বর্দ্ধমান – দেবগ্রাম ও বিক্রমপুরের কিছু কথা -তৃতীয় পর্ব

Terracotta Art Works On The Temple Walls Of Lalji Temple Of Kalna ...

তৃতীয় পর্ব

গঙ্গাবীচিপ্লুত পরিসরঃ সৌধমালাবতংসো

বাস্যতুচ্চৈ স্তুয়ি রসময়ো বিস্ময়ং সুহ্ম দেশঃ।

অর্থাৎ, ‘যে-দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল গঙ্গাপ্রবাহের দ্বারা প্লাবিত হয়, যে দেশ সৌধশ্রেণীর দ্বারা অলংকৃত, সেই রহস্যময় সুহ্মদেশ তোমার মনে বিশেষ বিস্ময় এনে দেবে।’ 

খ্রিস্টীয় ৮ ম ও ৯ ম শতাব্দীতে সমগ্র রাঢ়দেশ শূর বংশীয় নৃপতিদের অধিকার ভুক্তছিল। তৎপরে পালরাজ গণের প্রভাব বিস্তারের সঙ্গে তাঁদের অধিকার ভুক্ত স্থান উত্তররাঢ় এবং শূর ও দাস বংশ অধিকারভুক্ত স্থান দক্ষিণ রাঢ় নামে পরিচিতি হয়। বর্তমান বর্দ্ধমানের উত্তরাংশ ও মুর্শিদাবাদে আজও উত্তর রাঢ়ীয়দিগের আদি সমাজ স্থান এবং বর্দ্ধমান জেলার দক্ষিণাংশে , হুগলী ও ২৪ পরগনা মধ্যে দক্ষিণরাঢ়ীয়দিগের সমাজ স্থান নির্দিষ্ট হয়ে থাকে । বর্দ্ধমানস্থ শূরনগর , প্রদু্্যম্নপুর , গড়মন্দারণ নামক স্থানে বিভিন্ন শূররাজের এবং হুগলীর ভুরসুট নামক স্থানে দাস বংশের এবং তৎপরে রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণরাজ বংশের রাজধানীর চিন্হ বিদ্যমান।

রাঢ় ভূমি , যুগ যুগ ধরে তন্ত্র সাধনা এখানে প্রচলিত ।  পূর্বেই বলেছি যে রাঢ় বঙ্গ গৌড় হতে পৃথক ছিল না। তাছাড়া স্কন্দপুরাণে পঞ্চ গৌড়ের উল্লেখ আছে । 

সারস্বতা কান্যকুব্জা উৎকল মৈথিলাশ্চ যে

গৌড়াশ্চ  পঞ্চব্য চৈব – পঞ্চগৌড়া প্রকীর্তিতা।।

সারস্বত কনৌজ উৎকল মিথিলা ও গৌড়ের অধিবাসী ব্রাহ্মণদের পঞ্চগৌড়া বলে অভিহিত হন। কুর্ম্ম এবং লিঙ্গ পুরাণেও গৌড়ের উল্লেখ আছে। 

নির্মিতা যেন শ্রাবস্তী গৌড়দেশে দ্বিজোত্তমা।

স্কন্দপুরাণের সহ্যাদি খণ্ডে বর্ণিত হয়েছে যে,  কুরুক্ষেত্র এবং গৌড় সরস্বতী নদীর তীরে অবস্থান করছে। নানা শিলালিপি ও তাম্রশাসনে সেই গৌড়ের উল্লেখ আছে। গৌড় চেদি, মালব, বেরার সীমান্ত অবধি বিস্তার লাভ করেছিল। 

পাণিনি বলেছেন – অরিষ্ক গৌড় পূর্বে চ ….

শক্তি সংগম তন্ত্রে বলা হয়েছে। – 

বঙ্গদেশং সমারভ্য ভুবনেশান্তগং শিবে।

এহেন সুপ্রাচীন রাঢ় তথা গৌড় বঙ্গের সুপ্রাচীন সনাতন ধর্ম তার সকল মান ও ঐতিহ্য নিয়ে অবস্থান করত। সেখানে নিরাকার রূপে প্রকৃতির উপাসনা হতে সিদ্ধ তন্ত্রপীঠ সকলের অবস্থান ছিল একাধারে। সেখানে অবস্থান ছিল ত্রিকালজ্ঞ মুনি ঋষিদের তপোবনের। সেই রাঢ় তথা গৌড়ে জন্ম হয়েছিল সুপ্রাচীন তন্ত্র সাধনার। 

গৌড়ে প্রকাশিতা বিদ্যা , মৈথিলৈঃ প্রবলীকৃতা।

ক্কচিৎ , ক্কচিন্মরাষ্ট্রে গুর্জরে প্রলয়ং গতা।।

পূর্বকালে এতদঞ্চলে যেমন বৈষ্ণব এবং বৈষ্ণবমার্গীয়দের প্রভাবাধিক্য ছিল তেমনই শক্তিসাধক সম্প্রদায়ের প্রভাবও বড় কম ছিল না । তাঁরাও কালীকীর্তনে ধর্মজগৎ কম্পিত করে সিংহের ন্যায় ধরা বিচরণ করত। শাক্ত মহাত্মাগনের নাম এবং সাধন স্থানে বহু নিদর্শন সিদ্ধপীঠ , উপপীঠ নাম ধারণ করে আজও বিরাজ করছে ।

পরবর্তীকালে বৌদ্ধ ধর্মের বজ্রযান শাখাও তন্ত্রভাবাপন হয়ে  পড়ে । ওই সমস্ত বৌদ্ধ তান্ত্রিকগন  রাঢ়ের জঙ্গলাকীর্ণ পশ্চিমাঞ্চলে, মলুটি, তারাপীঠ, ভাবুক ইত্যাদি স্থানে তাদের তন্ত্র সাধনা চালিয়ে যান ।

অতীতে রাঢ় অঞ্চলের পশ্চিম প্রান্ত অরণ্যময় । সেই অঞ্চলটি নানা সাধক, তান্ত্রিক এবং পরবর্তী কালে বৌদ্ধদের প্রভাবাধীন ছিল । জঙ্গলের মধ্যে  তান্ত্রিকগন ছোট ছোট মন্দির তৈরি করে তার ভিতর  তাদের উপাস্য দেবীকে স্থাপন করে গোপনে সাধন ভজন করত। বহু গ্রামেই এই সকল দেব দেবীর প্রস্তর  প্রতিমা দেখতে পাওয়া যায় ।

 ঐতিহাসিক বিনয়তোষ  ভট্টাচার্য্য বলেছেন ” বজ্রযানী বৌদ্ধদের প্রভাব বাংলা বিহার উড়িষ্যায় যথেষ্ট পরিমাণে ছিল। এই সব জায়গায় বৌদ্ধদের দেবদেবীর মূর্তি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। “

ব্রহ্মার মানসপুত্র বশিষ্টদেব সাধন ক্রিয়ার জন্য কামরূপে পাড়ি দেন কিন্তু কামরূপের সাধনার মার্গফল করা সম্ভব নয় দেখে তিনি অঙ্গদেশ ত্যাগ করেন। এরপর তিনি সাধন পদ্ধতির জন্য রাঢ় বাংলায় পাড়ি দেন। রাঢ়দেশে অন্তর্গত বক্রেশ্বরের ঈশান কোন অবস্থিত দ্বারকা নদীর পূর্ব তীরে শ্মশানে প্রতিষ্ঠিত এক পঞ্চমুন্ডির আসনে তিনি গভীর তপস্যায় বসেন এবং সিদ্ধিলাভ করেন। তিনি দেবী উগ্রতাঁরার মাতৃরূপ দর্শন করেন। পরে একই আসনে সিদ্ধিলাভ করেন সাধক বামাক্ষ্যাপা । সেই সিদ্ধস্থানই তারাপীঠ এবং কিরীটেশ্বরী নামে সুপরিচিত। 

এছাড়াও পূর্ব পর্বেই উল্লেখ করেছি যে,  আদিদেব পশুপতি শিবের উপাসনা হত এই প্রাচীন বঙ্গে। বৌদ্ধ জাতকের গল্পে বর্ধমান এবং মেদিনীপুর অঞ্চলে শিবি এবং চেত নামক দুই রাষ্ট্রের উল্লেখ আছে। এই দুই রাষ্ট্রেই শিবপূজার প্রচলনের কথা জানা যায়। এই সব পূজাই হতো প্রাচীন বৃক্ষতলে। রামায়ণ , মহাভারত , পুরানাদিতে , তন্ত্রে নানাভাবে বঙ্গ সহ তার নানা স্থানের উল্লেখ আছে।  রাঢ় অঞ্চলের নানা স্থানে ত্রিকালজ্ঞ মুনি ঋষিদের আশ্রম ছিল এরূপ প্রবাদ আছে। জলন্দার গড়ের কিছু দূরে আঙ্গোরা নামক স্থানের ঋষি অঙ্গীরার আশ্রম ছিল। মুলুকের নিকটবর্তী শিয়ান গ্রামে ঋষ‍্য‍শৃঙ্গ মুনির আশ্রম ছিল । মুলুকের অনতি উত্তরে ঋষ‍্যশৃঙ্গের পিতা বিভান্ডকের আশ্রম ছিল বলে কিংবদন্তি আছে আর বক্রেশ্বরে ছিল ঋষি অষ্টবক্রার আশ্রম। 

রাঢ় দেশ একসময় শৈব এবং শাক্ত গণের লীলাস্থান বলে গণ্য ছিল। তার কারণ ৫১ পীঠের মধ্যে এই রাঢ় বঙ্গেই ৯ টি ডাকর্ণব পীঠ অবস্থিত। কুঞ্জিকাতন্ত্রের ৭ ম পটলে কর্ণসুবর্ণ বা কর্ণস্বর্ণ ,ক্ষীরগ্রাম , বৈদ্যনাথ , বিল্বক , কিরীট , অশ্বপ্রদ বা  অশ্বতীর্থ , মঙ্গলকোট ও অট্টহাস এই আটটি সুপ্রাচীন সিদ্ধপীঠের উল্লেখ আছে।

তন্ত্রচূড়ামণি গ্রন্থে বহুলা, উজাণী, ক্ষীরখণ্ড , কিরীট, নলহাটী , বক্রেশ্বর , অট্টহাস, মন্দিপুর এই ৯ টিকে মহাপীঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  শিব চরিত সংগ্রহ গ্রন্থে অট্টহাস, নলহাটী ও মন্দিপুর উপপীঠ বলে গণ্য হয় এবং সুগন্ধা , রণখণ্ড ও বক্রনাথ মহাপীঠ বলে গণ্য হয়। যা হোক এসব ক্ষেত্রে কুঞ্জিকাতন্ত্রকেই প্রামাণ্য হিসাবে ধরা হয়। 

অজয়- কুনুর তীরবর্তী উজানি মঙ্গলকোটের #চন্ডী_সংস্কৃতি_ও_তন্ত্র_মার্গের প্রবাহ সমগ্র রাঢ় বঙ্গকে প্রভাবিত করেছিল । কেতু রাজবংশের রাজধানী #বহুলানগর তথা আজকের কেতুগ্রামের সতীর যুগ্ম পীঠ যথা – বহুলাক্ষী ও ফুল্লরা শাক্তধর্মের এক বিরল তীর্থস্থান ।কাটোয়ার শাঁখাই ঘাট থেকে দাঁইহাট  ভাউসিং পর্যন্ত ভাগীরথীর পশ্চিম তীর বরাবর প্রসারিত ইন্দ্র, ইন্দ্রেশ্বর ও ইন্দ্রানীকে নিয়ে একদা গড়ে উঠেছিল এক সর্বভারতীয় তীর্থনগরী #ইন্দ্রানী…এর প্রাণকেন্দ্র ছিল বর্তমান বিকিহাট, বেড়া ও দাঁইহাট।

আরো কত শত শাক্তস্থান আছে, তা এই ক্ষুদ্র প্রবন্ধে তার উল্লেখ সম্ভব নয় । এইরূপ যে সকল শৈব কীর্তি আছে তন্মধ্যে বৈদ্যনাথ এবং বক্রেশ্বর সর্ব প্রাচীন ও প্রধান। 

তাছাড়াও এস্থলে বিষ্ণু উপাসকের আধিক্যও স্বল্প ছিল না। রাময়েত , নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের বৈষ্ণবদের ব্যাপক প্রভাব ছিল। এখানেই মহাপ্রভুর সঙ্গে জড়িত হয়ে আছে মহাকবি জয়দেবের কথা , কদমখন্ডি র ঘাটের কথা , কেন্দুবিল্ব গাঁয়ের কথা….. কত শত কিংবদন্তি! 

পৌষের সংক্রান্তি কাল তীব্র শীত রাত!

অসুস্থ শরীর নিয়ে পড়ে আছে ঘরের কোনায়- 

সাধক কবির চোখে নেমে আসে

আকুতির জল..

এবার তার মন্দভাগ্যে গঙ্গা স্নান নেই।

ভক্ত প্রাণ কেঁদে ওঠে , অন্ধকার শুক্লপক্ষ চাঁদ…

পরদিন ভোরবেলা অবাক বিস্ময়ে দেখে

কেন্দুবিল্ব গ্রামের মানুষ

অজয়ের কানায় কানায় 

সাদা জলে মিশে আছে ভাগীরথীর গেরওয়ার রং!

এই শক্তি ও শৈব এবং প্রকৃতির উপাসনার বহু বহু পরে এখানে জৈন মতের প্রবেশ। মহাবীর স্বামীর অবস্থানের হেতু এই স্থান জৈন মার্গীয় সম্প্রদায়ের নিকট রাঢ় দেশ তথা বর্দ্ধমান পুণ্যভূমি রূপে বিবেচিত হয়।

চৈতন্য মতাবলম্বী গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ই যে কেবল কাটোয়া ও তৎপরবর্তী স্থানসমূহের প্রতিভা গৌরবান্বিত করেছিল তা নহে। তার সঙ্গে একধারে ইন্দ্র, শৈব এবং শাক্তগনের কথাও বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য। বর্তমান যুগে অনেক ব্যক্তি ধর্মমার্গ পরিভ্রষ্ট ও নাস্তিকভাবগ্রস্থ দেখা যায়। কিন্তু তৎকালীন সময়ে ধারণা আদৌ ছিল না। ধর্মের যথার্থতা উপলব্ধি করে সেই নিগুঢ় রসাস্বাদনে সকলেই মাতোয়ারা হয়ে থাকতেন। পরিবর্তনশীল কালের অখন্ডনীয় প্রভাবে যেন সে ভাব বিলীন হয়ে গিয়েছে।হায়! সেই পাপ হরণকারী শান্তি যেন ভ্রান্তি বিজড়িত মানবকূলকে পরিত্যাগ করেছেন। 

যাহোক , পূর্বকালে এতদঞ্চলে যেমন বৈষ্ণব এবং বৈষ্ণবমার্গীয়দের প্রভাবাধিক্য ছিল তেমনই শক্তিসাধক সম্প্রদায়ের প্রভাবও বড় কম ছিল না । তাঁরাও কালীকীর্তনে ধর্মজগৎ কম্পিত করে সিংহের ন্যায় ধরা বিচরণ করত। শাক্ত মহাত্মাগনের নাম এবং সাধন স্থানে বহু নিদর্শন সিদ্ধপীঠ , উপপীঠ নাম ধারণ করে আজও বিরাজ করছে । তারমধ্যে কাটোয়া থেকে ক্রোশকমাত্র দূরে বেড়া গ্রামের স্বনাম প্রসিদ্ধ মহাত্মা রামানন্দের কথা কাটোয়ার ইতিহাসের অঙ্গীভূত হবার উপযুক্ত । 

আর আছেন রাঢ়দেশে,  ধর্ম স্বরূপ নারায়ণের কুর্ম্ম রূপ ধর্মঠাকুর।

একে শনিবার তায় ঠিক দুপুরবেলা।

সম্মুখে দন্ডাইল ধর্ম্ম গলে চন্দ্রমালা।।

গলায় চাঁপার মালা আসাবাড়ি হাথে।

ব্রাহ্মণ রূপে ধর্ম্ম দন্ডাইল পথে।।

রাঢ় বঙ্গের অন্ত্যজ দরিদ্র শ্রেণীর সাধারণ মানুষের ঠাকুর হলেন নারায়নের লৌকিক রূপ স্বরূপনারায়ণ অর্থাৎ ধর্ম্মঠাকুর। তিনি রাঢ় বঙ্গের সাধারণ মানুষের ত্রাণ কর্তা। তাঁর নিকট লাউসেনও যা কালু ডোমও তাই। ধর্মমঙ্গল তাই হয়ত রাঢ় বঙ্গের মহাকাব্য।ধর্মমঙ্গল থেকে জানা যায় তৎকালীন সামাজিক, অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় পরিস্থিতির কথা। এসব কারণেই রাঢ় বঙ্গের গাঁয়ে গাঁয়ে ধর্ম ঠাকুর নানা নামে স্বয়ং অবস্থান করেন। 

উর ধর্ম্ম আমার আসরে।।

কাতর কিঙ্কর ডরে  আসরে স্মরণ করে।

তেজ ধর্ম্ম বৈকুণ্ঠ নগর ।।

বিড়ম্বনা দন্ড কত  দেখ নাট শুন গীত।

আপনি আসরে কর ভর।।

ধর্মমঙ্গল’ কাব্যের ধর্মঠাকুর নিজেই কৃষি দেবতা। বৃষ্টির দেবতাও। তাঁর কৃপায় কৃষক ভাল ফসল পায়। সপ্তদশতকের কবি রূপরাম চক্রবর্তী তার ‘ধর্মমঙ্গলে’ ধান, কাপাস, কলাই ইত্যাদির কথা উল্লেখ করেছেন। ধর্মমঙ্গল রাঢ়ের মহাকাব্য বলে বিবেচিত হয়। যদিও বিষয়টি বিতর্কিত।

এতশুনি কালুবীর নিদারুণ কয়।

উচিত বলিতে গালি দিবে অতিশয়।।

অদ্যকথা কহিলে পাইবে পারিতাপ।

গরুর রাখাল ব্যাটা ছিল তোর বাপ।।

কাননে রাখিত গরু মুখে নাই রা।

ঘরে ঘরে রাখালি সাধিত তোর মা।।

কেহ দিত চালু খুদ পুরান কলাই।

অন্ন বিনে অকালে মরিল তোর ভাই।।

মানিকরাম গাঙ্গুলি ধর্মমঙ্গলে বিপর্যস্ত কৃষি জীবনের স্পষ্ট চিত্র এঁকেছেন। তিনি বলেছেন যে,

, মাহুদ্যা রাজা হয়ে 

জবুল জমির জমা বেশি করে ধরে।    

 যে না দেয় তার সদ্য গুণাগার করে॥

ক্ষেতে হাল খন্দ সে বেচে লয় সব।

বিব্রত হইল প্রজার পেয়ে আধি ভব॥

দেশ ছেড়ে দেশান্তরে পালাইয়া গেল।    

শহর নগর গ্রাম শূন্যময় হল॥

রাঢ় বঙ্গ সহ তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বহু বহু স্থানে তাই আজও তিনি কুলদেবতা রূপে পূজিত হন।

সময়ের বিবর্তনে ঘটে চলা নানা পরিবর্তন সামাজিক ও লৌকিক নানা রীতি নীতির বদল ঘটায় মাত্র। রাঢ়ের মাটিতে ঘটে চলা একের পর এক ঘটনা কখন কিভাবে কেমন পরিবর্তন এনেছিল তার কোনো প্রমাণ সংগ্রহ করা একপ্রকার অসম্ভব। বীরসিংহের প্রতিষ্ঠা- জনজাতির আধিক্য- উড়িষ্যার রাজবংশের রাজত্ব – বৌদ্ধ এবং জৈন মতের প্রবেশ – সনাতনী তন্ত্রের সঙ্গে বৌদ্ধ বজ্রযানের এক হয়ে যাওয়া – জঙ্গল ময় রুক্ষ অঞ্চলে তান্ত্রিক সাধনা- পাঠানদের দীর্ঘ শাসন- সহজিয়া মতের প্রবেশ – শ্রী চৈতন্যদেব- নিত্যানন্দের প্রভাব – কালাপাহাড়ের আক্রমন –  তন্ত্র সাধক বিরূপাক্ষের যন্ত্র পূজার প্রভাব –  দারিদ্র – শাক্ত বৈষ্ণব মতের সহাবস্থান – সাঁওতাল বিদ্রোহ – ইংরেজ শাসন – দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি বিষয়গুলি বিভিন্ন সময় , বিচিত্র সময় কাল ধরে ঘটে চলা এক একটি অভিঘাত মাত্র। এর মধ্যে কোনটি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে এবং কোনটি করে নি তা নির্নয় করা বেশ কঠিন।

#ক্রমশঃ

©দুর্গেশনন্দিনী

(প্রবন্ধটি ঋতম বাংলায় প্রকাশিত)

তথ্যঃ ১) বর্ধমান জেলার ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি

২) বর্দ্ধমানের কথা : বর্দ্ধমানের পুরাকথা ও বর্তমান বর্দ্ধমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.