লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে বিজেপি ততই আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছে। গত ৬ এপ্রিল ওড়িশার সুন্দরগড় এবং সোনেপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দুটি বিশাল জনসভা করেছেন। সেখানে নববাত্রির আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, “আজ একটি বিশেষ দিন। কারণ আজ বিজেপির ৩৯ তম প্রতিষ্ঠা দিবস। আমাদের দল সাধারণ মানুষের ইচ্ছে ও আবেগের পুঁজিতে তৈরি হয়েছে এবং এখনও নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পেরেছে কার্যকর্তাদের কঠিন পরিশ্রমের ওপর ভিত্তি করে। আমাদের দলে অর্থ এবং পরিবারের কোনও ভূমিকা নেই।”
তরুণ প্রজন্মের যে-সৃজনশীল মনন থেকে একবিংশ শতকের ‘নতুন ভারত’-ভাবনার জন্ম তার ব্যাখ্যা করে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “আমাদের দলের লক্ষ্য, সব কা সাথ সব কা বিকাশ। এরকম একটা লক্ষ্য স্থির করার কারণ কী? যাতে সবাই সমান সুযোগ পায় এবং উন্নতি করে। সব সরকারেরই এরকম একটা লক্ষ্য থাকা উচিত। কোনও দেশই এখন মানুষের মধ্যে ধর্ম জাতপাত এবং ভৌগোলিক কারণে বিভেদ সৃষ্টি করার রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেয় না। আমাদের স্বপ্নের নতুন ভারত যে সুন্দরভাবে বেড়ে উঠছে শুধু তাই নয়, তার ওপর নেমে আসা প্রতিটি আক্রমণকেও সে প্রতিহত করছে। সকলেই জানেন, এই ভারত তার শত্রুদের উচিত শিক্ষা দেয় এবং ভবিষ্যতেও দেবে। কয়েক দশক ধরে বিজু জনতা দলের সরকার ওডিশায় ক্ষমতাসীন। এই প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন সরকার রাজ্যের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাপূরণে ব্যর্থ। এটা স্পষ্ট, মানুষ এখন পরিবর্তন চান। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, স্রেফ ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে কেন্দ্রের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি এ রাজ্যে উপেক্ষিত। আয়ুষ্মন ভারতের মতো প্রকল্প, যার মাধ্যমে গরিব মানুষ চিকিৎসার দরুন ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন, ওড়িশায় বারে বারে উপেক্ষিত হয়েছে। একই কথা বলা চলে কৃষিক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহায়ক মূল্য প্রদানের ক্ষেত্রেও।
কংগ্রেস বিজেডি তৃণমূল কংগ্রেসের মতো দলগুলি পরিবারতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। এই মারাত্মক প্রবণতা যে কোনও গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে। তাই ওড়িশা-সহ সমগ্র দেশ থেকে পরিবারতন্ত্র উপড়ে ফেলার ডাক দিয়ে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “কংগ্রেস এবং বিজেডির কাছে গরিব মানুষ মানে শুধু ভোটব্যাঙ্ক। গরিব যদি চিরকাল গরিব থাকে তাহলে তাদের রাজনৈতিক শক্তি বাড়ে। ওড়িশার মতো একটি কৃষ্টিসম্পন্ন রাজ্য এই কারণেই আজও উন্নয়নের নিরিখে পিছিয়ে রয়েছে। কংগ্রেস চিরকাল উন্নয়নের প্রশ্নে দেশের একটি নির্দিষ্ট অংশকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বাকি অংশ থেকে গেছে অন্ধকারে। পরবর্তীকালে এইসব অঞ্চলই হয়ে উঠেছে নকশাল এবং মাওবাদীদের দুর্গ। ভোট এলেই কংগ্রেসের নেতারা গরিবি হটানোর লম্বা লম্বা প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু কাজের বেলায় কিছুই করেন না। তাই, ওড়িশা তো বটেই, সেই সঙ্গে অন্য রাজ্যের মানুষও এখন আর কংগ্রেসের নেতাদের কথায় বিশ্বাস করেন না।”
গত ৭ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে জনসভা করেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত মানুষকে ধন্যবাদ জানান। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে-কদর্য ভাষা ও ভঙ্গিতে নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করেন, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আসলে দিদি ভয় পেয়েছেন। তিনি বুঝতে পারছেন পশ্চিমবঙ্গে তার সেই জনসমর্থন আর নেই। তার সুবিধাবাদী রাজনীতি ক্রমেই পশ্চিমবঙ্গে জমি হারাচ্ছে। সেই কারণেই তিনি আমাকে রকের ভাষায় গালিগালাজ করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্পিডব্রেকার আখ্যা দিয়েছিলেন আগেই। এদিনও সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, “দিদির জন্যই পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়ন ঠিকমতো হচ্ছে না।”
এবারের নির্বাচনে বিজেপি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ক্ষেত্রের রাজ্যগুলির ওপর। সেই তালিকায় ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে প্রথম সারিতে। ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে এই দুই রাজ্যে নরেন্দ্র মোদীকে ঘিরে সাধারণ মানুষের উন্মাদনা ততই বাড়ছে। কাতারে কাতারে মানুষ আসছেন নরেন্দ্র মোদীর জনসভায়। তাঁকে দেখতে। তার কথা শুনতে। পশ্চিমবঙ্গ আর ওড়িশা যে এবার বিজেপিকে নিরাশ করবে না সে কথা বলাই বাহুল্য।
অশোক মাইতি