(গত পর্বের পর)http://ritambangla.com/state/a-review-on-seventeenth-lok-sabha-election-fourth-part/
অবশেষে আমরা এই সমীক্ষা ভিত্তিক আলোচনার শেষ পর্বে এসে পৌছেচি। বত্রিশটি আসন সম্পর্কে আলোচনা হয়ে গেছে, বাকি রয়েছে মধ্যবঙ্গের দশটি আসন- জঙ্গীপুর, মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর, বোলপুর, বর্ধমান-দুর্গাপুর, বর্ধমান পূর্ব, আরামবাগ, হুগলী, কৃষ্ণনগর এবং রাণাঘাট। নমিনাল ট্রেন্ড অনুযায়ী (সারণী পশ্য) দশটি আসনের মধ্যে দশটিতেই তৃণমূল জয়ী হবে। এবার বিচার্য প্রার্থীভিত্তিক আলোচনায় কোন আসনে বিরোধীদের জয়ের সম্ভাবনা আছে কিনা।
প্রথমে শুরু করি মুর্শিদাবাদ দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে অধীর চৌধুরীর গড় বলে পরিচিত মুর্শিদাবাদে সম্ভবতঃ এবারেই অধীর দুর্গের পতব ঘটবে। মাসাধিক কাল ধরে মুর্শিদাবাদের (এবং মালদার) কং-সিপিএম দ্বারা জয়ী আসন গুলোতে পরস্পরের প্রার্থী দেওয়া নিয়ে নানাবিধ চাপানউতোর চলেছে এবং শেষ অবধি সমঝোতা ভেস্তে গেছে। অঙ্ক বলছে তাতে ফলাফলের কোন হেরফের হয় নি। গতবারেই জঙ্গীপুর আসনে কংগ্রেসের অভিজিত বাবু মাত্র দু হাজার ভোটে জিতেছিলেন। এবারে তাঁর হার প্রায় নিশ্চিত। মুর্শিদাবাদেও বাম প্রার্থীর এবারে পরাজয়ের সম্ভাবনাই বেশী। এমনকি অধীরের খাস তালুক বহরমপুরেও এবার তৃণমূল বহু শতাংশে এগিয়ে থাকবে।
এর পাশাপাশি বোলপুর, দুর্গাপুর, বর্ধমান-পূর্ব বা আরামবাগ নিয়েও আলোচনার অবকাশ কম। প্রতিটিতেই তৃণমূল নিরঙ্কুশ ভাবে জয়লাভ করবে। কিন্তু বিজেপির যদি ৩০% ভোট পায় তাহলে তা আগামী বিধান সভা নির্বাচনের জন্য তৃণমূলের শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে থাকবে। হুগলী জেলার অপ্র আসন হুগলীতে আপাত ভাবে রত্না দে নাগের জয় সুনিশ্চিতই ছিল। কিন্তু এই আসনে অন্য রঙ যোগ করেছে বিজেপির মহিলা মোর্চার লড়াকু নেত্রী চিত্রাভিনেত্রী লকেট চ্যাটার্জীর মনোনয়নে। লকেট চ্যাটার্জী বেশ কয়েক বছর ধরে সঙ্গঠনের সঙ্গে যুক্ত। জনশ্রুতি তিনি নিজেই এই আসনে লড়তে চেয়েছেন। ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মা আর সাংগঠনিক দক্ষতার জোরে তিনি যদি তৃণ্মূল ও বাম থেকে ৩-৪% এর ভোট স্যুইং আনতে পারেন তাহলে হুগলীতে এক বিস্ময়কর জয় পাবে বিজেপি।
তুলনামূলক ভাবে তৃণমূলের অনেক কঠিন লড়াই রানাঘাট আর কৃষ্ণনগরে। স্বাভাবিক ট্রেন্ডে এখানে তৃণ আর পদ্মের মধ্যে ভোট পার্থক্য মাত্র ৫% আর ১%। তৃণমূল বাধ্য হয়েছে উভয় ক্ষেত্রে জয়ী প্রার্থীদের পরিবর্তন করতে। কিন্তু রাণাঘাটে প্রার্থী বাছায়ের ক্ষেত্রে অসাধারণ মুন্সীয়ানা দেখিয়েছেন মমতা। যদি বা বিজেপি প্রার্থী শেষ সময়ে স্যুইং এনে রানাঘাট বার করে আনতে পারতো, নিহত বিধায়কের স্ত্রী ভোটে দাঁরানোয় সহানুভূতি জনিত ভোটে সেই ক্ষতি প্রশমিত হয়ে যাবে। একটি অতি সম্ভাবনাময় আসন মমতা ব্যানার্জীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় বিজেপির হাতছাড়া হলো। অপরদিকে কৃষ্ণনগর আসনটিতে বিজেপির এবারে জেতার সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। কৃষ্ণনগর এর আগেও বিজেপি প্রার্থী জলুবাবুকে জিতিয়েছে। এবারে সে পদ্মের হাত ধরবে কিনা তাই দেখার। (পরিবর্তিত ভোট শতাংশ সারণীতে (7A ও 7B) দেওয়া হলো)
অর্থাৎ বিজেপি সর্বাধিক জিততে পারে ২টি আসনে, তৃণমূল ন্যূনতম ৮টি আসনে। সব মিলিয়ে ৪২ আসনের পর্যালোচনা শেষে তৃণমূল – ২৩-৩৯, বিজেপি ৩-১৮, কংগ্রেস ০-১, বামফ্রন্ট ০। এই আলোচনা এইখানেই শেষ করা উচিত কিন্তু পাঁচ পর্ব ধরে আপনাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটিয়ে ৩-১৮ বা ২৩-৩৯ এই বিস্তীর্ণ রেঞ্জ রেখে সমীক্ষা শেষ করলে আপনারা নির্ঘাত আমাকে রাস্তার মোড়ে উন্নয়ন দেখিয়ে দেবেন। কাজেই এই পর্যালোচনার একটা সারাৎসার করা প্রয়োজন এবং প্রেডিকশনের রেঞ্জকে সীমায়িত করাও দরকার। সেই উদ্দেশ্যে প্রথমে আপনাদের সামনে তুলে ধরছি চিত্র ১ কে যেখানে আপনারা ৪২ টি আসনের মধ্যে কোনটির পাল্লা ঝুঁকে তৃণমূলের দিকে (সবুজ) , কোনটি বিজেপির দিকে (গেরুয়া) আর কোনটি কংরেসের দিকে (নীল) দেখানো হয়েছে এবং কোন আসন অনিশ্চিত তাও দেখানো হয়েছে (সাদা রং)। সেই হিসেবে তৃণমূল- ১৭, বিজেপি -৬, কংগ্রেস-১, অনিশ্চিত -১৮।
Probability সূত্র মেনে যদি একই আনুপাতিক হার গ্রহণ করা হয় তাহলে অনিশ্চিতদের মধ্যে ৫ টি বিজেপি এবং ১৩ টি তৃণমূল। সব মিলিয়ে তৃণমূল ৩০, বিজেপি ১১, কংগ্রেস ১।
দুঃখিত এই সমীক্ষা বামেদের কোন আশার কথা শোনাচ্ছে না।
ড: অভিষেক অধিকারী।
সহকারী অধ্যাপক,আই আই টি