রাজ্যপালকে নিয়ে কি আশঙ্কায় তৃণমূল? এ বার উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন ধনকড়

কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে সরিয়ে বাংলার নতুন রাজ্যপাল হিসাবে যে দিন তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল, সে দিনই তাঁর বায়োডেটা দেখে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল অনেকের কপালে। সুপ্রিম কোর্টের দুঁদে আইনজীবী। রাজস্থান বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি- জগদীপ ধনকড়।

পর্যবেক্ষকরা আন্দাজ করেছিলেন, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার তথা শাসক দলকে যথেষ্টই বেগ দিতে পারেন নতুন রাজ্যপাল। হিসাব মতো প্রায় দু’মাস হল বাংলার রাজ্যপাল পদে শপথ নিয়েছেন ধনকড়। দেখা যাচ্ছে, আন্দাজ অনেকটাই বাস্তবের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এরই মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করে দিয়েছেন রাজ্যপাল।

এর আগে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করেছিলেন। তবুও তা পরিমিতই ছিল। তাতে অতোটাও উদ্বিগ্ন হয়নি তৃণমূল। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভে আটকে পড়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধার করতে রাজ্যপাল যে ভাবে ক্যাম্পাসে চলে গিয়েছিলেন, তাতে শাসক দলের অনেকেই চিন্তায়। উদ্বেগ শুধু এখানেই থেমে নেই। শাসক দল রাজ্যপালের ভূমিকার সমালোচনা করলে, তৎক্ষণাৎ জবাব দিচ্ছে রাজভবন।

তার থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ হল, রাজভবনের বিবৃতি-তে শব্দচয়ন এমন ভাবে করা হয়েছে, যা দেখে বোঝাই যাচ্ছে কোনও দুঁদে আইনজীবী ছাড়া এই খসড়া সম্ভব নয়। অনেকের মতে, রাজ্যপালের এই মনোভাব দেখেই গতকাল যাদবপুরের ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তা দলের মহা সচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে করিয়েছেন।
সার্বিক এই পরিস্থিতির মধ্যে জানা গিয়েছে, এ বার উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন রাজ্যপাল। ২৪ সেপ্টেম্বর দার্জিলিংয়ের রাজভবনে পৌঁছবেন তিনি। তার পর সেখানকার জেলাশাসক, জেলার বিধায়ক, সাংসদ, জেলা সভাধিপতি ও শিলিগুড়ির মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।

রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসাবে রাজ্যপাল এ ধরনের বৈঠক ডাকতেই পারেন। তা ছাড়া এ ধরনের বৈঠকের কথা হয়তো মুখ্য সচিবকে তিনি আগাম জানিয়েও রাখবেন। কিন্তু শাসক দলের অনেকের আশঙ্কা, স্থানীয় সমস্যা, অনুন্নয়ন বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যপাল প্রকাশ্যে যদি কোনও মন্তব্য করেন, তাতে অস্বস্তিতে পড়তে হতে পারে সরকারকে।

বাংলায় রাজভবনের ‘অতিসক্রিয়তা’ নিয়ে গত দশ-বারো বছরে বারবার বিতর্ক হয়েছে। বাম জমানায় তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম। পরবর্তীকালে এম কে নারায়ণন, কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে তৃণমূল সরকারের বহুবার সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে তৃণমূলের অনেকের মতে, এ বার চিন্তার কারণ রয়েছে। লোকসভা ভোটে বাংলায় ১৮ টি আসন জিতে রক্তের স্বাদ পেয়েছে বিজেপি। বাংলায় সরকারও এ বার তারা দখল করতে চায়। রাজভবন সেই রাজনৈতিক লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুঘটকের ভূমিকা নিলে চিন্তা তো হবেই!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.