সূচনা
বাংলাদেশি মুসলমানদের ব্যাপক অনুপ্রবেশের ফলে পশ্চিম বাংলায় মুসলমান জনসংখ্যার অনুপাত ইতিমধ্যেই বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে গেছে। তদুপরি, সম্প্রতি অসাম সরকার কর্তৃক NRC (National Register of Citizens) প্রকাশের প্রতিবাদে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হুঙ্কার ছেড়েছেন : পূর্ব পাকিস্তান ও তার বাঙ্গালি সংস্করণ বাংলাদেশ থেকে আসা লক্ষ লক্ষ অনুপ্রবেশকারী মুসলমানের বিরুদ্ধে অসম সরকার তথা ভারত সরকার কোনো ব্যবস্থা নিলে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাবে, রক্তগঙ্গা বইবে। পরন্তু, ওই অনুপ্রবেশকারীদের তিনি তার রাজ্যে আশ্রয় দেবার আশ্বাস দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হল, সেক্ষেত্রে বাঙ্গালি হিন্দুর কী গতি হবে? আর এই civil war ও bloodbath কার বিরুদ্ধে ? এখনও সতর্ক ও সক্রিয় না হলে আগামী ৫/৭ বছরেই স্বাধীন ভারতে বাঙ্গালি হিন্দুর নিজের রাজ্য বলে কিছু থাকবে না, তার অস্তিত্বই বিপন্ন হবে। সমগ্র বিষয়টি একটু খতিয়ে দেখা যাক।
গোড়ায় গলদ
স্বাধীন ভারতের রাজনৈতিক চর্চা (Political discourse) শুরু থেকেই গোঁজামিল-দুষ্ট। ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের ব্যাপারটা সেখানে বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে। পাকিস্তান যদি “শুধু মুসলমানদের স্বতন্ত্র বাসভূমি” হয়ে থাকে, তবে স্বাধীন ভারত অনিবার্যভাবেই হয়ে যায় “অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বাসভূমি”। তবু আমরা মূর্খ উল্লাসে বলে গেছি, মুসলমানদের ভোট না পেলে কোনো দলের পক্ষে কেন্দ্রে সরকার গড়া সম্ভব নয়। আমরা ভেবে দেখিনি, বা দেখছি না যে, একথার মানে দাঁড়ায়, স্বাধীন ভারতের ভাগ্যকে মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের কাছে বন্ধক রাখা। এভাবে দশকের পর দশক ইসলামিক বিচ্ছিন্নতাবাদকে তুষ্ট ও পুষ্ট করে আমরা আবার দেশভাগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে ফেলেছি। Course Correction বা গতিপথ সংশোধনের সময় কিন্তু পেরিয়ে যাচ্ছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানরা ছিলেন জনসংখ্যার ২২% মতো; সাধের পাকিস্তানে তাদের জন্য ব্রিটিশ ভারতের প্রায় ২০% ভূমি দেওয়া হয়। তাহলে স্বাধীন ভারতে মুসলমানদের জন্য ন্যায়ত ধর্মত আইনত এক ইঞ্চি জমিও অবশিষ্ট থাকে না। বস্তুত, ভারতে তাদের অস্তিত্বের যৌক্তিক ভিত্তিই নষ্ট হয়ে যায়। যৌথ মূলধনী কারবার থেকে যদি কোনো অংশীদার তার পুঁজি তুলে নেয়, তাহলে কারবারে তার অংশীদারিত্ব সাথে সাথে শেষ হয়ে যায়। সে যাই হোক, স্বাধীন ভারতের মুসলমানদের কেউ দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলেনি, আজও বলছে না। হিন্দু মহাসভা, জনসংঘ, বি.জে.পি, আর. এস. এস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সকলের বিচারে মুসলমানরা ভারতীয় জাতিসত্তার অন্যতম উপাদান। এদের শুধু একটাই দাবি, বিচ্ছিন্নতাবোধের ঊর্ধ্বে উঠে, অভিন্ন আইনবিধি (uniform Civil Code) স্বীকার করে ভারতের মুসলমানদের ভারতের রাষ্ট্রসত্তায় শামিল হতে হবে। রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে কোনো পৃথক ‘উম্মাহ’-র আনুগত্য স্বীকার করা, কিংবা আল-কায়দা বা ISIS-এর সমর্থনে নেচে ওঠা চলবে না।
এক যাত্রায় পৃথক ফল ও ভারত ভাগ তথা বাংলা ভাগের ফলে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঙ্গালি হিন্দু; আর সর্বাধিক লাভবান হয়েছে বাঙ্গালি মুসলমান। বাঙালি হিন্দুর বসবাসের ভূমি ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে চলেছে। ঘটনাটা এরকম :
(১) ১৯৪৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যত হিন্দু পূর্ব পাকিস্তান/বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে এসেছে, তার ২৫ ভাগের এক ভাগ মুসলমানও পশ্চিম বাংলা থেকে পূর্ব পাকিস্তানে/বাংলাদেশে চলে যায়নি।
(২) পূঃ পঃ বা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো Hindu Factor নেই; হিন্দুরা সেখানে political non-entity রাজনৈতিক অসত্তা। পক্ষান্তরে পশ্চিম বাংলার রাজনীতিতে মুসলমানদের সব দলই তোয়াজ করে চলে, তারাই নাকি রাজ্য-রাজনীতির নিয়ামক শক্তি।
(৩) বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পুরোপুরি একতরফা, মুসলমানরা মারে, আর হিন্দুরা মরে। এবং তা নিয়ে কোথাও কোনো উচ্চবাচ্য হয় না। অন্যদিকে, সারা ভারতে পশ্চিম বাংলাই একমাত্র রাজ্য, যেখানে সংখ্যালঘু মুসলমানরা আগ বাড়িয়ে দাঙ্গা বাধায়। তৃণমূল সরকারের আমলে তো এটাই রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
(৪) দেশভাগের বলি বাঙ্গালি হিন্দু যে পূঃ পাঃ/বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম বাংলায় চলে আসবে, সেটা অনিবার্য। কিন্তু আসল বিপদটা হল, বাংলাদেশের human hatchery-তে যে অগণিত বাঙ্গালি মুসলমান প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে, তাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পশ্চিম বাংলায় ঢুকে পড়ছে। পূর্বেকার বামফ্রন্ট সরকার এই ভয়ঙ্কর অনুপ্রবেশের সমস্যাটি উপেক্ষা করে গেছে; আর বর্তমান তৃণমূল সরকার তো ভোটব্যাঙ্ক শক্তিশালী করার জন্য একে উৎসাহিত করছে। পরিণামে, বাঙ্গালি হিন্দু তার শেষ আশ্রয়স্থলটুকু অর্থাৎ পশ্চিম বাংলাও হারাতে বসেছে। এখনও সতর্ক হলে নিকট ভবিষ্যতে বাঙ্গালি হিন্দুর নিজস্ব রাজ্য বলতে কিছু থাকবে, না হলে নিকট ভবিষ্যতে বাঙ্গালি হিন্দুর নিজস্ব রাজ্য বলতে কিছু থাকবে না। সে একটা endangered species বা বিপন্ন প্রজাতি বলে চিহ্নিত হবে। পিতৃ-পুরুষের বাসভূমির দখল রাখতে না পারায় ইহুদিদের যেমন দেশে-দেশে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সয়ে বাঁচতে হয়েছে, বাঙ্গালি হিন্দুদেরও তেমনি ভারতের রাজ্যে রাজ্যে অনুগ্রহের পাত্র হয়ে লাথি-ঝাঁটা খেয়ে বাঁচতে হবে। লক্ষ্য করুন, বাংলাদেশে ১৯৫১ সালে হিন্দুরা ছিলেন জনসংখ্যার ২২.০৫%, আর ২০১১-য় তারা হয়েছেন ৮.৯৬ শতাংশ। অন্যদিকে পশ্চিম বাংলায় ১৯৫১ সালে মুসলমানরা ছিলেন জনসংখ্যার ১৯.৮৫ শতাংশ আর ২০১১-য় তারা হয়েছেন ২৭.১ শতাংশ। আর ২/১ দশক পরে বাঙ্গালি হিন্দুর কী দশা হবে?
অসম প্রসঙ্গ : স্বাধীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি হয়েই মুহম্মদ আলি জিন্নাহ ঘোষণা করেন, ওই ‘mouth-eaten’ বা পোকায় খাওয়া পাকিস্তান নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট নন। আর, অসম তিনি পূর্ব পাকিস্তানিদের সোনার থালায় করে উপহার দেবেন। তখন থেকেই পরিকল্পিতভাবে মুসলমান অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে পাকিস্তান সরকার অসমের জনবিন্যাসটাই পালটে ফেলেছে। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারও একইভাবে দেশের উদ্বৃত্ত মুসলমানদের অসমে ঠেলে দিয়েছে। এসবের পরিণতিতে ১৯৮০ সাল নাগাদ অসম গণ পরিষদ ও আসু (অল আসাম ষ্টুডেন্টস ইউনিয়ন) অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিতকরণের জন্য প্রবল গণ আন্দোলন শুরু করে। ঠেলায় পড়ে রাজীব গান্ধীর সরকার ১৯৮৪-৮৫ নাগাদ অসমের জন্য বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বানানোর কথা ঘোষণা করে। অনেক টালবাহানার পর সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে আজ যখন বি.জে.পি. সরকার জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর খসড়া প্রকাশ করেছে এবং প্রায় ৪০ লক্ষ বাঙালি মুসলমানের নাম বেআইনি অভিবাসী বা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, তখন কতিপয় বিরোধী দল তার প্রতিবাদে সংসদে সোরগোল তুলেছে। আর এই অপকর্মের নেতৃত্বে আছেন হতভাগ্য পশ্চিম বাংলার দুর্দান্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। মূল বিষয়টাই তিনি ঘেঁটে দিচ্ছেন। (i) দেশের বিশেষ করে বাংলার মানুষকে তিনি এতটাই বে-আক্কেল ভাবছেন যে, একটা ডাহা মিথ্যে তিনি অবলীলাক্রমে বলে চলেছেন—এন আর সি বহির্ভূত ওই ৪০ লাখ মানুষ প্রায় সকলেই বাঙ্গালি মুসলমান— বিহার, রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি রাজ্য থেকেই অসমে ঢুকেছে। সত্যিটা হল : এরা সকলেই বাংলাদেশি মুসলমান, কারণ এরা বাংলায় কথা বলে।
(ii) বেপরোয়া মুখ্যমন্ত্রী ওই ৪০ লাখ অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে পশ্চিম বাংলায় চলে আসার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। এখন বাংলার মানুষদের, বিশেষত বাংলার হিন্দুদের, ভেবে দেখতে হবে এই বাংলার ভূ-খন্ডের মালিক তারা, নাকি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ? বাংলার মাটির বিলিবন্টনের জন্য তারা কি মমতা ব্যানার্জিকে power of attorney দিয়ে রেখেছেন ?
অনুপ্রবেশকারী প্রসঙ্গ : এবারে একটি মৌলিক প্রশ্নে আসা যাক। বনচারী মানুষ যেদিন লোকালয়ের পত্তন করেছে, সেদিন থেকেই মনুষ্য সমাজে একটি অমোঘ নিয়ম কার্যকর হয়েছে : “the perpetual struggle for room and food”, অর্থাৎ বাসভূমি ও খাদ্যের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম। সে কারণেই পৃথিবীর কোনো দেশ বা রাষ্ট্র বহিরাগত অভিবাসীদের প্রতি ‘খোলা-দরজা’ নীতি অবলম্বন করতে পারে না। আমেরিকার মতো সম্পদশালী দেশকেও সেটা ঠেকে শিখতে হচ্ছে। পশ্চিম বাংলার মতো জনবহুল রাজ্যের পক্ষে তো সেটা আত্মহত্যারই নামান্তর। তাছাড়া, দেশভাগ ও জিন্নাহর অসম দখলের কৌশলের প্রেক্ষিতে অসমে অনুপ্রবেশকারী বাঙালি মুসলমানরা স্পষ্টতই ভারতের সংহতি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ। এখন প্রশ্ন হলো এতগুলি মানুষ কোথায় যাবে? এদের নিয়ে কী করা হবে? বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখে এদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো অসম্ভব—যদিও সেটাই ন্যায়সঙ্গত। আবার এদের বৈধ নাগরিকত্ব দিলে অনুপ্রবেশকেই পুরস্কৃত ও উৎসাহিত করা হবে। কাজেই, এদের ব্যাপারে যে ব্যবস্থাই নেওয়া হোক, এদের ‘অবৈধ বাসিন্দা’ বলে চিহ্নিত করে রাখাটা জরুরি।
অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থী ও যেসব স্বঘোষিত উদারনৈতিক মানবতাবাদী ব্যক্তি, সংগঠন বা রাজনৈতিক দল যেমন—কংগ্রেস, সি. পি. এম., তৃণমূল কংগ্রেস অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থীর মধ্যে প্রভেদ করতে নারাজ তারা আসলে দেশের শত্রু, আরও বেশি করে হিন্দুর শত্রু। বাংলাদেশের দৃষ্টান্তটি বিচার করুন : (i) সেখান থেকে হিন্দুরা আসে ধর্মীয় কারণে, নির্যাতন ও লুণ্ঠন থেকে বাঁচতে, একটু নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকার জন্য। অনন্ত কাল ধরে তাদের আশ্রয় দান ভারতের ঐতিহাসিক দায়। UNHCR-এর সংজ্ঞানুসারেই তারা শরণার্থী। (ii) পক্ষান্তরে, মুসলমানরা ভারতে ঢোকে জেহাদি জোশে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে। কাজেই তারা সর্বার্থে অনুপ্রবেশকারী ও বিতাড়নযোগ্য। অর্থনৈতিক বা মানবিক কারণের দোহাই দিয়ে যারা এই অনুপ্রবেশকারীদের পক্ষে ওকালতি করেন, তারা আবার ভারত ভাগের পথই প্রশস্ত করেন।
খাল কেটে কুমির আনা : বামফ্রন্টের দীর্ঘ ৩৪ বছরের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে পশ্চিম বাংলার মানুষ যেদিন মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল, সেদিন কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি যে, তারা খাল কেটে কুমির আনছে। ক্ষমতায় এসেই মমতাজি মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করতে নির্লজ্জভাবে মুসলমান তোষণ শুরু করলেন। নমুনাগুলি দেখুন–
(i) মসজিদের ইমামদের জন্য তিনি “ইমাম ভাতা” ঘোষণা করলেন।
(ii) প্রথমদিকে হিন্দুদের বাদ দিয়ে তিনি শুধু মুসলমান ছাত্রীদের বিনামূল্যে সাইকেল উপহার দিয়েছিলেন।
(iii) জেলায় জেলায় তিনি সংখ্যালঘু ভবন নির্মাণ করলেন।
(iv) সংবিধানের নিষেধ অমান্য করে এবং মন্ডল কমিশনের সুপারিশ উপেক্ষা করে মমতা ব্যানার্জি গায়ের জোরে পশ্চিম বাংলার প্রায় সব মুসলমানকে রাতারাতি ওবিসি বানিয়ে দিলেন এবং তাদের জন্য সরকারি চাকুরি সংরক্ষণের পাকাপাকি বন্দোবস্ত করে দিলেন। ফলে, মণ্ডল কমিশন মধ্যবর্ণের যে হিন্দুদের (জনসংখ্যার প্রায় 52%) ওবিসি বলে চিহ্নিত করেছে, তাদের দেবার মতো আর কিছুই রাজ্য সরকারের হাতে রইল না। এভাবে মমতা ব্যানার্জি এদের স্থায়ী সর্বনাশ করলেন।
(v) বর্ধমানের খাগড়াগড়ে তৃণমূলের এক মুসলিম নেতার বাড়িতে বহিরাগত জেহাদি সন্ত্রাসবাদীদের বোমা তৈরির কারখানার খবর যখন আকস্মিক বিস্ফোরণের ফলে ফাঁস হয়ে গেল, তখন কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ দল আসার আগেই মমতা ব্যানার্জি রাজ্য পুলিশের দল পাঠিয়ে তড়িঘড়ি করে প্রাপ্ত বোমাগুলি ফাটিয়ে ফেললেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি দাবি করলেন, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW-ই ষড়যন্ত্র করে বোমাগুলি ওখানে রেখে দিয়েছিল। এই ভয়ঙ্কর অভিযোগে স্তম্ভিত হয়ে ‘আনন্দবাজার’ এক সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করেছিল, ইহাকে যদি দেশদ্রোহিতা না বলা হয়, তবে দেশদ্রোহিতা কী?
সুধী পাঠক, অবহিত হোন, এভাবে চলতে থাকলে বাঙ্গালি হিন্দুর ভিটেছাড়া অর্থাৎ বাংলাছাড়া হবার আর দেরি নাই। মমতা আসলে কাদের ‘অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন?
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বর্গ ও বি.জে.পি.-র কোনো অবাঙ্গালি কেন্দ্রীয় নেতা এরাজ্যে সভা করতে এলেই মমতা হুঙ্কার ছাড়েন আগুন নিয়ে খেলবেন না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পীঠস্থান এই বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা ছড়াবেন না। তা, এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চূড়ান্ত নিদর্শনটিও এই সোনার বাংলাতেই রয়েছে : 1946 সালের 16 আগস্টের The great Calcutta Killing। অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দির পরিকল্পনায় সংঘটিত এই দাঙ্গায় হাজার হাজার হিন্দুর প্রাণ গিয়েছিল। বাংলার অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের কল্পকাহিনী আর কত শুনব?
বাঙ্গালি হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের কীর্তি : এই মহান বাংলার পেশাদার হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা দু’টি বৈশিষ্ট্যে দীপ্যমান—ভণ্ডামি ও কাপুরুষতা। প্রমাণ দেখুন।
(i) 1990-এর দশকের শুরুতেই যখন কাশ্মীরি মুসলমানরা সেখানকার হিন্দু পণ্ডিতদের (সংখ্যায় প্রায় তিন লাখ)—মেরে-কেটে তাড়িয়ে দেয়, তখন বা অদ্যাবধি তার প্রতিবাদে কোনো বাঙ্গালি বুদ্ধিজীবী ‘টু’ শব্দটি করেননি।
(ii) বামফ্রন্ট সরকার যখন সুকৌশলে মুসলমান মৌলবাদীদের উস্কানি দিয়ে তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামায়, তখন তসলিমার পক্ষে মিটিং-মিছিল করা দূরে থাক, আমাদের বীর বুদ্ধিজীবীরা কেউ মুখই খোলেননি।
(iii) বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত হিন্দু নির্যাতন ও নিধনে এদের সুখনিদ্রার কখনও কিছুমাত্র ব্যাঘাত ঘটেনি।
পরিত্রাণের পথ : ২০১১ সালে আমরা বামফ্রন্টের ফুটন্ত কড়াই থেকে বাঁচার আশায় তৃণমূলের জ্বলন্ত উনুনে ঝাপ দিয়েছিলাম। তারপর—সারদা, রোজভ্যালি, এমপিএসের মতো চিটফাণ্ডের টাকা কে বা কারা আত্মসাৎ করেছে, সেটা জেনেও ২০১৬ সালে আমরা একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করেছি। চোখের সামনে দেখছি, সিপিএমের “ক্যাডার”দের তুলনায় তৃণমূলের “দিদির ভাই”রা কতো বেশি অত্যাচারী ও ভয়ঙ্কর। ব্যাপক রিগিং হওয়া সত্যেও সিপিএমের আমলে অন্তত নির্বাচনটা হত। আর, তৃণমূল জমানায় বিরোধী দলের প্রার্থীর নির্বাচনে দাঁড়ানোটাই অপরাধ। বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে 34% আসনে তৃণমূল প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছেন। এটা জবরদস্তির জাতীয় রেকর্ড। সম্ভবত বিশ্বরেকর্ড। তৃণমূলী উন্নয়নের করাল মূর্তি দেখে শঙ্খ ঘোষের মতো স্থিতধী, মিতবাক মানুষের কবিতায়ও তীব্র ব্যঙ্গ ধ্বনিত হয়েছে : “দ্যাখ মেলে তোর তিন নয়ন/রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে/খড়্গ হাতে উন্নয়ন।”
বাঙ্গালি হিন্দুর হাতে কিন্তু আর সময় নেই। হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা তার মোহন সুরের জাদুতে ভুলিয়ে ওই শহরের শিশুদের সমুদ্রের জলে ডুবিয়ে মেরেছিল। তেমনি, মমতা ব্যানার্জিও তার মোঠো বক্তৃতার সহজিয়া মায়ায় ভুলিয়ে বাংলার হিন্দুদের আত্ম-বিলোপের পথে ঠেলে দিচ্ছেন। বাঁচার একমাত্র পথ হলো, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে যথাসম্ভব খর্ব করা এবং ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই বিষাক্ত তৃণকে সমূলে উপড়ে ফেলা। এবারের শ্লোগান হোক : মমতা হটাও—বাংলা বাঁচাও।” অন্যথায় বাঙ্গালি হিন্দুর নিস্তার নেই, “অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?”
নন্দ দুলাল চৌধুরী