ইস্টবেঙ্গলকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন প্রবাসী বাঙালি শিল্পপতি, ৫০ শতাংশ শেয়ার কিনতে আগ্রহী

এই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) সমর্থকদের কাছে এর থেকে বড় খবর, আর কিছু হতেই পারে না। ইনভেস্টর পেয়ে অবশেষে আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পেতে চলেছে লাল-হলুদ। জাকার্তার বাঙালি শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়কে মনে আছে? আশিয়ান কাপ (Asean Cup) খেলতে যাওয়া দলের কোচ, প্রতিটা ফুটবলার থেকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব কর্তারা, আশিয়ান জয়ের পিছনে তাঁর অবদান বোধহয় কোনওদিন ভুলতে পারবেন না। আশিয়ান জয়ী দলকে নিজের হোটেলে রাখা ছাড়াও একটা দলের যাবতীয় প্রস্তুতির জন্য যা যা সাপোর্ট সিস্টেম লাগে, কলকাতার তালতলা অঞ্চলে বড় হওয়া প্রসূন মুখাপাধ্যায় (Prasoon Mukherjee) তার সবরকম ব্যবস্থা করেছিলেন জাকার্তায় বসে। সেই বাঙালি শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়, ফের ইস্টবেঙ্গলের সংকটের মুহূর্তে এগিয়ে এলেন ত্রাতা হিসেবে। ক্লাবের ইনভেস্টর হয়ে। তাঁর ‘ইউনিভার্সাল সাকসেস এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড’-এর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে আর্থিক লগ্নি করতে রাজি হয়ে গিয়েছেন তিনি।

জাকার্তা থেকে ফোনে এ দিন প্রসূন বললেন, “আইনি প্রক্রিয়া চলছে। যা দেখছেন আমার আইনজীবীরা। সেগুলো মিটে গেলেই ইস্টবেঙ্গলের মেজর শেয়ার কিনে নেওয়ার জন্য আর্থিক বিনিয়োগ করছি আমি।” কোয়েস চলে যাওয়ার পরে অনেকদিন ধরেই দেশে বিদেশে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছিলেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। তবে কথা বলতে গিয়ে বুঝেছিলেন, এই আর্থিক সংকটের সময়ে পেশাদারি ঢংয়ে কোনও সংস্থাই এগিয়ে আসবে না ইস্টবেঙ্গলের পিছনে আর্থিক বিনিয়োগ করতে। সেই সংস্থাই এগিয়ে আসবে, যাদের কাছে ইস্টবেঙ্গল নামটার সঙ্গে আবেগ জড়িয়ে আছে। এই ভাবনা থেকেই বাংলাদেশের এক বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে অনেকদূর কথা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন লাল-হলুদ কর্তারা। যদিও শেষ মুহূর্তে আইএসএল খেলার জন্য প্রতিবছর ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে রাজি হননি সংস্থার কর্তারা। ইস্টবেঙ্গল কর্তারা তখন বুঝে যান, এভাবে কোনও একটা সংস্থার থেকে এই মুহূর্তে এত বড় অঙ্কের অর্থ পাওয়া যাবে না। তখন থেকেই ভাবনা শুরু হয়, একটা বড় সংস্থাকে ধরে ক্লাবের মেজর শেয়ার তাঁকে দিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি ছোট ছোট কিছু স্পনসর নিয়ে বাকি আর্থিক সমস্যাটা মেটানো হবে। সেভাবেই সিঙ্গাপুর এবং জাকার্তার শিল্পপতি প্রসূন মুখোপধ্যায়ারে নামটা মনে আসে লাল-হলুদ কর্তাদের। যিনি আশিয়ান কাপের সময় ইস্টবেঙ্গলকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসা ছাড়াও, সালিম গোষ্ঠীকে সঙ্গী করে এই রাজ্যে বিনিয়োগ করার জন্য অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিলেন। এবারও শোনা যাচ্ছে, সালিম গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্খাকে নিয়ে লাল-হলুদে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসছেন তিনি। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ব্যপারে বাকিটা ওঁর মুখ থেকেই শুনে নেওয়া যাক।

সেই আশিয়ানের সময় থেকেই ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছি। জাকার্তায় এসে বাংলার কোনও ফুটবল ক্লাব চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে, অনাবাসী ভারতীয় হিসেবে এই ঘটনাটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের ছিল। তাই নীতু (দেবব্রত সরকার) যখন আমাকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে বিনিয়োগ করার প্রস্তাব দেন, রাজি হয়ে যাই আমি।”কিন্তু কতদূর হয়েছে চুক্তির প্রক্রিয়া? জাকার্তা থেকে ফোনে প্রসূন যোগ করেন, “আগের কোম্পানি থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ পেয়ে স্পোর্টিং রাইটস ফিরে পাওয়ার একটা ব্যাপার আছে। ততদিন আমি কিছুই করতে পারব না। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে বলেছি, আগে আইনি সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলুক। তারপর পরিকল্পনা মতো ক্লাবের মেজর শেয়ার কিনে নেবে আমার কোম্পানি।” ফলে বল এখন ক্লাবের কোর্টে। কাগজপত্র ঠিক ভাবে দেখেই তিনি বিনিয়োগ করতে এগোবেন। ইস্টবেঙ্গলের কত শেয়ার তিনি নিচ্ছেন, পুরো ব্যাপারটা এখনও আলোচনার স্তরে আছে তিনি বললেও, ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্লাব চাইছে ৫১ শতাংশ শেয়ার নিজেদের দখলে রাখতে। প্রসূন বাবুও চাইছেন ক্লাবের থেকে বেশি শেয়ার। তবে শেষ পর্যন্ত হয়ত প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে ক্লাবের পঞ্চাশ শতাংশ শেয়ার। কিন্তু পঞ্চাশ শতাংশ শেয়ারের জন্য প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের ‘ইউনিভার্সাল সাকসেস এন্টার প্রাইজেস লিমিটেড’-এর আর্থির বিনিয়োগের পরেও বাকি টাকাটা আসবে কী ভাবে?

ফেডারেশন সূত্রে খবর, ইস্টবেঙ্গল কর্তারা ফেডারেশন কর্তাদের বলেছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভয় দিয়েছেন, রাজ্য সরকারের যে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থাগুলি রয়েছে, তার বেশ কয়েকটি সংস্থা থেকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে স্পনসরশিপ করা হতে পারে। ফলে প্রসূন মুখোপাধ্যায় এবং রাজ্য সরকারের সহায়তায় বিভিন্ন স্পনসরারদের একটা সংস্থা তৈরি করে আর্থিক সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে ইস্টবেঙ্গল। যার প্রাথমিক লক্ষ্য, আইএসএল খেলা। যদিও এই মুহূর্তে তা বেশ কঠিন ব্যাপার। প্রথমত কোয়েস থেকে বিচ্ছেদের ছাড়পত্র পেতে এখনও আইনি জটিলতা রয়েছে। এবং বিভিন্ন ঘটনায় দু’পক্ষের সম্পর্কটা মারাত্মক তিক্ত হয়ে রয়েছে। ফলে যা হবে সব আইনি ভাবে। এর সঙ্গে রয়েছে, প্রসূন বাবুকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া। তারপর বিভিন্ন ছোট স্পনসরদের একত্রিত করে তাদের আর্থিক বিনিয়োগের কাগজপত্র তৈরি। তার উপর প্রসূন মুখোপাধ্যায় যদি ক্লাবের আগে তাঁর ‘ইউ এস এ এল’ সংস্থাটির নাম জুড়তে চান, তাহলে আইএসএলে খেলা সম্ভব হবে না। এরকম হাজার একটা ছোট খাট আইনি প্রক্রিয়া জড়িয়ে আছে, যেগুলি সমাধান করা যথেষ্ট সময়সাধ্য ব‌্যাপার। যা জানেন প্রসূন মুখোপাধ্যায় নিজেও। বললেন, “দেখুন, চেষ্টা তো করবই এবারেই আইএসএল খেলার। তবে এবার না হলেও পরেরবার নিশ্চয়ই খেলব। এই মরশুমে আইএসএল না খেলতে পারলেও, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে বিনিয়োগ করছি আমি।” মুখে না বললেও হয়তো সঙ্গে সালিম গোষ্ঠীকে সঙ্গী করে। মুখ‌্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবরকমভাবে চেষ্টা করছেন, ইস্টবেঙ্গলকে এই অন্ধকার অবস্থা থেকে আলোর রাস্তায় নিয়ে আসতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.