কটা কথা শুনলাম, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদীজীকে পশ্চিমবঙ্গের কোন একটি আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে বলেছেন কোন কোন নেতা। এটা সত্যি হলে ভারতের রাজনীতির ভার কেন্দ্র পূর্ব দিকে বাঁক নিচ্ছে বলতে হবে। পূর্ব ভারত বিশেষত বঙ্গ দেশ চিরকাল কেন্দ্রের রাজনৈতিক শক্তির বিপক্ষতা করে। এটা সেই কালিদাসের কাল থেকে চলে আসছে। রঘুর দিগ্বিজয়ে বাধা দেয় ‘নৌসাধনোদ্যত’ বাঙ্গালী। এরপর সারা দেশ হিন্দু তো বঙ্গ দেশ বৌদ্ধ। সারা দেশ রাজতন্ত্র তো আমাদের কুলতন্দ্র ( oligarchy)! পৌণ্ড্র, গাঙ্গরাজ্য। সারা দেশ কংগ্রেস তো এখানে বাম শাসন।
এর ফল রাজ্যবাসীর পক্ষে ভাল হয়নি। কেন্দ্রের বঞ্চনা বলে যতই চিৎকার করি agony of Bengal এর জন্য আমাদের যুক্তি হীন আপত্তি কাজ করেছে। Militant trade unionism বাংলার শিল্পকে শ্মশান করেছে। শএষ পর্যন্ত মূর্খের মত যা-কিছু কেন্দ্রের সব বাদ কিংবা সে-সবকে রাজ্যের নামে চালানোর বিচিত্র কাণ্ড কারখানা দেখে আত্মারাম খাঁচার ছাড়া হবার উপক্রম। গরীব কৃষকের ব্যঙ্ক খাতায় টাকা ঢুকলে আপত্তি, ‘স্বচ্ছ ভারত’কে ‘নির্মল বাংলা’ করে ছাড়া, ‘আয়ুষ্মান’ প্রকল্পের বিরুদ্ধতা –এক সার্বিক অবিবেচক দুষ্টবুদ্ধি, আত্মঘাতী প্রবণতা।
এই অদ্ভুত অনাচারের ফল ভোগ করেছে আমাদের পরের প্রজন্ম। শিল্প শেষ, শিক্ষা তলানিতে, উদ্যোগ নেই। মধ্যবিত্ত মানুষ পরের প্রজন্মকে অন্য দেশ বা রাজ্যে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তারা সেখানেই লেখা পড়া শিখে চাকরি বাকরি করছে। শূন্যতা পূরণ করেছে অর্ধশিক্ষিত মস্তান বাহিনী। বাম আমলে এরা রাজনৈতিক নেতাদের হুকুম তামিল করত, এখন ওরাই নেতা। শিক্ষিত সমাজ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। শূন্য স্থান পূরণ করেছে তোলাবাজ গোলন্দাজ তাজা মস্তান বাহিনী।
এই অবস্থায় কেন্দ্রের জনপ্রিয় জাতীয়তাবাদী রাজনীতি পূর্ব ভারতে প্রবল শক্তি শালী হয়েছে। ত্রিপুরা মণিপুর নাগাল্যান্ড মণিপুর মেঘালয় অরুণাচল বিশেষত আসামে গৈরিক পতাকা উড্ডীন হয়েছে। এবার পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচন চলছে। বিজেপির শক্তি বিবর্ধমান। প্রগলভ মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ভিড় নেই! তিনি হামেশাই মেজাজ হারাচ্ছেন! অন্যপক্ষে অমিত শাহ হা নরেন্দ্রদামোদর মোদীজঈর সভা উপজে পড়ছে ভিড়। মনে হচ্ছে, বঙ্গ দেশ পাশ ফিরছে। আসলে অযোগ্য দুর্নীতিগ্রস্থ রাজনৈতিক শক্তির আস্ফালন অসহ্য ঠেকছে। আর কে না জানি, বাংলা যখন বদলায় তখন আমূল পরিবর্তন হয়। আলো দেখা যাচ্ছে। ঊষার উজ্জ্বল গৈরিক উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে॥