পর্ব ২
সেই যে আগের পর্বে বলেছিলাম -শ্বেতরাজার মুলুকে , তাঁর রাজঅবরোধে ষড়যন্ত্র করে দুষ্ট ম্লেচ্ছ আত্মাদের আক্রমণ ঘটল, সেই ভীষণ যুদ্ধে শ্বেতরাজা , তাঁর দারুন সৈন্যদল বীরগতি প্রাপ্ত হলেন। তারপর , দুশো বৎসর অতিক্রম করল। এই দুশো বৎসরের মধ্যে শ্বেতরাজার গড়ে মারী মহামারী হয়ে অতিমারীর রূপ নিল। মার মহামার হয়ে অতিমারের আকারে গ্রামকে গ্রাম উজাড় করল। কিন্তু যখন ঝড় আসে তখন বড় বড় তাল, তমাল, হিজল, আম , কাঁঠাল গাছ শিকড় থেকে উপরে পড়ে মরলেও নুইয়ে যাওয়া বেতসলতারা বেঁচে যায়। সেই অতিমারের দুর্দিনেও তাই কতকগুলি গোয়ালা রক্ষা পেয়েছিল।
শ্বেতরাজার সৈন্যদলটি বাগদি, ডোম, ভল্ল, লোয়ার, খয়রা প্রমুখ প্রাচীন ও শক্তিশালী সম্প্রদায় দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। মুলুকখানের সঙ্গে যুদ্ধে এনারা অকুতোভয়ে শ্বেতরাজার সঙ্গ অনুসরণ করেছিলেন। কিন্তু প্রচন্ড বিশ্বাসঘাতকতায় , ষড়যন্ত্রের ফলে বিধি বাম হলেন। রাজা গেলেন , রাণী আগেই সম্মান রক্ষার্থে সতী হয়েছিলেন। এখন সৈন্য থাকবে কোথায় ? রাজা নেই, সৈন্যের ভরনপোষণ করেন কে ? তবে ওই কথায় আছে না যে খায় চিনি তাঁর কথা ভাবেন চিন্তামণি। সেই চিন্তামণিই পথ দেখান। তাই, এককালের যোদ্ধা বোরের জাতি , কৃষি ও পশুপালন জীবিকা অবলম্বন রূপে গ্রহণ করলেন। কিন্তু বৈদেশিক শাসক ও অতিমারী ম্যালেরিয়ার তাও সহ্য হল না। দুই মিলে এঁদের নির্বংশের পথে পাঠিয়ে দিল। মুলুকের ম্লেচ্ছ সৈন্যরা প্রথম দিকে যা করতে পারে নি তা পরের দিক তা অতি সহজেই হয়ে গেল।
তো যাক সে সব ….কতই বা বলব সেসব কথা ! সেসব গোয়ালারা গরু মহিষের পাল নিয়ে মাঝে মাঝে দুই দশ দিনের মত গ্রাম ছেড়ে গ্রামান্তরে চলে যেতেন। একদিন বিকালে, গোধূলি আলোয়, রাঙমাটির ধূলায় মাখামাখি হয়ে তাঁরা ঘরে ফিরছিলেন , এমন সময় বনান্তরাল হতে কর্ণকুহরে বড় মধুর কীর্তনের সুর গোচর হল। নিকটে গিয়ে দেখলেন গোধূলি – ধূসর বনচ্ছায়াতলে বসে আছেন এক ব্রাহ্মণ যুবক। তাঁর দুই চক্ষুর অশ্রুবারি তাঁর সুন্দর কপোলগুলি ধুয়ে দিচ্ছে, তাঁর কন্ঠে গান। মুখমন্ডলের দিব্যকান্তি সন্ধ্যার অন্ধকারেও অনুভূত হচ্ছে। সেই গোয়ালার দল বড় আদর করে সেই যুবককে গৃহে নিয়ে গেলেন। মুলুকে বাসের ব্যবস্থা করে দিলেন।
এই সুন্দরকান্তি যুবকই যদুচৈতন্য ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র রামকানাই ঠাকুর। রামকানাই পিতার নিকট সংস্কৃত কাব্য – ব্যাকরণাদি এবং সংগীত শিক্ষা করতেন। কিন্তু তাঁর মন কেবল দূর দিগন্তরেখায় যেখানে চিল, পাখি উড়ে মিলিয়ে যায় সেখানে পড়ে থাকত। শিক্ষায় অবহেলার জন্য পিতার নিকট অহরহ তিরস্কৃত হয়ে একদিন তিনি গৃহত্যাগ করলেন। গৃহত্যাগ করে পথ চলতে চলতে তিনি সায়নকাল আসছে দেখে মুলুকের নিকটবর্তী জঙ্গলের এক বৃক্ষতলে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
তাঁর হৃদয় ভাবের ভাবপ্রবণ , কণ্ঠটিও ছিল ভীষণ মধুর। আসন্ন সায়াহ্নে বনপথে গরুর পাল খুরের ধূলা উড়িয়ে গৃহে ফিরছে দেখে তাঁর কেমন গোপাল ঠাকুরের বৃন্দাবনের স্মৃতি হৃদয়ে জাগ্রত হয়ে উঠল, তাই তিনি একা বসে উত্তরগোষ্ঠের পদ গাইছিলেন। সেই অবস্থায় গোয়ালাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। এ প্রায় আড়াই শত বৎসরের কথা…..
মুলুকে গৃহনির্মাণের জন্য গোয়ালারা বন্দোবস্ত করে দিলেন। অরণ্যের মাঝে কতকটা স্থান মনোনীত করে রামকানাই গৃহ নির্মাণের নিমিত্ত মাটি খুঁড়তে লাগলেন। খুঁড়তে খুঁড়তে তিনি এক অপরূপা দেবী মূর্তি প্রাপ্ত হলেন। দেবী দ্বিভুজা , উৎকুটুকাসনে উপবিষ্টা , হস্তদ্বয়ে অভয় ও বর মুদ্রা। একটি অতি ছোট পাথরে সেই মূর্তি খোদিত।
রামকানাই অপরাজিতা নামকরণপূর্বক সেই দেবীকে স্বগৃহে স্থাপনা করেন। শরতের নবম্যাদি কল্পারম্ভের দিন হতে দেবীর নিকট চন্ডীপাঠের এবং দুর্গাপূজার বিধিমত সপ্তমী , অষ্টমী, নবমী, দশমী এই চারদিন দেবীর বিশেষ পূজার ব্যবস্থা আছে।
কে এই দেবী অপরাজিতা ? একটু বলব নাকি? একটু বলেই দি ….না হলে পাঠক মনে হাজারো প্রশ্ন থেকে যায়।
দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিতঃ।
উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।।
রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ।
ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।।[
তিনিই দুর্গা। তিনিই অপরাজিতা। তবে, তিনি চতুর্ভুজা। হাতে হাতে শঙ্খ, চক্র, বর ও অভয়মুদ্রা। গায়ের রং নীল। ত্রি নয়না ও মাথায় চন্দ্রকলা। বিজয়া দশমী মানেই দুগ্গা পুজো শেষ নয় গো…..
বিসর্জনের পরে বিজয়লাভের সঙ্কল্প নিয়ে হয় অপরাজিতা পুজো। দুর্গার আর এক রূপ ‘অপরাজিতা’। প্রাচীন কালে রাজারা শরৎকালে নবরাত্র ব্রতের পরে বিজয়া দশমীতে যুদ্ধযাত্রা করতেন। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র-এ এই সময়কেই যুদ্ধযাত্রার শ্রেষ্ঠ সময় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নানা শাস্ত্রেই এই সম্পর্কে বলা হয়েছে। স্মার্ত পণ্ডিত রঘুনন্দন তাঁর ‘তিথিতত্ত্ব’ গ্রন্থে বলেছেন, যে রাজা দশমী ত্যাগ করে যাত্রা করেন, সারা বছর তাঁর কোথাও জয় হয় না। তাই সারাবছর জীবনযুদ্ধে আমরা যেন অপরাজেয় থাকতে পারি— এই সঙ্কল্প নিয়ে বিজয়া দশমীর দিন দেবী বিসর্জনের পরে আজও অনেক জায়গায় হয় অপরাজিতা পুজো।
মা দুর্গা , তিনিই সমগ্র সৃষ্টিতে নানা রূপে বিরাজিতা। কখনো তিনি অন্নদাত্রী প্রকৃতি মাতা, কখনো তিনি ধারণকারী ভূমিমাতা , কখনো তিনি ধনসম্পদার দেবী মহা লক্ষ্মী, কখনো তিনি বিদ্যা রূপে মহাবিদ্যা, মহামেধা, কখনো তিনি জননী রূপে মহাগৌরী, তিনি মহাকালের সৃষ্টি, স্থিতি , প্রলয়ের সঙ্গী মা ব্রহ্মময়ী মহাকালী। তিনিই স্বয়ং বিজয়ীনি রূপে দেবী অপরাজিতা।
বিজয়া দশমীর দিন দুর্গা মন্ত্র বিসর্জনের পরে মণ্ডপের ঈশাণ কোণে অষ্টদল পদ্ম এঁকে অপরাজিতা লতা রেখে এই দেবীর পুজো হয় বহু বনেদি পূজায়। শাস্ত্রবচন মতো একটি সাদা অপরাজিতা গাছকে দেবীরূপে কল্পনা করে পুজো করা হয়। কেউ কেউ আবার ঘটস্থাপন করেও দেবী অপরাজিতার পুজো করেন। অনেক জায়গায় পুজোর ফল লাভের জন্য হাতে অপরাজিতা লতা বাঁধার রীতিও রয়েছে। সেই সময়ে প্রার্থনা জানিয়ে বলা হয়,
‘‘বিচিত্র হার শোভিতা উজ্জ্বল স্বর্ণমেখলাধারিনী মঙ্গলনিরতা অপরাজিতা দেবী করোতু বিজয়ং মম।’’
অর্থাৎ, দেবীর কাছে বলা হয়, ‘‘হে অপরাজিতা দেবী, তুমি সর্বদা আমার বিজয় বর্ধন কর। আমার মঙ্গল ও বিজয় লাভের জন্য আমি দক্ষিণ হাতে তোমাকে ধারণ করছি। তুমি শত্রু নাশ করে নানা সমৃদ্ধির সহিত আমাকে বিজয় দান কর। রামচন্দ্র যেমন রাবণের উপর বিজয় লাভ করেছিলেন, আমারও যেন সেইরূপ জয় লাভ হয়।’’
অপরাজিতা ফুলের রঙ সাধারণত গাঢ় নীল, এছাড়াও সাদা, বেগুনি রঙেও দেখা যায়। ভক্তের আকুল আহ্বানের ফলস্বরুপ পৃথিবীর গর্ভ থেকে ঊদ্ভুত হয়েছিল দেবী অপরাজিতা। আট দিকের অধিকর্তা দেবতারা সকলে স্বাগতম জানায় অপরাজেয় এই শক্তিময়ীকে। সামী শক্তি সংরক্ষণের সহায়ক।
এই কারণে অপরাজিতাকে দেবী দুর্গা রূপে এই গাছের পাশে পূজো করা হয়ে থাকে। যাতে দেবী দুর্গার শক্তি এই ভাবে সংরক্ষিত হয়। দেবী অপরাজিতার মধ্যে যুগ যুগ ধরে যে শক্তি সঙ্খরক্ষিত হয়ে আছে তাকে ধারণকারী হিসেবে সামী গাছকে যথাযথ সম্মান দিয়ে গৃহে স্থাপন করা হয়।
জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী দ্বিপ্রহরের পর অপরাজিতা পুজো করা বিধেয়।দ্বিপ্রহর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়েই অপরাজিতা পুজো করে যে কোন স্থানে যাত্রা করা শ্রেয়।
তো সেই রামকানাই, দেবী অপরাজিতার প্রতিষ্ঠা করার পরে তাঁর ভৈরব রূপে নিজ নামে একটি শিব প্রতিষ্ঠা করলেন। শ্ৰীমন্মহাপ্রভুর অনুবর্তীগণ পরবর্তী সময়ে সনাতন ধর্মের নবজাগরণের প্রতি যখন অগ্রবর্তী হন , তাঁদের মধ্যে বীরভূমের পর্ণগোপাল ঠাকুর প্রধান ছিলেন। এছাড়াও শাক্ত , শৈব এবং বৈষ্ণব মতের দ্বন্দ্ব নিরসনে যাঁরা মনোনিবেশ করেন তাঁদের মধ্যে মুলুকের রামকানাই ঠাকুর এবং বর্ধমানের অজয়তীরস্থ কোন্দা গাঁয়ের ঘনশ্যাম গোস্বামীর নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য।
মানুষজন সেসময় রামকানাইয়ের অপরাজিতা পূজা দেখে ছড়া কাটতেন-
মুলুকে অপরাজিতা মঙ্গলডিহে রাস।
ভূরকুন্ডায় ডেঙ্গো ঠাকুর শুনতে উপহাস।।
বৈষ্ণবের গৃহে অপরাজিতা দুর্গা পূজা। মঙ্গলডিহির পানুয়া ঠাকুরের বংশধরগণ সখ্যভাবের উপাসক। কিন্তু শ্রীশ্রী শ্যামচাঁদ , মদনগোপাল ঠাকুরের রাসযাত্রা সেখানে প্রধান উৎসব । ভূরকুন্ডায় ঠাকুরের বামে শ্রীমতি নেই। কোন্দার সম্পর্কেও তেমনই ছড়া প্রচলিত আছে –
ন্যাড়া নাচে পাঁঠা কাটে।
দেখে এলাম কোন্দার পাটে।।
অপরাজিতা প্রতিষ্ঠার পর রামকানাই শ্রীগৌরাঙ্গ বিগ্রহ, শ্রীরাধাবল্লভ যুগল বিগ্রহ , শ্রীগোপাল বিগ্রহ এবং কতগুলি শালগ্রাম শিলা প্রতিষ্ঠা করে নিত্য পূজা এবং ভোগাদির ব্যবস্থা করেছিলেন । দেববিগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি ষোলো সের চালের অন্নভোগের ব্যবস্থা করেন।
মুলুকে প্রথম প্রবেশের দিন সেই গোষ্ঠের স্মৃতি তিনি ভুলতে পারেননি। তাই গোষ্ঠ যাত্রাই মুলুকে প্রধান উৎসব। রামকানাই মন্দিরটি দালান রীতিতে নির্মিত।
মুলুকের উক্ত গোষ্ঠ উৎসবে নাম সংকীর্তন ও লীলা কীর্তন এর বিশেষ ব্যবস্থা আছে । এখানে ভাতৃদ্বিতীয়া দিন গন্ধাধিবাস হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় ঘট স্থাপন ও পূজাদির পর প্রতি প্রভাতে প্রভাতী গান ও সন্ধ্যায় আরত্রিক গান হয়। গোষ্ঠাষ্টমী হতে দ্বাদশী পর্যন্ত এখানে মেলা বসে। তবে উত্থান একাদশীর দিন মেলা জমে ভালো । দশমীর দিন প্রভাতকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত নাম সংকীর্তন চলে। একাদশীর দিন পুর্বাহ্ন থেকে লীলা কীর্তন আরম্ভ হয়। গোষ্ঠ, বনপর্যটন, বনভোজন, উত্তর গোষ্ঠ, বাসকসজ্জা, বিপ্রলব্ধা, খণ্ডিতা প্রভৃতি বিবিধ রস গানের পর দ্বিপ্রহরে কলহান্তরিতায় মিলনগানে রসকীর্তনের পরিসমাপ্তি ঘটে। মেলায় নানা স্থান থেকে বহু যাত্রী , বহু কীর্তন গায়ক , ন্যাড়া নেড়ী , আউল বাউল প্রভৃতির সমাগম ঘটে। ভাতৃদ্বিতীয়া দিন হতে ঠাকুরবাড়ির সকলকেও বিশেষ সংযমে থাকতে হয়। দ্বাদশীর দিন পর্যন্ত তাঁদের ক্ষৌরকর্ম ইত্যাদি নিষিদ্ধ।
মুলুকের গাঁ ঘরে এখনো রামকানাই ঠাকুরের কত কথা হওয়ায় ভেসে বেড়ায়। গাছ বুড়োরা বলেন, রামকানাই প্রত্যহ কৃষাণদের জন্য মাঠে ভাত নিয়ে যেতেন । কোনো এক বিজাতীয় জমিদার একদা ভীষণ গ্রীষ্মের খরতাপে সেই শ্ৰীকান্তময় গৌরবর্ণ ব্রাহ্মনকে দেখেন। অকস্মাৎ তাঁর বিবেকে দংশনের উদ্রেক হয়, পূর্বপুরুষ কৃত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য ব্রাহ্মণকে ব্রহ্মত্র দান করে নতুন করে জীবনের সূচনা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন । রামকানাই ঠাকুর তখন এক স্থানে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দিলেন ছড়িয়ে কতক গুলি ভাত। ভাত দিয়ে তিনি স্থান চিহ্নিত করলেন। সেই জমি ঠাকুরকে দান করলেন জমিদার, নাম হল #ভাতুরিয়ার_মাঠ। আজও ঠাকুর বংশ সেই ব্রহ্মত্র ভোগ করছেন।
রামকানাইয়ের পৌত্র অর্থাৎ গৌরচরণের পুত্র বিশ্বম্ভর ঠাকুর যশস্বী কীর্তন গায়ক ও দেশ প্রসিদ্ধ পদকর্তা ছিলেন । এনার কোনো পদ পদকল্পতরু তে সংগৃহীত হয়েছিল কিনা বলা যায় না । তবে পদকল্পতরু তে বিশ্বম্ভর ভনিতার দুইটি পদ আছে । বিশ্বম্ভর ঠাকুরের নিজের লেখা কয়েকটি গান ও পাওয়া গিয়েছিল । তার মধ্যে একটি হল –
জাগিহো কিশোরী গোরি রজনী ভৈ ভোরে।
রতি অলসমে নিন্দ যাওত রসরাজহি কোরে।।
নীলবসন মণি অভরণ ভৈ গেয়ো বিথারে।
শাসু ননদী এয়সে বিবাদি মনমে নাহি তেরে।।
মুলুকে আর একজন কীর্তনীয়া ছিলেন তার নাম ছিল মহানন্দ দাস জাতিতে তিনি বৈরাগী । তার পিতার নাম দিগম্বর দাস। ঠাকুর বংশের মহানন্দ ঠাকুর খুব অল্প বয়সে কীর্তন গান অভিজ্ঞতা লাভ করেন। দাস মহাশয় তার নিকট প্রথম শিক্ষা প্রাপ্ত হয়েছিলেন। প্রায় ৩২ বছর বয়সে সর্পাঘাতে মহানন্দ ঠাকুর লোকান্তরিত হলে মহানন্দ দাস বেড়গ্রামের দ্বারিক দাসের নিকট শিক্ষা শেষ করে নিজের কীর্তনের দল কীর্তন খোলেন। মহানন্দ দাসের দলে খোল বাজাতেন সেকালের দেশবিখ্যাত মৃদঙ্গ বাদক বীরভূমের পায়র গাঁয়ের স্বনামধন্য জটে কুঞ্জ দাস। মুলুকে সূর্যপাতর গোয়ালা কুঞ্জদাসের নিকট বাজনা শিখে পরে মহানন্দ দাসে র দলে খোল বাজাতেন।
শ্বেতরাজার সোনার রাজত্বের ম্লেচ্ছ , মারীর হাতে পড়ে একদিন যেমন উজাড় হয়েছিল , আবার তেমন মহাকালের মহিমায় সেই মুলুকের রামকানাই আচন্ডালের মাঝেসনাতনের সার মর্মকে কোমল অথচ বজ্রনির্ঘোষে জানান দিয়েছিলেন। সেই মুলুক গাঁয়ের গোয়ালারা রামকানাইয়ের সঙ্গে মারে সাগর পাড়ি দিয়েছিল ভীষণ ঝড়ের বায়ে। এক সময়ের পরে দেবী অপরাজিতার দয়ায় মুলুক অপরাজেয় হয়েছিল, আর কৃষ্ণের ইচ্ছায় ব্রজের গোষ্ঠে পরিণত হয়েছিল। তাই আজও প্রভাত কালে বা গোধূলি বেলায় মুলুকের ধূলায় ধূলায় ঘাসে ঘাসে পাতায় পাতায় বাতাস গান গেয়ে যায় –
নগরক লোক জাগি বৈঠল ক্যায়সে যাওব পুরে।
অরুণ উদয় হোই আওত শারী শুক ফুকারে।।
শুনি নাগর উঠি বৈঠল নাগরি করি কোরে।
বিশ্বম্ভর দাস ঝারি পূরি লেই ঠারি রহত দ্বারে।।
সমাপ্ত
©দুর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ ১ . মঙ্গলকোট উৎখনন : একটি প্রতিবেদন
২. গৌড়বঙ্গ : সংস্কৃতি
৩. বাংলার মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস
৪. মঙ্গলকোট – উজানির সঙ্গে