একসময়ের মাওবাদীদের আঁতুরঘর। বলা হত অনুন্নয়নকে হাতিয়ার করেই সেখানে মাথা তুলেছিল মাওবাদীরা। সেই রামচন্দ্রপুর। এখনও তিমিরে। রাস্তা নেই, জল নেই, আলো নেই। ভোটের আগের দিন তাই গ্রামের বুথে তালা ঝুলিয়ে দিলেন গ্রামের মহিলারা।
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে রামচন্দ্রপুর গ্রাম। গ্রামে ঢুকতে গেলেই পায়ে পায়ে হোঁচট খেতে হয়। সেই কবে লাল মোরাম পড়েছিল রাস্তায়। এখন আর তার ছিঁটেফোটাও নেই। আছে শুধু বড়ো বড়ো গর্ত। গোটা গ্রামে পানীয় জলের জন্য ভরসা একটি মাত্র পাতকুয়ো। প্রখর দাবদাহে তার জলও তলানিতে। রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটি আছে, কিন্তু পথ বাতি জ্বলে না। গ্রামের পিছনেই জঙ্গল। প্রায় রাতেই হাতি ঢুকে পড়ে গ্রামে। ভাঙা ঘরে ঘুম ভেঙে সিঁটিয়ে থাকেন বাসিন্দারা। ভোটের আগের দিন। তাই আজ গ্রামে সাজো সাজো রব। পুলিশ, প্রশাসন, ভোটকর্মী। এমন দিনেই ভোট বয়কটের ডাক দিলেন রামচন্দ্রপুরের মানুষ। তাঁদের দাবি, আগে রাস্তার কাজ শুরু হোক, আগে জল মিলুক, আগে আলো জ্বলুক, তারপর ভোট।
রামচন্দ্রপুর গ্রামে রামচন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি মাত্র বুথ। বুথ নম্বর ২২২/১৪৫। গ্রামে মোট ভোটার ৭৪০ জন। বেশির ভাগ মানুষই কৃষিজীবী ও দিনমজুর। ভোট বয়কট করে গ্রামবাসীরা স্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। সারা গ্রামে পোস্টার ও ব্যানারও ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। যেখানে পরিষ্কার লেখা, রামচন্দ্রপুর গ্রামে কোনও উন্নয়ন না হওয়ায় ভোট বয়কট চলবে ।
আজ দুপুরে গ্রামের মানুষদের ভোট দেওয়ার জন্য ও বুথের তালা খুলে দেওয়ার জন্য আর্জি জানান ঝাড়গ্রামের বিডিও অভিগ্না চক্রবর্তী ও ঝাড়গ্রাম থানার আইসি জয়প্রকাশ পান্ডে। গ্রামবাসীদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন তাঁরা। বিডিও এলাকার উন্নয়ন করারও আশ্বাসও দেন। কিন্তু গ্রামবাসীরা তাঁদের অবস্থানে অনড়। গ্রামের বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় মাহাত, দিলীপ পাতর, সবিতা মাহাতরা বলেন, “আমাদের এলাকায় পাকা রাস্তা নেই, বর্ষাকাল তো দূরের কথা এখনও ঠিক মতো চলা যায় না। বড়ো বড়ো গর্ত। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। আলো নেই । আমরা ভোট দিয়ে কি করবো? আগে রাস্তার কাজ শুরু হোক তারপর ভোট দেবো। তার আগে না ভোট দেবো, না তালা খুলবো।”
শেষপর্যন্ত খালি হাতেই ফিরে যান বিডিও এবং আইসি।