এন ডি থেকে নরেন্দ্র মোদী

১৯৯১ সাল। গুজরাটের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্যসচিব গুরুচরণ সিংহ মুম্বাই যাচ্ছেন। ট্রেনের প্রথম শ্রেণীর কামরায় উল্টোদিকের আসনেই বসে মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক। বেশ আঁটোসাটো চেহারা। গালের ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি নিখুঁতভাবে ছাঁটা। পরনে পাজামা আর কারওলা হাফ হাতা সুতির কূর্তা।
না, পরিচয় করার আগ্রহ দেখাননি গুরুচরণ সিংহ। কারণ অপরিচিত ওই সহযাত্রী তখন মন দিয়ে পড়ছেন স্বামী বিবেকানন্দের একটি বই। কয়েকটা স্টেশন পার হবার পরই প্রাক্তন ওই আই এ এস অফিসারের বিস্মিত হবার পালা শুরু। যেখানে ট্রেন থামছে, জানালার কাছে ভিড় জমছে ফুলের মালা হাতে দলবদ্ধ মানুষের। সিংজী মনে মনে ভাবছেন, এর নাম ভারতবর্ষ। যত মানুষ, তত নেতা!
মুম্বাই সেন্ট্রাল স্টেশনে পৌছে সিংজী এবার সত্যিই হতবাক। এক বিশাল জনতা ‘মোদীজী জিন্দাবাদ’ ধ্বনিতে মুখর করে তুলেছে স্টেশনের প্লাটফর্ম। মালার পাহাড় আর পুষ্পবৃষ্টির মাঝখান দিয়ে এগিয়ে চলেছেন মোদী। দুপাশে বিজেপির পতাকা হাতে সারবদ্ধ মানুষ। গুরুচরণ সিংহ মনে করার চেষ্টা করলেন, কে এই মোদীজী ? বিজেপির নেতা-সে তো বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু গুজরাটের কি? কই, এতদিন গুজরাটে শীর্ষস্থানীয় আমলার দায়িত্ব পালন করলেন, এ নামটা তো কখনও শোনেননি।
১৯৬২-র এক ভোরবেলা। শীতের কুয়াশায় মুড়ি দিয়ে ছোটো স্টেশন বড়নগর। একটা ট্রেন এসে থামল। কয়েকজন ভাররী সৈন্য বেডিং কঁাধে পা রাখল স্টেশনে। কারও মাথায় ব্যান্ডেজ, কারও বা হাতে। ছুটে এল বছর বারোর এক কিশোর। হাতে তার গরম চায়ের কেটলি, মাটির ভাড়। কেটলি থেকে ভাড়ে চা ঢেলে এগিয়ে দিল সৈন্যদের দিকে। ওঁরা দেখছেন। পয়সা না নিয়েই চলে যাচ্ছিল কিশোরটি। সেনাদের একজন পিছন থেকে ডাকল— “এ লেড়কা, চায়ে কা পয়সা লেকে যাও।” ছেলেটি ফিরে এল। নরম কণ্ঠে বলল— “নেহী লাগে গা।
—কিঁউ?
—বোল দিয়া, নেহী লাগে গা।
—কেয়া নাম হ্যায় তুমহারা?
—এনডি—নরেন্দ্র—নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।
আর দাঁড়ায়নি কিশোরটি। গরম চা নিয়ে তখন সে ছুটছে প্লাটফর্মের অপর প্রান্তে।
দুটো ছবি পাশাপাশি ধরলে কোনও মিলই খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোথায় নির্জন বড়নগর স্টেশনের চা-বিক্রেতা এক কিশোর। আর কোথায় মুম্বাই সেন্ট্রাল স্টেশনে তারই নামে জিন্দাবাদ ধ্বনিতে মুখর আকাশ-বাতাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.