সন্ধ্যে সাতটা। ভোট গ্রহণ সবে শেষ হয়েছে। কোচবিহারে জেলা শাসকের দফতের সামনে ধর্নায় বসে পড়লেন বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিক। দাবি, যে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না, সেখানে তৃণমূলের এজেন্ট ও রাজ্য পুলিশ মিলে ছাপ্পা দিয়েছে। গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে ওই সব বুথে ফের ভোট নেওয়া হোক।
একই দাবি নিয়ে কাল মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক আরিজ আফতাবের দফতরের বাইরে ধর্নায় বসতে পারে রাজ্য বিজেপি-ও। সম্ভবত তাদেরও দাবি হবে সেই এক। সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাই।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ যেন সেই ২০০৯ সালের পুনরাবৃত্তি। এবং নেপথ্যে সেই পোড় খাওয়া নেতাটি। যিনি, অর্থাৎ তৃণমূলের তৎকালীন সেকেন্ডম্যান মুকুল রায় প্রথম দফার ভোটের পর দাবি করেছিলেন, কমিশনের ভূমিকায় তাঁরা সন্তুষ্ট নন। যেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী নেই সেখানেই অবাধে ছাপ্পা মেরেছে বামেরা। অথচ ভোটের গতিবিধি আঁচ করে তলে তলে ক্রমেই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এ বারও কি তেমনই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে?
কেন?
বৃহস্পতিবার লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় বাংলার দুটি আসনে ভোট গ্রহণ হয়েছে। আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার। এর মধ্যে আলিপুরদুয়ারে ভোট নিয়ে দিনভর যুযুধান দুই শিবির তৃণমূল ও বিজেপি থেকে কোনও টুঁ শব্দও করা হয়নি। যা হয়েছে কোচবিহারকে ঘিরে। কিন্তু তাতেও কমিশন নিযুক্ত বিশেষ কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে দুপুরেই জানিয়ে দিয়েছেন ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবেই চলছে। এমনকি বিকেলে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক আরিজ আফতাব, এডিজি আইনশৃঙ্খলা সিদ্ধিনাথ গুপ্তাকে পাশে বসিয়ে জানিয়েছেন, বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট হয়েছে।
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, বৃহস্পতিবারের ভোট নিয়ে তলে তলে খুশি বিজেপি। এমনকী ঘরোয়া আলোচনায় দলের নেতারা দাবি করছেন, দুটো আসনেই জেতার সম্ভাবনা রয়েছে দলের। কিন্তু তা সত্ত্বেও কৌশলে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কমিশনের উপর চাপ তৈরি করতে চাইছেন তাঁরা। কারণ, বৃহস্পতিবার কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের একশ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না। বিজেপি চাইছে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকুক। যে হেতু একশ শতাংশ বুথে পোলিং এজেন্ট বা সে ধরনের ব্যবস্থা বিজেপি করতে পারেনি, তাই যত বেশি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে ততই ভাল। বস্তুত ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে ঠিক এমনই পরিস্থিতি ছিল তৃণমূলের।
পর্যবেক্ষকদের মতে, এরই পাশাপাশি গোটা বাংলা জুড়ে একটা অদ্ভূত ট্রেন্ড শুরু হয়েছে। ভোট কর্মী, প্রিসাইডিং অফিসার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের অনেকেই চাইছেন বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকুক। পঞ্চায়েত ভোটে বল্গাহীন সন্ত্রাসের পর এক প্রকার নিরাপত্তাহীনতা তাঁদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবে নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ বাড়ছে। বৃহস্পতিবার আরও ২৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে এসে পৌঁছেছে।
এই অবস্থায় তৃণমূল অভিযোগ করতে শুরু করেছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে রাজ্যে ভোটারদের প্রভাবিত করতে চাইছে বিজেপি। জোর করে এই পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। অথচ বাস্তব হল, বাংলায় আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি খবই ভাল।
বস্তুত ২০০৯ সালে এমনটাই দাবি করতেন বামেরাও।