দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদের উভয় সভাতেই পাস হয়ে গেল। বিজেপি দলের নির্বাচনী ইস্তাহারেও এই বিল পাস করবার অঙ্গীকার ছিল। স্বাভাবিকভাবেই যে সমস্ত রাজনৈতিক দলের ভাগ্য অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মূলত বাঙালি মুসলমানদের ওপর নির্ভরশীল ছিল তারা কোমরে গামছা বেঁধে এর বিরোধিতা করেছে। কেননা মুসলমানদের যুক্তিযুক্তভাবেই এদেশে নাগরিকত্ব দেওয়ার কোনো শর্ত বিলে নেই কেননা তারা ইসলামিক দেশেরই নাগরিক যেখানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম।

ধর্মের ভিত্তিতে একসময় অবিভক্ত এই দেশেরই বাসিন্দারা রাজনৈতিক নেতাদের স্বার্থবুদ্ধির বলি হয়ে ইসলামধর্মাবলম্বী অন্য দেশের নাগরিক হয়ে গিয়ে সাত দশক ধরে যে নির্যাতন সহ্য করে আসছে তার বর্ণনা তাদের মুখ থেকে শুনলে বা বাংলাদেশে কয়েক রাত কাটালে সে চাপা আতঙ্ক অনুমান করা যাবে।

এদের মধ্যেই যারা প্রাণ, মান বাঁচাতে এদেশে এসেছে, তাদের মানুষ রূপে গণ্য করতেই এই বিল। কিন্তু বিরোধিতার যে ভয়ঙ্কর নিদর্শন একটি আদ্যন্ত আগ্রাসী ইসলামিক দলের অভব্য আচরণের মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার পীঠস্থানে রাখা হয়েছে তা অমার্জনীয় অপরাধ। এই মহাগুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনের সাক্ষী ছিলেন দেশ-বিদেশের কোটি কোটি মানুষ সেখানে ভারতের মতো সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটিকে মনপসন্দ না হওয়ায় টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেললেন আসাউদ্দিন ওয়াইসি নামক এক বেয়াদপ নেতা। তাঁর দলের সাংসদ সংখ্যা দুই। এত আস্পর্ধা তিনি জোটালেন কী করে?

ভাবলে গা ছমছম করে আজ বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের সংসদে যে গুটিকয় হিন্দু যদি দয়াবশতঃও থেকে থাকে আর যদি তাদের মনে হয় কোনো আইন তাদের স্বার্থ বিরোধী হচ্ছে তারা কি এমন কাজ করতে পারবে?

আর যদি করে ফেলে সেক্ষেত্রে কি জান বাঁচাতে পারবে? এই বেয়াদপ সাংসদ বলেছেন ভারতে মুসলিমরা অসুরক্ষিত, অসহায়। এই কি তার নমুনা? ৫৪৩ আসনের লোকসভায় যেখানে বহু সাংসদ বিরোধী হিসাবে বক্তব্য রাখলেন কিন্তু এই একজন অসহায় মুসলমান সাংসদ যে কাজ করলেন কেউ সেই নোংরা পথে যাননি। সংসদের গরিমা ক্ষুণ্ণকারী এমন কাজের প্রতি নাগরিক রূপে তীব্র ধিক্কার জানাই। কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয়। অতীতে বর্তমান এক মহিলা মুখ্যমন্ত্রী অধ্যক্ষকের উদ্দেশে কাগজের বান্ডিল ছুঁড়েছিলেন।

কংগ্রেসের অপরিণত মস্তিষ্কের এক নেতাও রাফাল চুক্তিকে বিদ্রূপ করে কাগজের বিমান উড়িয়েছিলেন। কিন্তু সমগ্র মুসলমানদের সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দিয়ে তাদের প্রতিনিধি হয়ে দেশের সংসদের গরিমাকে বিশ্বের চোখে ধ্বস্ত করার কোনো অধিকার কোনো সাংসদের নেই। এই ধরণের সংসদ অবমাননার তাৎক্ষণিক প্রতিকার না হলে এই আগ্রাসী মুসলমানের দাপটে সাধারণ সাংসদও সংক্রামিত হয়ে পড়বেন। সরকারের তরফে সংসদের আচরণ সংহিতার দিকে নতুন করে নজর দিয়ে প্রয়োজনীয় বিল আনতে হবে।

সে দিনের সেই কালিমাময় ঘটনার কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে জানা নেই। তবে এটিকে বা ভবিষ্যতে এমন কুকর্মের শাস্তিবিধানের আর্জি জানাই। এই ধরণের আচরণের নির্দ্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করে অপরাধী সাংসদকে কয়েকটি অধিবেশনের জন্য বহিষ্কার করতে হবে একই সঙ্গে তাঁর বেতন কেটে নেওয়ারও বিল দরকার। একটি উদাহরণ দিচ্ছি, বেসরকারি তো ছেড়ে দিন, কোনো সরকারি কার্য্যালয়ে কোনো কর্মী কাগজপত্র, দলিল দস্তাবেজ কি দপ্তর চলাকালীন ছিঁড়ে ফেলতে পারেন? যদি ফেলেন তিনি তো সাময়িক বরখাস্ত হন। তদন্তপ্রক্রিয়া চালু হয়ে যায়। শাস্তিবিধান হয়। একটি সাধারণ দপ্তরের পরিচালনার যদি আচার সংহিতা থাকে দেশের শ্রদ্ধেয় গণতন্ত্রের মন্দিরের ওপর নির্দিষ্ট কিছু লোকের অশালীন আক্রমণ প্রতিহত করতে সব সাংসদের উপর প্রযোজ্য বিলের প্রণয়ন একান্ত প্রয়োজন। এই লেখার মাধ্যমে সরকারের কাছে এই বিনীত আবেদন রাখছি। সংসদে বেয়াদপি বন্ধে কড়া আইন প্রয়োজন।

সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.