গতকাল ২৭শে এপ্রিল ছিল ১৯৭১ এ পূর্ববঙ্গে জলঢাকার হিন্দু গণহত্যার দিন

৭১ এর মুক্তি যুদ্ধের আড়ালে  হিন্দু গণহত্যা কি  সুপরিকল্পিত ভাবে ছিল ?

রাজাকার আলাবদর জামাতি এরা তো সব বাংলা ভাষী মুসলিম ছিল এরাই খান সেনাদের সাহায্য করেছিল এবং এরা বেছে বেছে হিন্দু প্রধান অঞ্চলে পাক বাহিনীকে নিয়ে গিয়ে বাঙালি হিন্দুদের হত্যা করিয়েছিল। মুক্তি যুদ্ধে নিহত ৩০ লক্ষের মধ্যে ২৪ লক্ষ হিন্দু ছিল। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত থেকে আলাদা হয়ে পূর্ববঙ্গ গঠিত হয় পূর্বপাকিস্তানে। তার পর নানা অছিলায় পূর্ববঙ্গ থেকে হিন্দু বিতাড়ণ খুন হিন্দু মহিলাদের ইজ্জত লুণ্ঠন জোর করে ধর্ম পরিবর্তন চলতেই থাকে। ৭১ এর মুক্তি যুদ্ধে এক কোটি মানুষ পূর্ববঙ্গ থেকে পালিয়ে এসে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেয় যার মধ্যে ৯০ % ছিল হিন্দু। কি হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৭ এ এপ্রিল  নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গোলনা কালীগঞ্জ (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু বাজার) স্থানীয় রাজাকার-আলবদরদের চক্রান্তে তিন শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবারের মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়।

সেদিন ছিল ২৭ এপ্রিল মঙ্গলবার বেলা প্রায় ১১টা। বালাগ্রাম ইউনিয়নের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকারী ও শীল পরিবারের সদস্যরা শরণার্থী হিসেবে ভারতে যাওয়ার পথে উপজেলার গোলনা ইউনিয়নের কালীগঞ্জে গেলে পার্শ্ববর্তী ডোমার থেকে চারটি কনভয়ে পাকিস্তানি বাহিনী এসে তাদের ঘেরাও করে। এরপর নারী-পুরুষ ও শিশুদের পৃথকভাবে সারিবদ্ধ করে ব্রাশফায়ার করলে মুহূর্তেই তিন শতাধিক নিরস্ত্র শরণার্থী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

সেদিনের ঘটনা সর্ম্পকে অমর চন্দ্র অধিকারী জানান পাকসেনা রাজাকার ও আলবদরের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল গোলনা ইউনিয়নের তিনি সহ প্রায় ৪০০ নারী-পুরুষ নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছিলেন। বেলা ১২টার দিকে নারী-পুরুষের দলটি কালীগঞ্জ নামক স্থানে পৌঁছলে আকস্মিকভাবে পাকসেনাদের ৪-৫টি গাড়ি সেখানে উপস্থিত হয়। রাজাকারসহ পাকসেনারা গাড়ি থেকে নেমে সবাইকে ঘিরে ফেলে। বেছে বেছে পুরুষদের ও নারীদের পৃথক করা হয়। এরপর পুরুষদের দাঁড় করে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে। এ নির্মম হত্যাকান্ড ঘটিয়ে গাড়ি নিয়ে জলঢাকা থানা সদরে পৌঁছায় হানাদার সেনাবহর। সেখান থেকে পিস কমিটির সদস্যের ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে লাশ মাটিচাপা দেয়া হয়। সে সময়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র অমর চন্দ্র অধিকারী ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। পিস কমিটির সদস্যেরা যখন সকল কে মাটি চাপা দিয়ে চলে যায় তখন তিনি মাটি ভেদ করে রাতে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় তিনশত হিন্দু পরিবারের পুরুষদের সাথে তার বাবা ও দাদা নিহত হয় পাকসেনাদের হাতে। বর্তমানে ওই ইউনিয়নের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন অমর চন্দ্র অধিকারী। জলঢাকা উপজেলা পরিষদের আর্থিক সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কালীগঞ্জ বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে।দুর্ভাগ্য উদ্বাস্তু হয়ে এপার বাংলাতে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসা বাঙালি হিন্দু পূর্ববঙ্গে ঘটে যাওয়া বাঙালি হিন্দু গণহত্যার ঘটনা গুলো ভুলে গেছে ।

সৌমেন ভৌমিক 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.