দেশ জুড়ে বলরাম জয়ন্তী, কৃষি দেবতার আরাধনায় রাজ্যও

আজ ভাদ্রের শুক্লা ষষ্ঠী, বলরাম জয়ন্তী, ভগবান কৃষ্ণের অগ্রজ ভগবান বলরামের শুভ আবির্ভাব তিথি। ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ দ্বারা পালিত ভারতীয় কিষান দিবস । সম্বৎসর যে কৃষক আপন পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে আপন শ্রমের মূল্যে ফসল ফলান, অন্নপূর্ণার ভাণ্ডার পরিপূর্ণ করেন, আজ তাদের প্রতি মরমী-শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন। এক অরাজনৈতিক বাতাবরণে সারা দেশের মানুষ এতে সামিল হবেন, আশা করে ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ।

ভগবান বলরামকে আমরা মহাভারতে এক নিরপেক্ষ চরিত্র হিসাবে পর্যবেক্ষণ করি। তিনি গদাযুদ্ধ শিখিয়েছেন ভীম এবং দুর্যোধন উভয়কেই, অথচ কুরুক্ষেত্রের ধর্মযুদ্ধে কোনো পক্ষই অবলম্বন করলেন না। তিনি হলধর, হলায়ুধ; কৃষি ও কর্ষণের জন্য নিবেদিত-প্রাণ অবতার। যুদ্ধ আসবে, যাবে; সংঘর্ষ এক সময় থেমে গিয়ে শুভঙ্করী বোধ ও শক্তির জয় হবে; কিন্তু কৃষি উৎপাদনের ধারা থেমে থাকার নয়, তাহলে খাদ্যের অভাবে সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে। এই বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন ভগবান বলরাম। তাঁর গোষ্ঠী-নিরপেক্ষ, ধর্ম-নিরপেক্ষ চরিত্র থেকে এটাই শেখার যে, ভারতীয় কৃষকের সমৃদ্ধশালী অবস্থান ও উন্নয়নে রাজনীতি-বর্জিত কৃষক-ঐক্য কতটা জরুরি। সনাতনী চেতনায় এই ঐক্য ও সমন্বয়ের কাজ করেছিলেন বলেই ভগবান বলরাম আজও আমাদের আরাধ্য, আমাদের প্রেরণা। কৃষকের আপন সৌকর্যে প্রতিষ্ঠা পেতে হলে রাজনীতির বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে, সমগ্র দেশের কৃষক যেন একটি অখণ্ড ভারতভূমির পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হন। গ্রামবিকাশে একাত্ম মানব দর্শনের এই ধারা আমরা ভগবান বলরামের কাছ থেকেই পেয়েছি, লোকবিশ্বাস এমনতরো। ভারতীয় কৃষি উন্নয়ন ও গ্রামবিকাশে তারই আশীর্বাদ আমাদের পাথেয় হয়ে থাক, এই প্রার্থনায় সারা ভারতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও আজ যথোচিত মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে পালিত হচ্ছে বলরাম জয়ন্তী। কালিম্পং থেকে কাকদ্বীপ সকল স্থান থেকে বলরাম জয়ন্তী উৎযাপনের শুভ সংবাদ এসেছে ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের দপ্তরে

লকডাউনের মধ্যে আপন আপন গৃহে, পারিবারিক পরিমণ্ডলে আয়োজিত হয়েছে দেব আরাধনা। আয়োজন হয়তো সামান্য, নৈবেদ্য হয়তো নগণ্য, তবুও তাতে উৎসাহের বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই। কেউ সাজিয়েছেন মিছরি-মাখন, কেউবা সামান্য ফলমূল, বাতাসা-কদমা; মোদক-লাড্ডু দিয়েও ভগবানকে নিবেদন করেছেন বাংলার কৃষক ও কৃষি সংগঠকের একটি বড় অংশ। একমাস পূর্বে থেকেই এই দিনটি পালনের জন্য রাজ্যব্যাপী প্রচার চালিয়েছে ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ। যারা কৃষিপণ্যের ভোক্তা, তারাও আজ ভগবানকে জানিয়েছেন আপন ভক্তি-শ্রদ্ধা — “আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে।” কোথাও গ্রামের ছেলেটিকে বলরামের সাজে সাজিয়ে দিয়েছেন তার মা; কোথাও বাড়ীর মাথায় উড়েছে গেরুয়া পতাকা, তাতে অখণ্ড ভারতভূমির মানচিত্রে এক সঞ্চারণশীল লাঙ্গল; কোথাও পাঠ হয়েছে ভগবানের ঐশীকথা; কেউ গেয়েছেন গোঠের গান; শিল্পীরা এঁকেছেন বলরামের ছবি; কয়েকদিন ধরেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভগবান বলরাম বিষয়ক ওয়েবিনার। দেশের মাটি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়েছে বলরাম বিষয়ক ডকুমেন্টারি ভিডিও। তাতে বলরামের কৃষি সম্পৃক্তি সম্পর্কে বক্তব্য রেখেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. লিপি ঘোষ, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. মনাঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আজকের পুণ্যদিনে ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের কলকাতা জেলা কমিটি গঠন হবে, জানিয়েছেন জেলা কমিটির আহ্বায়ক স্নেহাংশু চক্রবর্তী। ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের কল্যাণ বিকাশ খণ্ডের পক্ষে পীযূষ কান্তি ঘোষ জানিয়েছেন, নানা জায়গা থেকে প্রাপ্ত আনন্দ-ঘন উৎযাপনের ছবি-ভিডিও, কাব্য-কথ্য-ভাষ্যে তৈরি হবে একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও। কালিম্পং থেকে অখিল ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের কার্যকর্তা ভানু থাপা জানিয়েছেন, পাহাড়ের নানান জায়গায় গৃহের অভ্যন্তরেই ভগবানকে স্মরণ-মনন করেছেন বহু মানুষ৷ তার আনন্দচিত্রও ধরে রেখেছেন তারা। বর্ধমানের জামালপুর থেকে সম্পাদক সুজিত কাপাসী এক অডিও বার্তায় রাজ্যবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রায়না থেকে সন্তু যশ জানিয়েছেন, সেখানকার উচিতপুর গ্রামের কৃষকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে দিনটি উৎযাপন করছেন। পুরুলিয়া থেকে গঙ্গাধর তিওয়ারি জানিয়েছেন, উদযাপনের সংবাদ ও চিত্র।পুরুলিয়ার কোটশিলার মাজদিয়া গ্রাম থেকে উজ্জ্বল মাহাতো সেখানের মানুষের ব্যাপক সাড়ার দেওয়ার বার্তা পাঠিয়েছেন। সবমিলিয়ে এক উৎসব-ঘন দিন আজ বাংলায়। শিল্পী শীর্ষ আচার্যের আঁকা ভগবান বলরামের ছবি দেশ জুড়ে ভাইরাল হয়েছে। বহু মানুষ তার মোবাইল ও ল্যাপটকে শীর্ষের আঁকা ছবিতে ভক্তিশ্রদ্ধা জানাচ্ছেন, এ খবর পাঠিয়েছেন। আশাকরা যায় কয়েক হাজার গ্রাম থেকে, নানান শহর ও শহরতলী থেকে উদযাপনের শুভ সংবাদ রাতের মধ্যে পৌঁছবে কিষান সঙ্ঘের দপ্তরে।

ড. কল্যাণ চক্রবর্তী (Dr. Kalyan Chakraborty)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.