একমাত্র নরেন্দ্র মোদীই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে বাংলার জনতাকে বাঁচাতে পারে৷ বাংলার নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে কৌশলগতভাবেই ‘এনআরসি’-ইস্যুটি প্রবলভাবে প্রকাশ্যে এনেছে বিজেপি৷ নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ, বিজেপির প্রথমসারির নেতারা সরাসরি বলেছেন, এনডিএ সরকারের পরবর্তীলক্ষ পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি বা জাতীয় পঞ্জীকরণ চালু করবে৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আইনে পরিণত হলে বাংলাদেশ এবং নেপাল থেকে আগত হিন্দু শরণার্থীরা ভারতীয় হবেন৷
বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গে দার্জিলিং এবং উত্তর দিনাজপুরে সভা করতে এসে অমিত শাহ স্বভাবসিদ্ধভঙ্গিতেই মমতাকে আক্রমণ করে বলেছেন, ‘‘আপনারাই বলুন সাত বছরে মমতা দিদি ‘বাঙ্গাল’কে ‘কাঙ্গাল’ বানিয়েছেন কি না? মা মাটি মানুষের স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন৷ চেয়ারে বসার পর জনতা বুঝতে পেরেছে দিদির মমতা নেই৷ দিদির আমলে মাটি বাংলাদেশি অনুপ্রদেশকারীদের দখলে চলে গিয়েছে৷ মাফিয়াদের ভয়ে রয়েছে মানুষ৷’’
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের কথা উল্লেখ করে অমিত শাহ নির্বাচনের মুখে পশ্চিমবঙ্গের ভোটকে ধর্মীয় মেরুকরণের দিকে টেনে গিয়েছেন – যা প্রত্যাশিতই ছিল৷ কলকাতার মেয়ো রোডের মঞ্চে জনসভা করতে এসে অমিত সেই বিকেলেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বাংলায় বিজেপির নির্বাচনের সব থেকে বড় অ্যাজেন্ডা এনআরসি বা জাতীয় পঞ্জীকরণ এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল যা সংসদে আইন হিসেবে এখনও পাশ হয়নি৷
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিকে বাড়ি বাড়ি চটি বই বিলি করে বিজেপি বোঝাতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্থান থেকে আসা মুসলমানরা যেমন বেআইনি অনুপ্রবেশকারী, অন্যদিকে ওই দুই দেশ থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পার্শি, শিখ বা খ্রীস্টানদের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা হলেন স্মরণার্থী৷ ভারতের বিজেপি সরকার, প্রতিবেশি দেশ থেকে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আশ্রয় দেবে৷ কারণ, তাঁরা বিপদের মুখে নিজের দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন৷ অন্যদিকে মুসলমান অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানো হবে, কারণ সীমান্তের ওপার থেকে রোজগার বা বাসস্থান খুঁজে পেতে, কিংবা কোনও অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই তারা এদেশে এসেছে৷
পোড়খাওয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বিজেপির রণনীতি বুধতে পরেছেন৷ অসমে এনআরসি চালু করার পর যে অগ্নীগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা জনতাকে বোঝাতে চেয়েছেন মমতা৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কেন সমর্থন করা উচিত নয় জনতাকে নিজস্ব স্টাইলে বলার চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কিন্তু তৃণমূলে তিনিই একমাত্র ‘ব্র্যান্ডনেম৷’ বিজেপির বিভিন্নদিকের আক্রমণে তৃণমূলের এনআরসি বিরোধী আক্রমণ রাজ্যে দানা বাঁধেনি বলেই মনে করেছে বিজেপি৷ বরং বিজেপি বেশি চিন্তিত মমতার অসমে জনসভাকে কেন্দ্র করে৷ নেত্রীর এনআরসি বিরোধী কথাবার্তা অসমবাসীকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে তা চিন্তায় রাখছে গেরুয়া শিবিরকে৷
নাগরিকত্ব বিল নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী চায়, তা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জানতে চায় – এদিন জানিয়েছেন অমিত শাহ৷ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে বাংলার সব থেকে বড় অ্যাজেন্ডা নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল৷ মমতা দিদিকে এই বিষয়ে কথা বলতেই হবে৷ রাজ্যসভায় ওই বিল আটকেছিল তৃণমূল৷ এবারে রাজ্যসভায় অনেক বেশী সংখ্যা নিয়ে বিজেপি আসবে৷ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আইন হবেই৷’’ রাজনৈতিক বিশ্লষকরা বারবার বলছেন, মোদী হোন বা শাহ, বাংলায় বারবার এনআরসি ও নাগরিকত্ব বিল অস্ত্র করেছেন৷ কারণ, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যার দিকে তাকিয়ে এটিই সব থেকে পোক্ত নির্বাচনী ইস্যু হতে পারে৷
অসম কিংবা পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতিকে আলাদা চোখে দেখতে চায়নি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ এবং বিজেপির নীতি নির্ধারণকারীরা৷ স্বাভাবিকভাবেই রাফাল বা নোটবন্দী নয় – এনআরসি ও নাগরিকত্ব বিল, বালাকোট বা সার্জিকাল স্ট্রাইক, দূর্গাপুজা, সরস্বতী পূজা, পাকিস্তান – এই ইস্যুগুলিই বাংলার নির্বাচনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে বিজেপি৷
প্রসঙ্গত, লোকসভায় সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল বা নাগরিকত্ব বিলকে ধ্বনি ভোটে পাশ করতে পেরেছে বিজেপি৷ কিন্তু অসম এবং ত্রিপুরায় এই নিয়ে অশান্তি অব্যহত৷ আর্টিকেল ১৪ -এর উল্লেখ করে কংগ্রেস দাবি করেছে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিত্ব প্রদান করা যেতে পারে না৷ সাংসদ উত্তাল হয়েছে৷