চলে গেলেন কলকাতা ইতিহাসের চিত্রকর রথীন মিত্র

চলে গেলেন চিত্রকর রথীন মিত্র। ক্রমাগত বদলে চলা কলকাতা শহরের হারিয়ে যাওয়া আকাশরেখা, বিলুপ্ত সৌধ, স্মৃতিস্তম্ভ, স্থাপত্য প্রায় ইতিহাসবিদের নিষ্ঠায় তিনি ধরে রেখেছেন লেখায় ও রেখায়।

তেলরঙের দুনিয়া ছেড়ে দেশে বিদেশে শিক্ষকতা করা এই শিল্পী স্কেচকে বেছে নিয়েছিলেন কলকাতার স্মৃতি ধরে রাখার কাজে। গত শতাব্দীর আটের দশকে রাধারমণ মিত্রের ‘কলকাতা দর্পন’ শিল্পীকে আক্ষরিক অর্থেই দুয়ার ভাঙার ডাক দেয়। তারপর থেকে বিভিন্ন পত্রিকায় তিনি নিয়মিত প্রকাশ করতে থাকেন শহরের বিভিন্ন সৌধের স্কেচ ও তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্পী: রথীন মিত্র

নিশ্চিন্ত নিরাপদ আরামের জীবন ছেড়ে তিনি গ্রহণ করেন পরিব্রাজকের জীবন। ট্রেনে বাসে পায়ে হেঁটে তিনি পৌঁছে যান শহরের আনাচে কানাচে।

ইট–কাঠ–সিমেন্টের মধ্যেও যে থাকে একটি শহরের সংস্কৃতি, সেই জরুরি কথাটি তিনি তুলে ধরতে থাকেন এমন এক আত্মবিস্মৃত জাতির কাছে যারা শহরের ঐতিহ্য বা চরিত্র চিহ্ণগুলিকে লুপ্ত করে দিয়ে গড়পড়তা ‘বাক্সকাঠামো’ নির্মাণকে মনে করে ‘উন্নয়ন’। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন শহরের চিত্রকর।

নাখোদা মসজিদ, শিল্পী: রথীন মিত্র

বিগত কয়েক বছর আগে শিল্পী অনুসরণ করতে শুরু করেন শ্রীচৈতন্যের চরণচিহ্ন। পায়ে হেঁটে ঘুরতে থাকেন পশ্চিমবঙ্গ, চট্টগ্রাম, ঝাড়খণ্ড, বিহারের নানা অঞ্চলে। কাগজে ফুটে উঠতে থাকে ইতিহাসের এক অন্য আলেখ্য। তাঁর কলকাতা ও চৈতন্যপথের ছবি নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একাধিক গ্রন্থ, দেশে বিদেশে একক প্রদর্শনী হয়েছে চল্লিশেরও বেশি। ৯৫ বছর বয়সে তাঁর প্রিয় শহর আর ইতিহাস ছেড়ে চিরকালের মতো চলে যাওয়া শিল্পী রথীন মিত্র রেখে গেলেন স্ত্রী ও দুই মেয়েকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.