় গোটা ডিমের বদলে ছাত্রছাত্রীদের পাতে পড়ছে অর্ধেক ডিম। বাণী মন্দির স্কুলে গিয়ে লকেটও অভিযোগ তুলেছিলেন দুর্নীতির। বলেছিলেন, ট্রে ট্রে ডিম এবং বস্তা বস্তা চালের কোনও হদিশ নেই।

লকেটের নেতৃত্বে বাণীমন্দিরের ঘটনা সামনে আসার পরই রাজ্যের একাধিক জেলায় মিড ডে মিলের করুণ ছবি উঠে আসে। কিন্তু তারপর থেকেই ছাত্রছাত্রীদের পাত ভরিয়ে দিতে যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে জেলায় জেলায়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সপ্তাহে এক দিন ডিম আর এক দিন মাছ খাওয়ানোর নির্দেশ দিয়েছে স্কুল গুলিকে। আর হুগলি যেন আরও একধাপ এগিয়ে। এই জেলায় দু’দিন ডিম দেওয়া হবে।

একদিন ডিমের ঝোল আর একদিন সবজি খিচুরির সঙ্গে সেদ্ধ ডিম। বুধবার বুধবার ছাত্রছত্রীদের লাঞ্চে দেওয়া হবে মুরগির মাংস। শুধু মাংস নয়। তাতে যেন আলুও থাকে তা-ও বলে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ডিমের ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নির্দেশিকা বুঝতে যাতে অসুবিধে না হয়, তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্র্যাকেটে লিখে দেওয়া হয়েছে ‘গোটা।’

সব দেখে অভিনেত্রী সাংসদ বেশ খুশি। লকেট বলেন, “অন্যায় যেখানে হবে সেখানেই ছুটে যাব। রাজনীতি বাদ দিন। আগে তো আমি একজন মা। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা যদি নুন ভাত খায়, জ্বালা তো হবেই। আজকে যদি আমার জন্যই টনক নড়ে প্রশাসনের, আর বাচ্চাগুলো পেট ভরে খেতে পারে, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে!”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.