টোকিওয় ভারতের সুদীর্ঘ ইতিহাসের দ্বিতীয় ব্যক্তিগত সোনা এনে দিয়ে বর্তমানে গোটা দেশের নয়নের মণি নীরজ চোপড়া। গোটা দেশের শুভেচ্ছায় ভাসছেন এই তরুণ জ্যাভলিন থ্রোয়ার। তবে এক জ্যাভলিন থ্রোয়ার যখন প্রচারের আলোয় জ্বলজ্বল করছেন, তখনই ভারতকে সোনা এনে দেওয়া আরেকজন সেই আলো থেকে বহু দূরে।
রাজস্থানের দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়া, প্যারালিম্পক্সে একবার নয়, ভারতকে দুই দুইবার সোন এনে দিয়েছেন জ্যাভলিন থ্রোয়েই। শুধু তাই নয়, তাঁর দখলে রয়েছে বিশ্বরেকর্ডও। তবে টোকিওয় ২৪ অগস্টে থেকে শুরু হতে চলা প্যারালিম্পক্সের প্রস্তুতি সারছেন তিনি প্রচারের থেকে সহস্র যোজন দূরে। সোনা জয়ের পর দেবেন্দ্রকে নিয়ে মাতামাতি হলেও, তা ছিল সামান্য় সময়ের। দিন পেরোতেই আবার যেই কে সেই।
The Wall-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেবেন্দ্র আফসোস করে জানান, ‘আমাদের দেশের ছেলে নীরজ সোনা জিতে দেশকে গর্বিত করছে। এতে যেমন আমার আনন্দ হচ্ছে, তেমনই কিছু কথা শুনে বেশ কষ্টও পেয়েছি। অনেকে বলছেন এটাই নাকি জ্যাভলিনে দেশের প্রথম সোনা, তারা সঠিক তথ্যটা জানেন কিনা আমার সন্দেহ রয়েছে।’
ছোটবেলায় বিদুৎ-এর তার জড়িয়ে শক খাওয়ার পর থেকেই বাঁ-হাত অকেজ। তবে এক হাত দিয়েই ইতিহাস রচনা করে চেলেছেন বছর ৪০-র এই অ্যাথলিট। ২০০৪ সালে এথেন্সে এফ৪৬ ইভেন্টে বিশ্বরেকর্ড গড়ে সোনা জেতেন দেবেন্দ্র। ২০১৬ সালে রিওতে নিজেরই রেকর্ড ভেঙে ৬৩.৯৭ মিটার ছুঁড়ে নয়া রেকর্ড ও প্যারালিম্পিক্স গোল্ড জেতেন দেবেন্দ্র। টোকিওয় যাওয়ার আগে কোয়ালিফায়ারে ৬৫.৭ মিটার থ্রো করে আবারও এক নতুন রেকর্ড গড়েন তিনি। তবে তা সত্ত্বেও সেই নিয়ে কারুর বিশেষ হেলদোল নেই।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে সাফল্য লাভের পরেও পর্যাপ্ত স্বীকৃতি না পাওয়ায় খানিকটা হতাশার সুর দুই বারের প্যারালিম্পিক্স চ্যাম্পিয়নের গলায়। ‘আসলে প্যারালিম্পক্সকে কেউ তেমন গুরুত্ব দেয়না। তবে সঠিক প্রচার করতে ও সকল খেলার উন্নতি করতে না পারার জন্য এক্ষেত্রে অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারাও সমান দায়ী।’ আক্ষেপ দেবেন্দ্রর।
তবে শত আক্ষেপের মাঝে নীরজের জন্য ভীষণ খুশি তিনি। পাশাপাশি এক সোনা জয়ী দেশের নতুন সোনাজয়ীর উদ্দেশ্য়ে সতর্কবার্তাও দিয়ে রাখেন। দেবেন্দ্র জানান, ‘এখনও অবধি কথা না হলেও শীঘ্রই নীরজের সঙ্গে কথা হবে। আমি ওর উদ্দেশ্যে বলব এখন থেকেই ও যেন প্যারিস অলিম্পিক্সের ভাবনা মাথায় রেখে প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। সোনা জয়ের পর জীবনে অনেক প্রলোভন আসবে, সেইসবকে দূরে রেখেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে নীরজকে।’ নীরজের মতো দেবেন্দ্রও যেন টোকিও থেকে সোনা নিয়ে ফেরেন, সেটাই চাইবেন সবাই।