কলকাতা, ২৩ জুন (হি স)। সাচার রিপোর্টের বাস্তবতা অস্বীকার করেছিলে পশ্চিমবঙ্গের বামেরা। অন্যদিকে, তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর গোড়া থেকেই বিভিন্ন বিভাগকে মুস্লিমদের চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব অমিতকিরণ দেব এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, “একটা বড় সমস্যা সংরক্ষণ। আমি ১৯৭১ সালের আইএএস ব্যাচ। ওই সময় বরাদ্দ পদের আনুমানিক ২৫ শতাংশ ছিল সংরক্ষিত। এখন তা দ্বিগুন বেড়েছে। অনেক প্রকৃত অসংরক্ষিত মেধাবী পরীক্ষার্থী এতে সঙ্কটে পড়ছেন। আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে।“
বাম আমলে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী ড. আবদুস সাত্তার সাচার রিপোর্টের বাস্তবতা অস্বীকার করেছিলেন। অভিযোগ করেছিলেন, সাচার রিপোর্ট ঠিকভাবে বাংলার মুসলিমদের সরকারি চাকরির হাল তুলে ধরেননি। বুদ্ধদেববাবু মহাকরণের অলিন্দে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছিলেন, মাদ্রাসাগুলো জঙ্গিদের আঁতুরঘর। তা নিয়ে বহু আলোড়ণ হয়। পরে অবশ্য দল থেকে প্রকাশ্যে দাবি করা হয়েছিল, উনি ওভাবে বলতে চাননি। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকার। গোড়া থেকেই তিনি বিভিন্ন বিভাগকে মুস্লিমদের চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন।
সূত্রের খবর, সাচার কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার সময় পশ্চিমবঙ্গে সাত শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণ ছিল। তখন মুসলমানদের মাত্র ন’টি গোষ্ঠী ওবিসির অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখন তা বহু অংশে বেড়ে গেছে। বর্তমানে অবশ্য ওবিসি-এ ও ওবিসি-বি এই দুটি ভাগে বিভক্ত। ওবিসি-বি তালিকায় খুবই নগ্যণ মুসলিম থাকলেও ওবিসি-ও তালিকায় সবাই মুসলিম সম্প্রদায়ের। মমতা সরকার ওবিসি-এ দের জন্য ১০ শতাংশ ও ওবিসি-বি দের জন্য ৭ শতাংশ, মোট ১৭ শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণ চাকরিতে দিয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন।
সাচার কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার সময় রাজ্যে সাত শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণ ছিল। তখন মুসলিমদের মাত্র ন’টি গোষ্ঠী ওবিসি-র অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখন তা বহু অংশে বেড়ে গেছে। বর্তমানে অবশ্য ওবিসি-এ ও ওবিসি-বি এই দুটি ভাগে বিভক্ত। ওবিসি-বি তালিকায় খুবই নগ্যণ মুসলিম থাকলেও ওবিসি-ও তালিকায় সবাই মুসলিম সম্প্রদায়ের। মমতা সরকার ওবিসি-এ দের জন্য ১০ শতাংশ ও ওবিসি-বি দের জন্য ৭ শতাংশ, মোট ১৭ শতাংশ ওবিসি সংরক্ষণ চাকরিতে দিয়ে নজির সৃষ্টি করেছেন।“
শিক্ষাবিদ তথা প্রাক্তন উপাচার্য ডঃ অচিন্ত্য বিশ্বাস বলেন, “গোড়ায় যখন চাকরিতে সংরক্ষণের ব্যাপারটা চালু হয়, কথা ছিল নির্দিষ্ট একটা সময়সীমার জন্য এই সুযোগ থাকবে। ক্রমে সেই সময় অনন্তকাল বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, বেড়েছে এর মাত্রাও। ফলে, জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটা স্থায়ী বিভাজন তৈরি হচ্ছে। পুলিশে এত বিপুল সংখ্যায় মুসলমানদের চাকরি দেওয়া হলে ন্যায়বিচার মার খাবে বলে যে আশঙ্কা অনেকের মধ্যে দেখা দিয়েছে, তার যথেষ্ঠ ভিত্তি আছে।“
জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সংঘের প্রাক্তন রাজ্য কার্যকরী সদস্য ডঃ রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রতিবেদককে বলেন, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিযোগিতা ই একমাত্র কাম্য,অবাধ ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা, সংরক্ষণের দ্বারা এই প্রতিযোগিতার মূলে কুঠারাঘাত রাষ্ট্রের সকল প্রকার উন্নয়নের পরিপন্থী। তবু দীর্ঘ সময় ধরে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার জাতি ও উপজাতি তথা বর্ণ সম্বলিত হিন্দু সমাজের একটা বড় অংশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমতা গঠনের লক্ষ্যে সংবিধান প্রণেতাগণ কয়েক দশকের জন্য, আজন্ম নয়, পিছিয়ে পড়া বেশ কিছু বর্ণ ও জাতিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। একইসঙ্গে ধর্মের ভিত্তিতে কোনো সংরক্ষণের বিরুদ্ধেও তাঁরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংবিধানের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। গত দশক থেকে জাত-পাত নয়, বরং অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার নিরিখে সংরক্ষণের অস্ফুট ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। উচ্চ বর্ণের দরিদ্র মানুষের সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা ওই ধ্বনিরই প্রতিফলন।
(ক্রমশ)
Foto, link
হিন্দুস্থান সমাচার/ অশোক
অশোক সেনগুপ্ত
http://bengali.hindusthansamachar.in/NewsDetail?q=0C420831F418957DBD19B65D869EB75D