কাটমানির অভিযোগে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে মামলা হাইকোর্টে, অডিয়ো টেপ পেশ করতে চাইলেন ব্যবসায়ী

কাটমানি ইস্যুতে এ বার নাম জড়াল রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তর চব্বিশপরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। শুধু নাম জড়ানো নয়। মামলা হল হাইকোর্টে। এবং কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক নির্দেশ দিলেন সবপক্ষকে চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিতে হবে।

স্ত্রীর সঙ্গে এক ব্যবসায়ীর বনিবনা না হওয়া থেকে ঘটনার সূত্রপাত বলে জানা গিয়েছে। সঞ্জীব অগরওয়াল নামের ওই ব্যবসায়ী এবং তাঁর বন্ধু পঙ্কজ অগরওয়াল হাইকোর্টে সিবিআই তদন্তের দাবি জানান। কেন এমন দাবি? সন্দীপের আইনজীবী উদয় ঝাঁ এ দিনের শুনানিতে বলেন, “সন্দীপ অগরওয়ালের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর বনিবনা হচ্ছিল না দীর্ঘদিন। তারই  প্রেক্ষিতে সন্দীপকে বিধাননগর মিউনিসিপ্যালটির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুভাষ বোস এর দপ্তরে ডাকা হয়। তাঁকে বলা হয় ৩০ লক্ষ টাকা দিতে হবে।” এরপর ভরা এজলাসে আরও বিস্ফোরক অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীর আইনজীবী। তিনি বলেন, “এই ঘটনার অভিযোগ থানায় জানাতে গেলে পুলিশ সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে, কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে ২০ লক্ষ টাকার প্রমিসারি নোটে সই করিয়ে নেয়। না হলে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয় পুলিশ।”

মামলাকারীদের আইনজীবী আরও আদালতকে জানিয়েছেন, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তাঁর আপ্তসহায়ক এবং পুলিশের মধ্যে যে কথোপকথন হয়েছিল, তার রেকর্ড তাঁদের কাছে আছে। আদালত চাইলে তাঁরা ওই রেকর্ড পেশ করতে পারেন।

পাল্টা রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, “যে দুজন লোক এই মামলা দায়ের করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও।” কিশোর দত্তর আরও বক্তব্য, যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে একজনের সঙ্গে সন্দীপবাবু স্ত্রীর সম্পর্ক রয়েছে। আদালতকে অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, কোনও অভিযুক্ত তদন্তকারী সংস্থা ঠিক করে দিতে পারেন না । পাল্টা বিচারপরতি বলেন, “মামলাকারীরা পছন্দের তদন্ত সংস্থার কথা আদালতে বলতেই পারেন। এর মধ্যে কোনও অসুবিধে নেই।”

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের আইনজীবী পার্থসারথি সেনগুপ্ত বলেন, “সন্দীপের স্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়বাবুকে কাকু বলে সম্বোধন করেন।” তখনই বিচারপতি বলেন, “ওঁর বিরুদ্ধে পুলিশের সঙ্গে মিলে তোলাবাজির টাকা চাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।” শুনানিতে সব পক্ষের বক্তব্য শুনে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি বসাক।

জানা গিয়েছে, মামলাকারীদের অন্যতম পঙ্কজ অগরওয়ালের আসানসোলে একটি নার্সিংহোম আছে। সেই সংক্রান্ত নথিপত্র নিয়ে দেখা করার জন্য নোটিস জারি করেন আসানসোলের মুখ্য স্বাস্থ্য নির্দেশক। তিনি কাগজপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে গেলে তাঁকে বলা হয় বিধাননগরের ওই কাউন্সিলরের অফিসে গিয়ে দেখা করতে। তখন তাঁর থেকেও টাকা চাওয়া হয় বলে অভিযোগ।

এর আগে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ করেছিলেন সিঁথির এক প্রোমোটার। কিন্তু সেটা সংবাদ মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ বার কাটমানি কাণ্ডে নাম জড়াল খাদ্যমন্ত্রীর। এবং তা গড়াল হাইকোর্ট পর্যন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.