ঠিক যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষাতেই জবাব দিলেন মুকুল রায়। আর সেই জবাবের জেরে রাজ্যে নব নিযুক্ত বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবের সঙ্গে প্রথম দিনের বৈঠক রীতিমতো নাটকীয় চেহারা নিল।
বিজেপি নিজের লোককে পুলিশ পর্যবেক্ষক করেছে বলে আগেই তোলা তৃণমূলনেত্রীর অভিযোগে নতুন অফিসার নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন। আর নতুন পুলিশ পর্যবেক্ষকের সঙ্গে প্রথম বৈঠক করতে গিয়েই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) আরিজ আফতাব তৃণমূল কংগ্রেসের লোক বলে অভিযোগ তুললেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। শুধু অভিযোগ তোলাই নয়, সিইও-র সামনে পুলিশ পর্যবেক্ষকের সঙ্গে বৈঠক করতেও অস্বীকার করেন মুকুল রায়। শেষে সিইও আরিজ আফতাবকে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়। এর পরেই বিবেক দুবের সঙ্গে বৈঠক করেন মুকুল রায়-সহ রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধিরা।
রাজ্যে প্রথমে পুলিশ পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেন বিএসএফের প্রাক্তন ডিজি কে কে শর্মা। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী অভিযোগ তোলেন, শর্মা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর লোক। এর পরেই পুলিশ পর্যবেক্ষক বদলে দেয় নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের পুলিশ পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে এবার এসেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন ডিজি বিবেক দুবে। সোমবার তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আর প্রথম বৈঠকেই রাজনৈতিক চাপ তৈরি করল বিজেপি।
নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে রবিবার বিকেলে কলকাতায় পৌঁছন। রাজ্যে পৌঁছেই তিনি বলেন, ”চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময়ে পুলিশকে নিজের কর্তব্য সম্পর্কে শপথ নিতে হয়। সেটাই পুলিশকে মনে করিয়ে দিতে চাই। আমার লক্ষ্য, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট নিশ্চিত করা। ভোটারদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো।”
রাজ্যে পুলিশ অফিসার ও কর্মীদের একটা অংশ ভোটে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করবে না বলে সব বিরোধী রাজনৈতিক দলই অভিযোগ তোলে। সোমবার তিনি ভোটের নিরাপত্তা নিয়ে উত্তরবঙ্গের আট জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে বৈঠক করেন। প্রথম তিন পর্যায়ে এই জেলাগুলির ১০টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট। মঙ্গলবার নবান্নে গিয়ে মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজি-র সঙ্গে দুবে বৈঠক করবেন বলে জানা গিয়েছে।
এসবের আগে নির্বাচন কমিশন স্বীকৃত রাজ্যের ন’টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলেন বিবেক দুবে। মিনিট দশেক সময় দেন সব রাজনৈতিক দলকে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) আরিজ আফতাব। কিন্তু মুকুল রায়ে সিইও-র উপস্থিতিতে বৈঠকে নারাজ হন। মুকুল রায়ের সঙ্গে বিজেপি প্রতিনিধি দলে ছিলেন জয়প্রকাশ মজুমদার ও শিশির বাজোরিয়া। মুকুল রায় প্রথমেই তাঁরা সিইও-র উপস্থিতিতে কথা বলতে অস্বীকার করেন। তাঁর অভিযোগ সিইও নিরপেক্ষ নন। এর পরে সিইও ওই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলে বিবেক দুবের সঙ্গে কথা বলেন বিজেপি প্রতিনিধিরা।
মুকুল রায়ের অভিযোগ, কোনও রমক নিয়ম মেনে কাজ করছেন না সিইও। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হয়ে রয়েছেন। তার সামনে কোনও কথা বলাই যায় না। দু’মিনিটের মধ্যে সেটা রাজ্য সরকারের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
রাজ্যে প্রথম পর্বের ভোটগ্রহণ ১১ এপ্রিল। বাকি আরও দশ দিন। কিন্তু এখন থেকেই রাজনৈতিক উত্তাপ উর্ধ্বমূখী। তৃণমূল কংগ্রেস বনাম বিজেপি-র টক্কর চলছেই। পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়ে মমতার অপছন্দের জবাবে এবার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক নিয়ে বিজেপির অপছন্দ প্রকাশ্যে। পর্যবেক্ষক বদলেছে, এবার সিইও পদেও রদবদল হবে না তো? এখন থেকেই তৈরি হচ্ছে প্রশ্ন।