আলিপুরদুয়ার দিয়েই বাংলায় ভোট প্রচার শুরু করলেন অমিত শাহ। শুক্রবার সেখানকার হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে বিজেপি প্রার্থী জন বার্লার সমর্থনে জনসভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দলের সর্বভারতীয় সভাপতি ছিলেন আক্রমণাত্মক। পয়লা প্রচারের মঞ্চ থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়ে দেন, “যতই এ বার গুন্ডা নামান, তৃণমূল কংগ্রেস হারছেই।”

বাংলা থেকে ২৩টি আসন বিজেপি জিতবে বলে প্রত্যয়ের সঙ্গে জানিয়ে দেন শাহ। এবং এই ২৩টির মধ্যে যে আলিপুরদুয়ারও থাকবে তাও ভবিষ্যদ্বাণী করে দেন গান্ধীনগরের এ বারের বিজেপি প্রার্থী। তাঁর কথায়, “হাওড়া থেকে আলিপুরদুয়ার, যেখানেই যান, সেখানেই তৃণমূলের হার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।”

গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতা এ দিন পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বলেন, “৩৪ শতাংশ আসনে ভোট করতে দেননি মমতা দিদির সরকার। বিজেপিকর্মীদের খুন করেছে তৃণমূলের গুণ্ডারা। কিন্তু দিদি, আপনি কান খুলে শুনে রাখুন, যত ইচ্ছে খুন করুন। আপনি বিজেপি-র জয় ঠেকাতে পারবেন না।”

বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে তৃণমূলনেত্রী প্রায়ই বলেন, এই সরকারের এক্সপায়ারি ডেট শেষ। কার্যত দিদির সুরেই তাঁকে এ দিন বিঁধলেন বিজেপি সভাপতি। অমিত শাহ এ দিন বলেন, “তৃণমূল যাই করুক, মমতা দিদির সরকারের সময় শেষ। এটা গোটা বাংলা বুঝে গিয়েছে।

ইমাম ভাতা, দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো-র মতো ধর্মীয় ইস্যু তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের তীব্র আক্রমণ শানান শাহ। বলেন, “বাংলায় এখন দুর্গাপুজো করতে গেলে, সরস্বতী পুজো করতে গেলে অনুমতি নিতে হয়। দিল্লিতে এ বার মোদীর সরকার বানান, সামনের বার থেকে আর অনুমতি নিতে হবে না। গলিতে গলিতে পুজো হবে।” বাংলার সরকারদের ইমাম ভাতা দেওয়া নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলে বিজেপি সভাপতি বলেন, “মমতা দিদির সরকার ইমামদের ভাতা দিচ্ছেন। দিন। আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু পুরোহিতরা কেন পাবেন না?” পর্যবেক্ষকদের মতে, বিজেপি-র রাজনৈতিক কৌশল অনুযায়ী যা করার, সেই মেরুকরণের রাজনীতিকেই তাঁর বক্তৃতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন শাহ।

দাড়িভিট কাণ্ডের কথা উল্লেখ করে শাহ বলেন, “বাংলায় এখন উর্দু ভাষা স্কুলে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে দিনে দুপুরে রাজেশ সরকার, তাপস বর্মনকে তৃণমূলের পুলিশ গুলি করে মেরে দিল।”

জাতীয় নাগরিকপঞ্জিকরণ নিয়ে এ দিন সরব হন শাহ। জানিয়ে দেন, “হিন্দু শরনার্থীদের কোনও চিন্তা নেই। তাঁদের কিচ্ছু হবে না। তাঁরা দেশেই থাকবেন। কিন্তু যারা বাইরে থেকে ঢুকেছে, তাদের খুঁজে খুঁজে বের করা হবে।”

পুলওয়ামা কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন শাহ। বলেন, “পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় ৪০ জন জওয়ান শহিদ হলেন। এখানে মমতা দিদি এমন সব কথা বললেন, ও দিকে পাকিস্তান হাসল।” রাজনৈতিক মহলের মতে, গোটা দেশের মতো বাংলাতেও মেরুকরণ  আর জাতীয়বাদকেই যে বিজেপি তাদের হাতিয়ার করেছে, এ দিন তা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট রাজ, তোলাবাজির অভিযোগ এ দিনও তোলেন বিজেপি সভাপতি।

মেরুকরণের রাজনীতি নিয়ে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “বিজেপি ভুলে যাচ্ছে এটা বাংলা। এটা উত্তরপ্রদেশ নয়। এখানে ঘৃণা, বিদ্বেষ আর বিভেদের রাজনীতি যে করতে এসেছে, তারই স্থান হয়েছে আঁস্তাকুড়ে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.