পার্শ্ব শিক্ষকদের উপর পুলিশি লাঠিচার্জের তীব্র প্রতিবাদ করলেন অভিনেত্রী ও চিত্র পরিচালক অপর্ণা সেন। রবিবার মধ্যরাতে এ ঘটনা নিয়ে টুইট করে অপর্ণা লিখেছেন, “পুলিশ শিক্ষকদের উপর হামলা চালাচ্ছে। শিক্ষিকাদের যৌন হেনস্তা করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার করছে কী?”
অপর্ণা জানিয়েছেন, তিনি এখন শহরে নেই। নইলে এক্ষুণি পার্শ্ব শিক্ষকদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেন। তবে তাঁর সব রকম সহানুভূতি শিক্ষকদের সঙ্গে রয়েছে। এ কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন তিনি। টুইটে অপর্ণা লিখেছেন, “ম্যাডাম মুখ্যমন্ত্রী, দোষীদের খুঁজে বের করে তাঁদের কঠিন সাজা দেওয়া এ বার আপনার দায়িত্ব।”
সমকাজে সম বেতনের দাবিতে পার্শ্ব শিক্ষকরা গত কদিন ধরে তাঁদের আন্দোলন ক্রমশই জোরদার করেছেন। গত শুক্রবার প্রথমে তাঁরা হাডকো মোড়ে জমায়েত করে সল্টলেকে শিক্ষা দফতর তথা বিকাশ ভবন পর্যন্ত মিছিল করেছিলেন। পর দিন তাঁরা ধর্মতলা চত্বরে ধর্নায় বসার কথা স্থির করেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। ফলে কলকাতা থেকে একটু দূরে তাঁরা কল্যাণী বাস টার্মিনালে ধর্নায় বসেন। কিন্তু শনিবার রাতে সেখান থেকে তাঁদের তুলে দিতে বেধড়ক লাঠি চালায় পুলিশ। শিক্ষিকাদেরও হেনস্তা করা হয় বলে অভিযোগ। তা নিয়েই রাজ্য রাজনীতিতে এখন সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
ওই ঘটনা নিয়েই ক্ষোভ জানিয়েছেন অপর্ণা। অতীতে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়ে অপর্ণা খুবই সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছিল। ইদানীং এ ধরনের বিষয়ে ফের সক্রিয় হয়েছেন তিনি ও তাঁর সঙ্গে সমমনোভাবাপন্ন কিছু বিদ্দ্বজন। যেমন, ভাটপাড়ায় রাজনৈতিক হিংসার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। আবার দেশজুড়ে বিক্ষিপ্ত গণপিটুনি তথা অসহিষ্ণুতার ঘটনার প্রতিবাদ করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও লিখেছিলেন তিনি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রীকে ওই চিঠি লেখার পর অর্পণা সেনদের সঙ্গে সখ্য আরও মজবুত করতে সক্রিয় হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী অপর্ণা সেনকে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্যও করে দিয়েছিলেন তাঁর সঙ্গে কথা না বলেই। কিন্তু অপর্ণার এ দিনের টুইট থেকে স্পষ্ট যে তিনি নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েই চলতে চান। অন্যায় হলে তার প্রতিবাদ করবেন,- ব্যস সেটুকুই। কোনও রাজনৈতিক দলকে তার সুবিধা নিতে দেবেন না।
এর আগে যা হয়েছে....
রাতে মার খেয়ে সকালে ফের জমায়েত, কল্যাণী স্টেশনে অবস্থানে পার্শ্ব শিক্ষকরা
শনিবার সন্ধে বেলা পুলিশের একাংশের হাতে বেধড়ক মার খেয়েছিলেন তাঁরা। নির্বিচার লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল কল্যাণী সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাসে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকের পার্শ্বশিক্ষকদের অবস্থান। কিন্তু রবিবার সকাল হতেই ফের জমায়েত করলেন পার্শ্ব শিক্ষকরা। তবে জায়গাটা একটু পাল্টে নিলেন তাঁরা।
কল্যাণী স্টেশনের বাইরে এ দিন সকাল থেকেই জমায়েত শুরু করেন মাস্টারমশাই দিদিমণিরা। ফের শুরু হয়েছে অবস্থান। বক্তব্য একটাই, পুলিশ যাই করুক, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, কৌশল করেই জায়গা পাল্টেছে পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চ। কারণ স্টেশন চত্বরে অবস্থান করলে তা রাজ্য পুলিশের আওতার মধ্যে পড়বে না। সেখানে তারা ঢুকে বাধাও দিতে পারবে না। আর এটা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কোনও আন্দোলন নয় যে, আরপিএফ আটকে দেবে। ফলে সব দিক বিবেচনা করেই জায়গা বাছা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
পার্শ্ব শিক্ষকদের উপর লাঠিচার্জের ঘটনায় ঝড় বইছে রাজ্য রাজনীতিতে। সরগরম সোশ্যাল মিডিয়াও। পুলিশের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষিকারা। তাঁদের দাবি, অন্ধকারে পেটানোর সময়েই একাধিক দিদিমণির পোশাক ছিঁড়ে দিয়েছে পুলিশ। এক শিক্ষিকা ক্যামেরার সামনে অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্বামী তাঁর কাছে কিছু পোশাক আর ওষুধ দিতে এসেছিলেন। সেগুলিও কেড়ে নিয়ে স্বামীকে মারধর করেছে পুলিশ।
গত শুক্রবার সমকাজে সমবেতন-সহ আট দফা দাবি নিয়ে উল্টোডাঙা হাডকো মোড়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পার্শ্ব শিক্ষকদের জমায়েতে কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় ভিআইপি রোড। যান চলাচলে প্রভাব পড়ে বাইপাসেও। পার্শ্ব শিক্ষকদের বিরাট মিছিল শুক্রবার বেলা সাড়ে বারোটার সময়ে রওনা দেয় বিকাশ ভবনের উদ্দেশে। পার্শ্ব শিক্ষক ঐক্য মঞ্চের নেতারা বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন তাঁরা। জানবেন দাবি। কিন্তু তাঁদের মিছিল বিকাশ ভবন পৌঁছনোর আগেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিকাশ ভবন ছেড়ে বেরিয়ে যান। চলে যান সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের জেরায় হাজিরা দিতে।
প্রবল বৃষ্টি আর পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির পর পার্শ্ব শিক্ষকরা সিদ্ধান্ত নেন, তাঁরা বিকাশ ভবনের কাছেই অবস্থান করবেন। কিন্তু পুলিশ বসতে দেয়নি। এরপর ধর্মতলায় অবস্থানে বসার কথা ভাবেন তাঁরা। কিন্তু তাতেও রাজি হয়নি পুলিশ। এরপর কলকাতা থেকে কিছুটা দূরে কল্যাণী বাস টার্মিনালে বসার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। পরিকল্পনা ছিল, সোমবার ফের জমায়েত করে বিকাশ ভবন যাবেন মিছিল নিয়ে। কিন্তু তার মধ্যেই এই ঘটনা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় শনিবার রাত থেকেই ভাইরাল হতে শুরু করে পার্শ্ব শিক্ষকদের উপর পুলিশি ‘হামলা’র ক্লিপিং ও ছবি। পুলিশের বিরুদ্ধে কার্যত ফুঁসছেন ‘আক্রান্ত’ শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এক পার্শ্ব শিক্ষিকা বলেন, “এটাই এখন এ রাজ্যের পুলিশের চরিত্র। এঁরা টালিগঞ্জ থানায় গুন্ডাদের হাতে মার খায়, আর ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করলে পেটায়।” তবে রবিবার পার্শ্ব শিক্ষকরা বোঝাতে চাইলেন, আরও বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।