বিমান বন্দরে ‘সোনা কাণ্ড’ নিয়ে রবিবার দুপুরে প্রথম মুখ খোলেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমতলার নির্বাচনী অফিসে ‘ব্যক্তিগত’ সাংবাদিক সম্মেলন করে, কাস্টমসের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তুলেছিলেন পাঁচটি প্রশ্ন। ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই অভিষেকের বিরুদ্ধে পাল্টা পাঁচ প্রশ্ন তুলল বিজেপি।
সোমবার নয়াদিল্লির বিজেপি সদর দফতরে শাহনাওয়াজ হোসেনকে পাশে বসিয়ে বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত এক, দুই, তিন করে পাঁচটি প্রশ্ন ছুড়ে দেন যুব তৃণমূল সভাপতির দিকে।
এক, অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা নারুলা এবং সঙ্গে থাকা অন্য এক জন মহিলার ব্যাগ চেক করতে চেয়েছিল কাস্টমস কর্তারা। যদি ব্যাগে কিছু নাই থাকে, তাহলে তাতে বাধা দেওয়া হল কেন? দুই, বিমান বন্দরের একটি নির্দিষ্ট এলাকা থাকে যেটা শুধু কাস্টমসের এক্তিয়ারে। সেখানে স্থানীয় পুলিশ কেন গেল? কী কারণে পুলিশ বাধা দিল? তিন, অভিষেক বলেছিলেন তাঁর স্ত্রী কোনও ভিআইপি নন। তাহলে কেন গ্রিন চ্যানেল ব্যবহার করছিলেন? চার, ঘটনার পরের দিন সকালে অর্থাৎ ১৬ মার্চ সকাল সাড়ে এগারোটায় কেন পুলিশ গেল কাস্টমস কর্তাদের গ্রেফতার করতে? এবং পাঁচ, ২২ তারিখ কাস্টমস যখন বিমানবন্দর থানায় এফআইআর করতে গেল, কেন তা নিতে ছ’ঘণ্টা লাগাল পুলিশ?
বিমান বন্দরে ওই রাতের ঘটনা নিয়ে রবিবার বেলায় একপ্রস্থ সাংবাদিক সম্মেলন করেছিল বিজেপি। মুকুল রায়, স্বপন দাশগুপ্তরা একাধিক অভিযোগ তুলেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীর বিরুদ্ধে। দুপুর তিনটের পৌনে এক ঘণ্টার সাংবাদিক সম্মেলন থেকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন। সেই সঙ্গে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে না পেরেই, তাঁর স্ত্রীকে হেনস্থা করা হয়েছে। এতে দিল্লির রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে বলেও মনে করেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল প্রার্থী। সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আনারও দাবি জানিয়েছিলেন অভিষেক। সেই সঙ্গে বলেছিলেন, তিনি সমস্ত রকম তদন্তের জন্য প্রস্তুত।
রবিবারের সাংবাদিক বৈঠক থেকে অভিষেক অভিযোগ তুলেছিলেন, কাস্টমস কর্তারা তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন। সেই অভিযোগ উড়িয়ে প্রবীণ সাংবাদিক তথা বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত বলেন, “এমন কোন নির্বোধ কাস্টমস অফিসার আছেন, যিনি ভিআইপি-র স্ত্রীর কাছ থেকে ঘুষ চাইবেন! গল্পের তো একটা সীমা থাকে!”
অভিষেক সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, কাস্টমসের এফআইআর-এ ‘প্রোফাইল’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দু’জন মহিলাকে ‘র্যানডমলি’ ‘প্রোফাইল দেখে’ আটকানো হয়েছে। এই ‘প্রোফাইল’ শব্দটির ব্যাখ্যা কী? এ দিন বিজেপি-র তরফে বলা হয়, এটা সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল নয়। তাঁর বুঝতে অসুবিধে হলে কাস্টমস সেই দায় নেবে না।
প্রসঙ্গত, রবিবার অভিষেক দাবি করেছিলেন, ওই রাতে রুজিরা এবং তাঁর সঙ্গে থাকা মহিলাকে গ্রিন চ্যানেল থেকে রেড চ্যানেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সাংবাদিক বৈঠকের একটি অংশেই আবার তিনি বলেছিলেন, তিনি রাজনীতি করেন বলে তাঁর কিছু নিরাপত্তার অসুবিধে থাকতে পারেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী কখনই ভিআইপি ট্রিটমেন্ট নেন না বা নিতে পছন্দও করেন না। এ দিন বিজেপি-র তরফে বলা হয়, বিমানবন্দরে দুটিই চ্যানেল থাকে। একটি ভিআইপিদের জন্য অন্যটি সাধারণ মানুষের জন্য। তিনি যদি ভিআইপি ট্রিটমেন্ট না-ই নেন, তাহলে গ্রিন চ্যানেল ব্যবহার করছিলেন কেন? বাংলার পুলিশকে তৃণমূলের পার্টিজান বলেও কটাক্ষ করেন স্বপনবাবু।
এ দিনের বিজেপি-র সাংবাদিক বৈঠকের পর দুপুর পর্যন্ত তৃণমূল বা অভিষেকের তরফে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে, অভিষেক-ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, অভিযোগ তো তোলা হয়েছে কাস্টমসের বিরুদ্ধে। তাহলে বিজেপি কেন এত আগ বাড়িয়ে কাস্টমসের হয়ে সাফাই দিচ্ছে? এতেই তো পরিষ্কার দিল্লির চাপেই এই ঘটনা ঘটেছে।