সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী জে.সাই দীপক (J.SAI DEEPAK)-এর নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করল দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি ছয় দিনের একটি অনলাইন “বৌদ্ধিক” বা নির্ধারিত বিষয়ের উপর জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য প্রদানের কর্মসূচি নিয়েছিল।বিভিন্ন বিষয়ের উপর সারগর্ভ আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।নানা ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গের এই কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণের কথা ছিল।বিশ্ববিদ্যালয়ের ল’ ফ্যাকাল্টি বিভাগ এই কর্মসূচির আয়োজন করেছিল।তাদের আমন্ত্রণে বক্তাগণ ব্যস্ততার মধ্যেও সময় করে নিয়েছিলেন।তার মধ্যে শ্রী দীপকের বক্তব্যের বিষয় ছিল ” সংখ্যালঘু অধিকার” ও “জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া-আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটিতে তপশীলী জাতি-উপজাতিদের সংরক্ষণ“।
যে-প্রশ্নে দেশ আলোড়িত তা হল,কী এমন ঘটল যে,শ্রী দীপকের মতো মান্য ব্যক্তির অনুষ্ঠান বাতিল করতে হল ! যেখানে ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে তিনি রাজি হয়েছিলেন।এবং তাঁর বৌদ্ধিকের বিষয় ছিল “সংখ্যালঘু অধিকার” সংক্রান্ত !
একটু পিছনে ফিরে দেখা যাক।
কেন্দ্র সরকার যখন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে আনার প্রস্তাব করে তখন এই জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ও আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির কী ভূমিকা ছিল বিলটি নিয়ে ? পরবর্তীতে বিলটি যখন সংসদে পাশ হয়ে “নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন” (C.A.A.) হল,তখনই বা ইসলামিয়ার কী ভূমিকা ছিল ? শুরু থেকেই C.A.A.-র বিরোধিতা করে এসেছে মিলিয়া।ভদ্র-শব্দে যাকে “বিরোধিতা” বলা হয়,তা নয়।রীতিমত দেশদ্রোহীতা করেছে এই জামিয়া! যে-বিল সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সম্মতিতে পাশ হয়ে আইনে পরিণত হল,সেই আইনের বিরোধিতা করা মানে তো প্রকাশ্যেই দেশের বিরুদ্ধে যাওয়া ! দেশদ্রোহীতা করা ! জামিয়াই ছিল এই বিরোধিতার ধাত্রীঘর,পালন ভবন! এখানেই বিপুল পরিমাণ পাথর ও অন্যান্য জিনিসপত্র এনে মজুত করা হয়েছিল।যেগুলি নানা সময়ে ভাঙচুর,পাথর ছোঁড়া,অগ্নি সংযোগের সময় ব্যবহৃত হয়েছিল।পুলিস বাহিনিকে আক্রমণ করা হয়েছিল।কয়েক জন পুলিস কর্মী মারাত্মক ভাবে আহতও হয়েছিলেন।এবং তা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলেছিল।এই সঙ্ঘবদ্ধ ও পরিকল্পিত দেশদ্রোহীতার “কন্ট্রোল হাউস”-ই ছিল এই জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটি! গত ২৪ এপ্রিল ইউনিভার্সিটি ঘোষণা করে যে,ল-ফ্যাকাল্টির পক্ষ থেকে ছয় দিনের জন্য একটি অনলাইন বক্তৃতার আয়োজন করা হয়েছে।নানা ক্ষেত্রের স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে নিজস্ব বক্তব্য রাখবেন।যা শুরু হবে ২৫ এপ্রিল থেকে । চলবে ৩০ তারিখ পর্যন্ত।
শেষ দিনেই শ্রী দীপকের জন্য সময় নির্ধারিত ছিল।এবং তাঁর আলোচ্য বিষয় ছিল ,“সংখ্যালঘু অধিকার”, এবং “জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া-আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটিতে তপশীলী জাতি ও তপশীলী উপজাতিদের সংরক্ষণ” । পরম আশ্চর্যের ব্যাপার হল,৩০ তারিখের সকালে শ্রী দীপককে জানানো হয় যে,তাঁর জন্য নির্ধারিত কর্মসূচি “অনিবার্য কারণবশতঃ” বাতিল করা হয়েছে !এই অ-নিবার্য কারণের কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা অবশ্য ইউনিভার্সিটি দিতে পারে নি।
এমন একটি অপমানকর ঘটনা সামনে আসতেই সমস্ত মহল থেকে নিন্দা শুরু হয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে এই ধরণের ব্যবহার অপ্রত্যাশিত।।এবং কোনো নিন্দাই ইসলামিয়ার জন্য উপযুক্ত নয়– এমন মতামত আসতে থাকে।
যে-সকল পড়ুয়ারা এই কর্মসূচির দায়িত্বে ছিলেন,তাঁদের জনৈক প্রতিনিধি জানিয়েছেন যে,শ্রী দীপককে প্রথমে অনুরোধ করা হয়েছিল “ক্রম বর্ধমান জন-হিংসা” বিষয়ে আলোচনা করতে।তিনি তাতে অসম্মতি জ্ঞাপন করে জানান “বিতর্ক ছড়াতে পারে” এমন বিষয়ে তিনি আলোচনা করবেন না।শ্রী দীপক শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে ওই ছাত্র প্রতিনিধি সংবাদ মাধ্যমকে জানান। দুই পক্ষের বিস্তর আলোচনার পর,শেষ পর্যন্ত ঠিক হয় যে, শ্রী দীপক “সংখ্যালঘু অধিকার” এবং ” জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ও আলিগড় ইউনিভার্সিটিতে তপশীলী জাতি ও তপশীলী উপজাতিদের সংরক্ষণ” শীর্ষক আলোচনা করবেন। শ্রী দীপকের সাথে যোগাযোগকারি ছাত্র প্রতিনিধি স্টুডেন্ট কাউন্সিলকে বিষয়টি জানান।এবং কাউন্সিল ই-মেইলের মাধ্যমে শ্রী দীপককে বিষয়টি জানিয়ে দেয়।ই-মেইলে আলোচ্য বিষয়টি পাল্টে গিয়ে দাঁড়ায় “সংখ্যালঘু অধিকার ও ধর্ম নিরপেক্ষতা”! শ্রী দীপকের ইউনিভার্সিটির আলোচনায় অশংগ্রহণের বিষয়টি জানাজানি হতেই বিক্ষোভ শুরু হয়।পড়ুয়াদের একাংশ দীপকবাবুর বিরোধিতায় অবতীর্ণ হয়।তারা দীপকবাবুর বিরুদ্ধে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে পোস্টার লাগিয়ে দেয়।এবং দাবি করতে থাকে শ্রী দীপকের অনলাইন ভাষণ বাতিল করতে হবে। পড়ুয়াদের অপরাংশ দীপকবাবুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি সামনে আনে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পড়ুয়া জানান,স্টুডেন্টস কাউন্সিল ও স্টুডেন্টস কমিটি সম্মত হয় দীপকবাবুর বিষয়ে।এবং উভয় পক্ষই ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে দীপকবাবুর ভাষণ বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে বলে।এবং ২৯ তারিখে পুনরায় ই-মেইল মারফৎ বিষয়টি দীপকবাবুকে জানিয়েও দেওয়া হয়। এই ঘটনার ঠিক পর পরই,স্টুডেন্টস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ই-মেইল করে দীপকবাবুকে জানানো হয় যে,তাঁর জন্য নির্ধারিত আলোচ্য বিষয়বস্তু ইউনিভার্সিটির পড়ুয়াদের পক্ষে নিরাপদ নয়।অনেক পড়ুয়াই শারীরিক বা অন্যান্য ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত-নিগ্রহের শিকার হতে পারেন।এই অভাবনীয় পরিস্থিতিতে শ্রী দীপকও জানিয়ে দেন যে,পড়ুয়াদের সুস্থতাই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার প্রাপ্ত। দীপকবাবুর জন্য নির্দিষ্ট দিনেই তাঁকে জানানো হয় যে,তাঁর কর্মসূচিটা বাতিল করা হয়েছে ! এবং অত্যন্ত বিস্ময় ও অপমানের ব্যাপার হল যে, “কেন” বাতিল হল তার কোনোরূপ ব্যাখ্যা দীপকবাবুকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটির ল-ফ্যাকাল্টি ! এই মর্মে কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদেরও একটি বিজ্ঞপ্তীতে দীপকবাবুর নাম উল্লেখ করে কর্মসূচি বাতিলের কথা জানায়।সেখানেও কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ উল্লেখ করা হয় নি।
কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ না-দেখালেও এটা “খোলামেলা গোপনীয়তা” (Open Secret) যে,যারাই নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করেছিল,তারাই দীপকবাবুর অনুষ্ঠান বাতিল করার জন্য কর্তৃপক্ষের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছিল !ছাত্রদের যে-অংশ প্রথমে বিরোধিতার বিষয়টি লক্ষ্য করেছিল,তাদের পক্ষ থেকে ট্যুইটারে অনুষ্ঠান বাতিলের পিছনে C.A.A. বিরোধিদের চাপের কথা জানিয়েছে।অন্য আরেকটি ট্যুইটবার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে,মেরুদন্ডহীন কর্তৃপক্ষ বিরোধীদের চাপে বিপর্যস্ত হয়েই দীপকবাবু “মুক্তমনা” আলোচনা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে ! হায় ! “সহিষ্ণু” জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া…”! ৩০ এপ্রিলের বিজ্ঞপ্তীতে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ দীপকবাবুর কর্মসূচি বাতিলের কারণ অবশ্য একটা উল্লেখ করেছে !বিজ্ঞপ্তী অনুসারে সেই “অ-নিবার্য” কারণটি হল ” বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক কর্মীর দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ও বয়স্ক স্ত্রী”-র আকস্মিক প্রয়াণ’! “সহিষ্ণু” ইসলামিয়া কর্তৃপক্ষ দীপকবাবুর বক্তব্যের জন্য নতুন বিষয় ঠিক করেছিল “মুক্ত চিন্তন” ! আগ্রহী পড়ুয়াদের সম্মতিও চাওয়া হয়েছিল।কিন্তু “সহিষ্ণু” ইসলামিয়ারা” এই “অসহিষ্ণু” “মুক্ত চিন্তন”-ও সহ্য করতে পারে নি !
সুজিত চক্রবর্তী (Sujit Chakraborty)