পশ্চিমবঙ্গের জনগণ অনেক আগে থেকেই নিজেদের মন স্থির করে নিয়েছেন, লোকসভায় তৃণমূল অর্ধেক, এবার পুরোপুরি শেষ। অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে যখন ডবল ইঞ্জিনের সরকার তৈরি হবে, তখন বিকাশ হবে এবং মানুষের জীবন আরও সহজ হয়ে উঠবে। কাউকে নিজ রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র যেতে হবে না।” একইসঙ্গে তৃণমূলের “খেলা হবে” স্লোগানকে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “দিদি বলেন খেলা হবে, বিজেপি বলে প্রত্যেক ঘরে পরিষ্কার জল হবে। দিদি বলেন খেলা হবে, বিজেপি বলে গ্রামে গ্রামে সুবিধা হবে। দিদি বলেন খেলা হবে, বিজেপি বলে হাসপাতাল হবে।” এদিন পুরুলিয়ার জনসভায় উপস্থিত মানুষজনের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “নমস্কার আপনারা কেমন আছেন? আমি এই রাঙামাটিতে পা রেখে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান বলে মনে করছি। এই পুরুলিয়ার পবিত্র ভূমিকে ভগবান রামচন্দ্র এবং সীতা মাতার বনবাসের সাক্ষীও বলা হয়। এখানে অযোধ্যা পাহাড়ও আছে। এখানে সীতাকুন্ডও আছে। অযোধ্যা নামের গ্রাম পঞ্চায়েতও এখানে আছে। বলা হয় সীতা মাতা যখন তৃষ্ণার্ত ছিলেন, তখন ভগবান রাম জমিতে বান মেরে জল বের করেছিলেন, কিন্তু বর্তমানে সেই পুরুলিয়াই জল কষ্টের মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে পুরুলিয়ায় জল সঙ্কট অনেক বড় সমস্যা। আগে বাম, এখন তৃণমূল সরকার কিছুই করেনি। এখানকার জল কষ্ট এতটাই তীব্র যে, এখানকার কৃষক, আদিবাসী ভাই-বোনেরা চাষ আবাদ ভালো ভাবে করতে পারেন না। এমনকী পশুপালনও ভালোভাবে করতে পারে না তাঁরা।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “দিদি এখানকার মানুষ আপনাদের কাছে জবাব চাইছে। উত্তর দেওয়া প্রয়োজন কি প্রয়োজন নয়? এতদিন কাজের হিসাব নেওয়া উচিত কি নয়? আট বছর পরেও পুরুলিয়ায় জল প্রকল্প হয়নি। যখন বাংলায় ডবল ইঞ্জিনের সরকার তৈরি হবে, তখন এখানে বিকাশ হবে এবং আপনাদের জীবন সহজ হয়ে উঠবে।” প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “তৃণমূল সরকার নিজেদের খেলা নিয়েই ব্যস্ত। পুরুলিয়াকে তাঁরা জল সঙ্কট দিয়েছে। পুরুলিয়াকে দেশের সবথেকে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের পরিচয় দিয়েছে তৃণমূল সরকার।” মমতাকে খোঁচা দিয়ে মোদী বলেন, “দিদি এত বছরে একটি সেতু তৈরি করতে পারেননি, আর এখন শিল্প ও উন্নয়নের কথা বলছেন? পুরুলিয়া-সহ সমগ্র অঞ্চলের উন্নয়নের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য এই অঞ্চলের যোযাযোগকে উন্নত করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি অংশকে রেলপথের মাধ্যমে যুক্ত করা আমাদের অগ্রাধিকার।”প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখানে পর্যটনের উন্নতিতে কোনও কাজ হয়নি। এতবছর একটাও সেতু তৈরি হয়নি। ক্ষমতায় এলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হবে। ২ মে’র পরে এখানে যখন বিজেপি সরকার তৈরি হবে, তখন পশ্চিমবঙ্গে ডানকুনি বিভাগের কাজও শুরু হবে। ২ মে’র পরে এখানে যখন বিজেপি সরকার তৈরি হবে, আমরা এমন সুযোগ-সুবিধা তৈরি করব যা মানুষকে রাজ্য ছেড়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখবে।” প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “মা-মাটি-মানুষের কথা বলা দিদি যদি দলিত, আদিবাসীদের প্রতি স্নেহ দেখাতেন তাহলে তাঁদের এই অবস্থা হত না।” জনসভায় উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “আপনাদের উৎসাহ দেখে মনে হচ্ছে তৃণমূলের পরাজয় নিশ্চিত। এবার পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে সিন্ডিকেট যাঁরা করে তাঁদের পরাজয় নিশ্চিত। এবার পরাজয় হবে তোলাবাজির।” পুরুলিয়ার জনগণকে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “যেখানে যেখানে বিজেপি’র সরকার গড়ে উঠেছে, সেখানে জল সঙ্কট আগের তুলনায় অনেকাংশে কমে এসেছে। কিন্তু পুরুলিয়ায় জল সংকট থেকেই গিয়েছে। পুরুলিয়া-সহ জঙ্গলমহলে উন্নয়নের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। পরিকাঠামো উন্নয়ন জোর দেওয়া হয়েছে। রেল যোগাযোগ বাড়ানো হবে। ফ্রেইট করিডোরের সম্মতি দেওয়া হয়েছে। ফ্রেইট করিডোর হলে কর্মসংস্থান হবে। পুরুলিয়ার মানুষকে বাইরে যেতে হবে না। এখানে কৃষিভিত্তিক প্রকল্পের উপর জোর দেওয়া হবে। যাতে এখানকার যুবকরা এখানেই কর্মসংস্থান খুঁজে পায় আর অন্য কোথাও তাদের যেতে না হয়। আমি দিল্লিতে থেকেও আপনাদের দুঃখ কষ্ট অনুভব করতে পারি। তাই আমি আপনাদের ভরসা দিতে পারি যে, আপনাদের এই কষ্ট আমি লাঘব করবো।”তৃণমূলের “খেলা হবে” স্লোগানকে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “দিদি বলেন খেলা হবে। বিজেপি বলে বিকাশ হবে। দিদি বলেন খেলা হবে। বিজেপি বলে বিকাশ হবে, সোনার বাংলা হবে। দিদি বলেন খেলা হবে। বিজেপি বলে চাকরি হবে, উন্নয়ন হবে, শিক্ষা হবে, হাসপাতাল হবে, স্কুল হবে এবং সোনার বাংলা হবে।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১০ বছর তোষণের পর, এখন দিদিকে অন্যরকম লাগছে। এটা পরিবর্তন নয়, হেরে যাওয়ার ভয়। দিদি এটা ভুলবেন না, বাংলার মানুষের স্মৃতি খুব তীক্ষ্ণ। তুষ্টিকরণের জন্য আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে জনগণ অবগত। পশ্চিমবঙ্গের জনগণ অনেক আগে থেকেই নিজেদের মন স্থির করেছেন, লোকসভায় তৃণমূল অর্ধেক, এবার পুরোপুরি শেষ।”প্রধানমন্ত্রী পুরুলিয়ার জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, “ছৌশিল্পীদের সম্মান ও রোজগার দুই হবে। দিল্লিতে থেকেও পুরুলিয়ার যন্ত্রণা বুঝি। কৃষি নির্ভর শিল্প গড়ে তোলা হবে। এখন বাংলার জনতা বলছে, প্রত্যেক বাঙালি বলছে, অত্যাচার অনেক করেছো দিদি। ভয় দেখানো তোমার অস্ত্র। রুখে দাঁড়াবে এবার বাংলার মানুষ। মা দুর্গার আশীর্বাদে তুমি পরাস্ত হবে। দিদি রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য মাওবাদীদের হিংসাকেও সমর্থন করেছেন। আর এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে আপনাদের। গোটা বাংলা জানে কয়লা মাফিয়া, বালি মাফিয়ারা কাদের থেকে থেকে সুরক্ষা পেয়েছে।” মোদী বলেন, “বিজেপির উত্থান দেখে দিদি আমাকে অসম্মানজনক কথা বলতেও পিছপা হচ্ছেন না। এমনকী বিজেপি কার্যকর্তাদের উপরেও তাঁর রক্তচক্ষু। ভারতবর্ষের কোটি কোটি নারীর মধ্যে তিনিও একজন নারী। তাই আমি তাঁকে সম্মান করি, এটাই আমার সংস্কার।” জনতার উদ্দেশে মোদী বলেন, “এবারে আপনারাই বলুন পশ্চিমবঙ্গের যুবকদের চাকরি চাই কি-না? নারীর সম্মান চাই কি-না? আদিবাসীদের অধিকার চাই কি-না? সর্বোপরি বাংলার বিকাশ চাই কি-না? আপনাদের এই উদ্যোগ আর উৎসাহই এবার বাংলায় বিজেপি সরকার গড়বে। বাংলায় অপরাধ আছে, অপরাধীরাও আছে, কিন্তু তারা জেলে নেই। অনুপ্রবেশকারীরা স্বাধীনভাবে ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কী অবস্থা বাংলার করে ফেলেছেন দিদি। বুধবার উত্তর ২৪ পরগনায় বোমাবাজি হয়েছে। বিজেপি কার্যকর্তাদের নিশানা করছে তৃণমূল। এই মাফিয়ারাজ চলবে না। টি এম সি মানে ট্রানস্ফার মাই কমিশন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে আইনের শাসন ফিরবে। কাটমানি, সিন্ডিকেটের কোনও জায়গা থাকবে না। এই সোনার বাংলায় গুন্ডা, সন্ত্রাসবাদীদের জায়গা জেলে হবে, রাস্তায় নয়।”
2021-03-18