সিংহের গুহায় ঢুকেছিলাম, আরএসএস সদর দফতরে যাওয়া নিয়ে বললেন প্রণব

গতবছর ৬ জুন নাগপুরে আরএসএসের সদর দফতরে গিয়েছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিল নানা মহলে। আজীবন কংগ্রেসী প্রণব মুখোপাধ্যায় হিন্দুত্ববাদীদের সদর দফতরে যাচ্ছেন কেন? সম্প্রতি সনিয়া সিং নামে এক লেখিকাকে নিজের মুখে তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, আমি সিংহের গুহায় ঢুকেছিলাম। সেখানে ঢুকেই তাদের দেখাতে চেয়েছিলাম, তারা ভুল পথে চলছে।

তাঁর কথায়, ভারতের আত্মার মধ্যে রয়েছে বহুত্ববাদ ও সহিষ্ণুতা। শত শত বছর ধরে নানা মতাদর্শকে আমরা আত্মস্থ করেছি। এইভাবে আমাদের বহুত্ববাদের আদর্শের জন্ম হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি ধর্মনিরপেক্ষতায়। পরকে আপন করে নেওয়াই আমাদের ধর্ম। এই সংস্কৃতিই আমাদের জাতি হিসাবে গড়ে তুলেছে।

সনিয়া সিং-এর বইয়ের নাম ডিফাইনিং ইন্ডিয়া: থ্রু দেয়ার আইজ। সেই বইতে আছে প্রণববাবুর সাক্ষাৎকার। নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। নরেন্দ্র মোদীর সরকার যখন তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ দেবে বলে জানাল, তখন তাঁর কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, তাও বলেছেন।

সনিয়া সিং লিখেছেন, প্রণব মুখোপাধ্যায় এখন আর সক্রিয় রাজনীতিতে নেই বটে, কিন্তু রাজনীতিতে ভীষণ প্রাসঙ্গিক। ২০১৯ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে সকলকে চমকে দিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকার ঘোষণা করে, তাঁকে ভারতরত্ন দেওয়া হবে। প্রণববাবু নিজে বলেছেন, ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছ’টায় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোন করলেন। তিনি জানতে চাইছিলেন, আমি ভারতরত্ন গ্রহণ করব কিনা।

তাঁর কথায়, মোদী বললেন, প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে ভারতে এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট। তাঁকে আপ্যায়ন করতে হচ্ছে। তাউ তিনি নিজে আমার কাছে আসতে পারছেন না। তিনি ফোনে জানতে চাইছেন, আমার সম্মতি আছে কিনা। প্রধানমন্ত্রী চাইছিলেন, সেই সন্ধ্যাতেই ভারতরত্ন প্রাপকের নাম ঘোষিত হোক। কিন্তু আমার সম্মতি না পেলে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করতে পারছিলেন না। আমি তখন সম্মতি দিলাম।

প্রণববাবু বলেছেন, আমার মেয়ে শর্মিষ্ঠা আমার ওপরে খুব রেগে গেল। সে বলল, তুমি ভারতরত্ন পাচ্ছ, অথচ তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, কিছুই হয়নি। তুমি আমাকে এই সম্মান পাওয়ার কথা বলনি পর্যন্ত। আমি তাকে বললাম, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা অবধি অপেক্ষা করছিলাম। শর্মিষ্ঠা বলল, আনুষ্ঠানিক ঘোষণার কী দরকার? প্রধানমন্ত্রী নিজে যখন তোমাকে ফোন করে বলেছেন, তখন নিশ্চয় ঠিক খবর।

সনিয়া সিং তাঁকে প্রশ্ন করেন, অনেক সময় ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর তুলনা করা হয়। আপনি তো দুই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই কাজ করেছেন। আপনার কী মনে হয়?

প্রণববাবু বলেন, তাঁদের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। ইন্দিরা ছিলেন চূড়ান্ত ধর্মনিরপেক্ষ। তাঁরা দু’জনেই দু’বার করে অরুণাচল প্রদেশে গিয়েছেন। ওই রাজ্যে মাত্র দু’টি লোকসভা আসন আছে। কিন্তু দুই প্রধানমন্ত্রীই জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে অরুণাচলে গিয়েছেন। তাঁরা উভয়েই চেয়েছেন, চিনকে একটা কঠোর বার্তা দিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.