নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর অন্তর্ধান রহস্য জানে জাপান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ব্যক্তিগত বন্ধু। এরা দুজনে উদ্দ্যোগ নিলেই নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। নিজের মতামতে জানিয়েছেন নেতাজির প্রপৌত্র চন্দ্রকুমার বসু। ঘটনাচক্রে তিনি বিজেপির নেতা।
চন্দ্রকুমারের সাফ কথা, অখণ্ড ভারতের প্রথম প্রধান মন্ত্রী নেতাজি। এই ধরণের বিষয় নিয়ে ‘হওয়ায় খেললে’ চলবে না। নেতাজি ইস্যুতে ভগবানের সঙ্গেও সমঝোতা করতে রাজি নন তিনি।
প্রসঙ্গত নেতাজির অন্তর্ধান। ১৮ অগস্ট, ১৯৪৫ সাল। ৭৪ বছর আগে এই দিনেই নেতাজি তাইহকু বিমানবন্দর থেকে নিখোঁজ হন। কিন্তু তারপর নেতাজির কী হয়েছিল, সেই সত্য আজও জনসমক্ষে নেই। বিভিন্ন দিক থে বিভিন্ন মতামত আসে। বিভিন্ন সরকারি তদন্ত কমিশন মতামত দিয়েছে। তবুও ভারতীয় নাগরিকদের মনে প্রশ্নটা থেকেই গিয়েছে।
ইতিমধ্যেই রবিবার (১৮ অগস্ট) নেতাজির মৃত্যুদিন হিসাবে চিহ্নিত করে শ্রদ্ধা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো।
শোনা গিয়েছে যে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো পরে তাদের টুইট মুছে দিয়েছে। কিন্তু চন্দ্রকুমার বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছেন।
১. বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু , রাশিয়ায় নেতাজির মৃত্যু বা গুমনামি বাবাই নেতাজি – এই তিন মতের বাইরেও একটি চতুর্থ দিক রয়েছে। তা হলো জাপান। নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য জানে জাপান। জাপান সরকারকে কূটনৈতিক চাপ দিক ভারত।
২. চন্দ্রকুমার কেন জাপানের কথা বলছেন, তা তিনি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। ২০১৬ সালে বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জাপান, আমেরিকা, জার্মানি, ইংল্যান্ড, রাশিয়ায় চিঠি লেখেন। নেতাজি সম্পর্কে ওইসব দেশগুলি থেকে তথ্য চেয়ে পাঠান। জাপান ছাড়া বাকি সবকটি দেশ-ই জানায়, নেতাজি সম্পর্কে তাঁদের কাছে বাড়তি কোনও তথ্য নেই, যা আছে তা ‘পাবলিক ডোমেনে’ রয়েছে। কিন্তু, জাপান জানায় তাদের কাছে নেতাজির ৫ টি ফাইল রয়েছে। দুটি ফাইল ভারত সরকারকে পাঠান হয়। কিন্তু, বাকি ৩টি ফাইল সম্পর্কে গোপনীয়তা রাখে জাপান। চন্দ্রকুমারের বক্তব্য, ওই তিনটি ফাইলে কি আছে তা জানা জরুরি। সম্ভাবনা রয়েছে, নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান হয়তো ওই ফাইলেই রয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়। চন্দ্রকুমারের মতে আইবি বা গোয়েন্দা দফতরের হাতে ৭৭ টি ফাইল রয়েছে। নরেন্দ্র মোদী সরকার ওই ফাইলগুলি উন্মোচিত করুক। তা রহস্যের সমাধান করতে সাহায্য করবে।
৩. চন্দ্রকুমারের মতে, বিচারপতি মুখার্জি কমিশন ছাড়া বাকি কমিশনগুলি মনে করেছে নেতাজি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। কিন্তু মুখার্জি কমিশন মনে করেছে, বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি। কারণ বিচারপতি নিজেই তাইওয়ানের এরোড্রোমে গিয়েছিলেন। কোনও তথ্য খুঁজে পাননি। স্বাভাবিক ভাবেই তাইওয়ান সরকারের কাছে সেরকম তথ্য ছিল না। ১৯৪৫ সালে তাইওয়ান ছিল জাপানের অধীন। পরবর্তীকালে আমেরিকার অধীনে চলে যায় তাইওয়ান। সেক্ষেত্রে তথ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা হয়েছে।
৪. দাবি করা হয় জাপানের রেনকোজির মন্দিরে নেতাজির চিতাভস্ম এবং দেহাবশেষ রয়েছে। চন্দ্রকুমার দাবি করেছেন, অত্যাধুনিক ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যেতে পারে ওই দেহাবশেষ ১৯৪৫ সালের কিনা। তা চিতাভস্ম এবং দেহাবশেষ নেতাজির-ই তা ওই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমান হতে পারে। সেই পরীক্ষার জন্য অতীতে চন্দ্রকুমারের কাকা সুব্রত বসু, নেতাজির মায়ের দিকের আত্মীয় নিরুপম সোম (যিনি কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার) এবং ড. ডি এন বসুর রক্তনমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। কিন্তু, পরীক্ষাই হয়নি।
৫. নতুন করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রক্তনমুনা দান করতে প্রস্তুত আছেন চন্দ্রকুমার। তাঁর দাবি, মুখার্জি কমিশন রেনকোজির মন্দিরে নেতাজির দেহাংশ দেখে আসেনি। দীর্ঘদিন ধরে ভারতবাসীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি করুক।
৬. বসু পরিবারে চন্দ্রকুমারের অগ্রজ সুগত বসু মনে করেন, বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে। এটাই বাস্তব। ঐতিহাসিক সত্যকে সকলের স্বীকার করে নেওয়াই ভালো। চন্দ্রকুমার এই মতামতের বিরোধী। তিনি বলছেন, এক পরিবারের সকলেরই এক মত নাও থাকতে পারে। ওটা ওর মত। এটা আমার মত। তবে আমি মনে করি জাপান সত্য জানে।