‘বিষ’ময় বিশের বিদায়বেলায় মোটেই কারও মনখারাপ নয়। বরং করোনামুক্ত নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বাড়তি উৎসাহ সকলের। বছরের শেষদিন তাই আনন্দ, উদযাপন হল। তবে মেপে। হ্যাঁ,করোনা কালে (Coronavirus)আনন্দকেও বাঁধতে হয়েছে সীমায়। তাই ৩১ডিসেম্বরের পার্ক স্ট্রিটের জমকালো পরিবেশ ঠিক যেন চেনা ছন্দে ধরা দিল না। মাস্কের আড়ালে ঢাকা পড়ল শিশু থেকে তরুণ, তরুণীর মুখময় উচ্ছ্বলতা। তবু ধরা রইল সেলিব্রেশনের কয়েক টুকরো ছবি।
এই দিনে সন্ধের পার্ক স্ট্রিট (Park Street) মানে পা রাখার জায়গা পর্যন্ত মেলে না। নানারকম আলোকসজ্জার মাঝে লাল, নীল টুপিতে ঢাকা মাথার ভিড়ে জীবনের স্পন্দন টের পাওয়া যায় বেশ। মনে হয়, গোটা শহরটাই যেন শুধু এই পার্ক স্ট্রিট। অ্যাংলো এলাকার রকমারি কেক, কুকিজের গন্ধে ম ম, দোকানে দোকানে নতুন জিনিস কেনার লাইন – ছবির অ্যালবাম যেন।
এ বছর সেই অ্যালবামে খানিক ধুলো পড়েছে। এতটা মুখর হতে দেখা গেল না সন্ধের পার্ক স্ট্রিটকে। অন্যদিনের তুলনায় নিশ্চয়ই পথচারীর সংখ্যা বেশি। শুধুই ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়া মানুষই প্রচুর। তবু, ছন্দে পতন।
শীতের দাপটে এমনিতেই বর্ষশেষে জবুথবু কলকাতাও। ফ্যাশন সচেতন তরুণ, তরুণীরা তাই শীতপোশাকেই নিজেদের মনের মতে করে সাজিয়ে বেরলেন বছরের শেষ দিনের বাঁধনছাড়া উচ্ছ্বাসে গা ভাসাতে। কিন্তু তা হল কই? অর্ধেক মুখ তো ঢেকেই রাখতে হল মাস্কে (Mask)। তারই মধ্যে আরও যাঁরা ফ্যাশন নিয়ে যাবতীয় চর্চায় মশগুল, তাঁরা কিন্তু মাস্ক কেমন দেখতে, তাতেই গুরুত্ব দিলেন বেশি। সঙ্গে আবার খুদে সদস্য। ফলে সেলফি তোলার সময়েও মাস্ক নামল না থুতনিতে। বছরভর করোনা ভাইরাস এটাই কিন্তু শিখিয়েছে।
সবশেষে, যাঁদের কথা না বললে সবটাই অসম্পূর্ণ থাকে, সেই পুলিশই বোধহয় এই বছরের সবচেয়ে বড় হিরো। স্রেফ উর্দিধারী থেকে সামনের সারির করোনাযোদ্ধা হিসেবে অনেকদিনই পরিচিত হয়ে গিয়েছেন তাঁরা। হয়ে উঠেছেন রোগীদের বন্ধু। লকডাউনে ঘরবন্দি মানুষের একঘেমেয়ি কাটাতে পাড়ায় পাড়ায় গানও শুনিয়েছেন তাঁরা। ২৪ ঘণ্টা সাতদিনের ছুটিহীন জীবনে বছরের শেষদিনও ছুটি নেই। থাকেও না কোনও বছর। তবে এবারের দায়িত্ব আরও বেশি।
সংক্রমণ থেকে শহরবাসীকে রক্ষা করতে ভিড় এড়ানো অতি জরুরি কাজ। সেই কাজই তাঁরা করে গেলেন বৃহস্পতিবার দিনভর। কোথাও মাইকিং, কোথাও নিজেরা পথে নেমে ভিড় নিয়ন্ত্রণ, নানা ভূমিকায় রইলেন জনতার রক্ষাকর্তা হয়ে। বছরশেষে কুর্নিশ তাঁদের।