জলবায়ু পরিবর্তনের জের! এক দশক ধরে দেশে ক্রমে বাড়ছে অতিভারী বৃষ্টি

গত ৯ বছর ধরে ক্রমেই বাড়ছে ভারী (heavy rainfall) ও অতি ভারী (extreme heavy rainfall) বৃষ্টির পরিমাণ। এমনটাই জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর। ২০১২ সাল থেকে এই বৃষ্টির পরিমাণ দেশে বেড়েছে বলেই মিলছে তথ্য।

দেশের ১৮৫ টি আবহাওয়া সাব স্টেশনের (sub station) তথ্য অনুযায়ী গত বর্ষার মরসুমেই ৮৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টি বেড়েছে মরসুমের নিরিখে। একে অতিভারি বৃষ্টি (monsoon) বলছে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর। ২০১৯ সালেও একই হয়েছিল। দেশের ৫৫৪ স্টেশনের তথ্য বলছে সেই স্থানে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। যা ২০১২ থেকেই সবথেকে বেশি।

হাওয়া অফিসের অঙ্ক অনুযায়ী ১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিকে হালকা বৃষ্টি। ১৫ থেকে ৬৪.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিকে বলা হয় মাঝারি বৃষ্টি। ৬৪.৫ থেকে ১১৫.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে ভারী এবং ১১৫.৬ থেকে ২০৪.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে অতিভারী বৃষ্টি বলা হয়। এর উপরে বেশি বৃষ্টি হলে তাকে অতি তীব্র ভারী বৃষ্টি বলা হয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর ভারতে বর্ষার মূল সময়। বলা হচ্ছে ২০২০ এর বর্ষার মরসুমে ভারতের বেশিরভাগ স্থানেই ভারী থেকে অতি তীব্র ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এর জেরে হিমাচলপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কেরল, উত্তরপ্রদেশ, আসাম, বিহার, তেলেঙ্গানায় বিপুল বন্যা হয়ে গিয়েছে।

২০২০ সালের এই বন্যার জেরে দেশ জুড়ে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর উদ্ধার করে ১৯হাজার ২৪১ জনকে। বন্যায় আসাম ও বাংলায় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে। মারা গিয়েছেন ২৫৮ জন। এর পরেই রয়েছে মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাট। মৃতের সংখ্যা ১৯০ জন করে। কেন্দ্র বলছে জলবায়ু পরিবর্তনের জেরেই এমন ভাবে বেড়ে গিয়েছে বৃষ্টির পরিমাণ। বাড়ছে তাপমাত্রাও।

এই বছর দক্ষিণ কেরালায় বর্ষা আসে ৩ মে। দেশের মূল ভূখন্ডে শুরু হয় বর্ষার মরসুম। ঘটনা হল, ৩১ মে কেরালায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করার কথা ছিল। সে সব কিচ্ছু হয়নি। সব ঘেঁটে দিয়ে যায় ইয়াস নামক ঘূর্ণিঝড়।আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এমনটা হয়নি। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সেখানে আগেভাগেই ঢুকে পড়েছিল। ২১ মে সেখানে পা রাখে বর্ষা।

মৌসম ভবন জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম, মধ্য ভারত ও দক্ষিণ ভারতে স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি বৃষ্টিপাত হবে। পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে চলতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্বাভাবিকের থেকে কম হবে বৃষ্টি। মঙ্গলবার মৌসম ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, দীর্ঘকালীন গড় অনুযায়ী ১০১ শতাংশ বৃষ্টি হবে সারা দেশে। অর্থাৎ যা স্বাভাবিকের থেকে বেশি। ১৯৮১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘকালীন গড় ৯৬ থেকে ১০৪ শতাংশ। গড় বৃষ্টিপাত ৮৮০ মিলিমিটার। তা সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে ৪০ শতাংশ। সময় অন্তর আপডেট দেবে আবহাওয়া দফতর।

সেই অনুযায়ী উত্তর-পূর্ব ভারতে দীর্ঘকালীন গড়ের ৯৫ শতাংশ বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন। উত্তর-পশ্চিম ভারতে দীর্ঘকালীন গড়ের ৯২ থেকে ১০৮ শতাংশ বৃষ্টি হতে পারে। মধ্য ভারতে দীর্ঘকালীন গড়ের ১০৬ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ ভারতের বেশিরভাগ রাজ্যেই দীর্ঘকালীন গড়ের ৯৩ থেকে ১০৭ শতাংশ বৃষ্টি হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.