পুজোর আনন্দ ক্রমশ ফিকে হচ্ছে, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি মালদহে

পুজোর মুখে নতুন করে আবার বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে মালদহ জেলা জুড়ে। ফের লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত গঙ্গানদীর তীরবর্তী জেলা গুলি। প্রবল বর্ষণে ফুঁসছে গঙ্গা, ফুলহার এবং মহানন্দা নদী। এদিকে জল বাড়ছে কালিন্দী নদীতেও। যার জেরে ফের জলমগ্ন হয়ে পড়েছে মালদহ শহর। শরতের আকাশে শ্রাবন নামায় দুর্গা পুজোর আনন্দ ফিকে হয়ে গিয়েছে এই জেলার মানুষদের।

সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের পর থেকে বিরামহীন বর্ষণে বিপর্যস্ত অবস্থা মালদহ, মুর্শিদাবাদ জেলার। এদিকে ফের আবার মালদহে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি দেখা দিয়েছে। জানা গিয়েছে, গঙ্গা,ফুলহার, মহানন্দা ছাড়াও নতুন করে জল বাড়ছে মালদহ জেলার কালিন্দী নদীতে। যারফলে টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে মালদহ শহর। এরই মধ্যে বাঁধ ভাঙল গঙ্গাঁর।

সূত্রের খবর, মালদহ জেলার মানিকচক থানার গোপালপুর কামালতিপুরের বাঁধ ভাঙার ফলে জল ঢুকছে এলাকায়। এছাড়াও নতুন করে আবার মানিকচক থানার শঙ্করটোলা এলাকার বাঁধে ফাটল দেখা গিয়েছে যারফলে ফের নতুন করে বন্যর আতঙ্ক দেখা দিয়েছে এই সব এলাকার মানুষদের মধ্যে। এদিকে মালদহ জেলার বন্যা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা।

জানা গিয়েছে, এরই মধ্যে সোমবার মালদহের এই পরিস্থিতিকে বন্যা বলে ঘোষণার দাবি জানায় জেলা বিজেপির নেতৃত্ববৃন্দ। অন্যদিকে রাজ্য নেতৃত্বের মতামতকে উপেক্ষা করে এই ইস্যুতে বিজেপির দাবিকে সমর্থন জানিয়ে বিজেপির পাশে দাঁড়িয়েছে মালদহ জেলা তৃণমূল পরিষদ। সব মিলিয়ে পুজোর মুখে বন্যা নিয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে মালদা জেলা।

এদিকে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে মালদহ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল। জানা গিয়েছে, টানা বৃষ্টিতে হাসপাতালের বেশ কিছু ওয়ার্ডের জল ঢুকেছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে মালদহ মেডিকেলের বেশ কিছু ওয়ার্ড।

চিকিৎসা পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জানা গিয়েছে, বন্যার আতঙ্কে চিকিৎসা না করিয়েই হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে অনেক রোগীরায়। চলছে টানা বৃষ্টি। গঙ্গা,ফুলহর,মহানন্দার পর মালদহ জেলার মানিকচক ব্লকের কালিন্দী নদীর জল গত সাত দিন ধরে অনেক বেড়ে গিয়েছে বলে খবর জানা গিয়েছে। নদীর জল বৃদ্ধির ফলে ভাঙন শুরু হয়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার বাড়িগুলিতে। ইতিমধ্যে অনেক বাড়ি ভাঙনের ফলে নদী গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

এছাড়াও কালিন্দী গ্রামের রাস্তায় বড় বড় ফাটল দেখে দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যে কোনও সময় রাস্তা নদী গর্ভে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে জেলা প্রশাসন। যারফলে পুজোর আগে আতঙ্কের প্রহর গুনছেন এইসব এলাকার গ্রামবাসীরা। অন্য দিকে কালিয়াচক দুই নম্বর ব্লকের সাকুল্লাপুর বাঁধের অবস্থাও খারাপ বলে জানা গিয়েছে। যে কোনও সময় ঘটতে পারে বড়সড় কোনও অঘটন। এদিকে শহরের জল জমা নিয়ে পুরসভার বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছে জেলা বিজেপি।

বিজেপির মালদহ জেলার সহ-সভাপতি অজয় গাঙ্গুলি জানিয়েছেন, যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে যেভাবে মহানন্দা নদীতে জল বেড়েছে তাতে আতঙ্কে রয়েছে শহরবাসী। এরপর শহরের নিকাশি ব্যবস্থার হাল বেহাল। কোনরকমে যদি মহানন্দা নদীর জল শহরে ঢুকে পড়ে তাহলে পুজোর মুখে কার্যত বানভাসি হয়ে থাকতে হবে শহরের মানুষকে। এর জন্য দায়ী পুরসভা। নর্দমা গুলি সঠিকভাবে পরিষ্কার হয় না। যার ফলে টানা বৃষ্টি হলেই শহরের বেশিরভাগ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে।

অন্যদিকে উত্তর মালদার রতুয়া ,মানিকচক ও দক্ষিণ মালদা কালিয়াচক ৩ নাম্বার ব্লক কালিয়াচক ২নম্বর ব্লকের আরও বেশকিছু গ্রাম নতুন করে জলমগ্ন হয়েছে। পাল্লা দিয়ে মালদার বৈষ্ণবনগর এলাকায় চলছে গঙ্গা নদীতে ভাঙ্গন। টানা বৃষ্টির ফলে ভাঙ্গন রোধের কাজ কার্যত শিকেয় উঠেছে বলে জানা গিয়েছে। এদিকে রতুয়া পরানপুর মাদিয়া সহ একাধীক এলাকায় জলমগ্ন এলাকা ঘুরে দেখেন জেলা তৃণমূলের সভাপতি মৌসম নুর। বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান নীহার রঞ্জন ঘোষ বলেন,পুরসভা বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সবসময় সজাগ রয়েছে।

তিনি আরও জানিয়েছেন, সেচ দপ্তরের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুত। মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌর চন্দ্র মন্ডল জানিয়েছেন, বন্যা দুর্গতদের সাহায্যের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন তাঁরা। তিনি আরও বলেন, ক্যাম্প খোলা হয়েছে সেখানে বানভাসীদের ত্রাণ এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.