ভারতের এই মূহুর্তে সব থেকে বড় বিদেশী শত্রু হল চীন। শুরু থেকেই চীনের লোলুপ দৃষ্টি রয়েছে ভারতের দিকে। ১৯৬২ তেই তারা আক্রমণ শানিয়েছিলো ভারতের উপর‚ যার ফলে এখনো পর্যন্ত ভারতের একটা বিশাল পরিমাণ জমি চীনের হাতেই রয়ে গেছে। একনায়কতান্ত্রিক কমিউনিস্ট চীনের জন্যে গনতান্ত্রিক ভারত মস্তবড় এক আদর্শিক হুমকি। তাই চীন বারবার চেষ্টা করেছে ভারতকে গ্রাস করতে‚ ভারতের সীমান্তে হানা দিতে‚ এখনও দিয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। আপনারা জানেন এই মূহুর্তেও সীমান্তে যথেষ্ট উত্তেজনা বজায় আছে চীন ও ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে।

ভারতের সেনাবাহিনী যখন সীমান্তে লড়াই চালায় আমরা তখন বাড়িতে শান্তিতে ঘুমাতে পারি এই আশায় যে হানাদার চীনা সেনাদের ভারতের জওয়ানরা ঠিক সামলে নেবে। তা তারা নেয়ও। ভবিষ্যতেও অবশ্যই নেবে। কিন্তু যুদ্ধ কি শুধু সেনাবাহিনীরই কাজ? নাগরিকদের কি এখানে কোনো ভূমিকাই নেই? আমরা কি চিরকাল দর্শকের আসনেই বসে থাকবো?

আচ্ছা যদি এটা বলি যে চীন যে অস্ত্র দিয়ে ভারতের উপর আক্রমন চালায়‚ ভারতের জওয়ানদের হত্যা করে সেই অস্ত্র কেনার অর্থ আমরাই চীনের হাতে তুলে দিই? কি? খুব অবাক হচ্ছেন? আসলেই এটা ঘটে। আর একমাত্র আমরাই পারি এক নাগরিক আন্দোলন গড়ে তুলে চীনের সেনাবাহিনীকে আটকে দিতে। বাস্তবে পৃথিবীতে বিদেশী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যেকটা মরণপণ সংগ্রাম ঘটেছে‚ তা সে চিতোর গড় হোক বা স্টালিনগ্রাড কিংবা ভিয়েতনাম‚ সব ক্ষেত্রেই সেনাবাহিনীর সাথে সাথে নাগরিকদের যথাসাধ্য অংশগ্রহনও ছিলো সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের বুকে চীনের আগ্রাসন ঠেকাতেও তাই ব্যাপক আকারে গণ জাগরণ প্রয়োজন

চীনের বিরুদ্ধে আমাদের কি করতে হবে তা বুঝতে গেলে আমাদের আগে জানতে হবে চীনের এই অতি আগ্রাসী আচরণের কারণ কি? চীন এই মূহুর্তে শুধু ভারতেই না‚ দক্ষিন চীন সাগরে তাইওয়ান‚ হংকং এমনকি নিজেদের সম আদর্শের রাষ্ট্র কমিউনিস্ট ভিয়েতনামকেও একইভাবে ব্যতিব্যস্ত করে চলেছে আর এর পেছনে আছে চীনের নাগরিক অসন্তোষকে যুদ্ধের জিকিরে ধামাচাপা দেওয়ার প্রয়াস। চীনের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি। যারা প্রতিনিয়তই বেইজিং এর কমিউনিস্ট সরকারের বজ্রমুষ্টির শাসনে বাস করতে বাধ্য হয়। নিজেদের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক পছন্দ অপছন্দ তো দূরের কথা‚ নাগরিক জীবনের সামান্য সুখ স্বাচ্ছন্দ্য টুকু নিয়েও অভিযোগ জানানোর উপায় নেই তাদের। তারা যদি কোনো মূহুর্তে ক্ষেপে ওঠে তবে অন্য আরেক কমিউনিস্ট রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের মতোই চীনের ধ্বসে পড়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এই নাগরিক শক্তিকে চীন অত্যন্ত ভয় করে। বাইরে থেকে কোনো খবর বা বিদেশী স্বাধীন দুনিয়ার ছবি ফুটে ওঠে এমন কোনো গান-সিনেমা-বই সবই নিষিদ্ধ হয়ে যায় চীনে। শুধুমাত্র এই জনগনের ক্ষেপে ওঠার ভয়েই

করোনার প্রকোপে পড়ে চীনের এখন আক্ষরিক অর্থেই বেহাল অবস্থা। ফ্যাক্টরি গুলো বেশিরভাগ বন্ধ‚ রপ্তানি বন্ধ‚ করোনায় মৃত্যুহার এত বেশি যে সরকার সঠিক তথ্য বাইরে আনতে ভয় পাচ্ছে‚ বেকারত্ব বেড়ে গেছে ৩০% পর্যন্ত। এই মূহুর্তে প্রচলিত অব্যবস্থা নিয়ে চীনের মানুষ অত্যন্ত অসন্তুষ্ট‚ তাদের যদি কোনো রকমে ঠেকিয়ে রাখা না যায় তবে যেকোন মূহুর্তে চীনে গনআন্দোলনের জেরে কায়েমী স্বার্থের গদি ওল্টাতে পারে। ইতিমধ্যেই একবার তিয়েন আন মেন স্কোয়ারের গনতন্ত্রকামী ছাত্র আন্দোলনের চীনের সরকার প্রায় ভেঙ্গে পড়তে চলেছিলো‚ উন্মুক্ত রাস্তায় আর্মি ট্যাঙ্ক নামিয়ে ছাত্রদের উপর গনহত্যা চালিয়ে কমিউনিস্ট সরকার সেই বারের জন্যে বেঁচে যায়।

তাই এই মূহুর্তে আর কোনো ঝুঁকি না নিয়ে বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে পায়ে পা বাঁধিয়ে ঝামেলা করে চীন চাচ্ছে জনগণের অসন্তোষকে ধামাচাপা দিয়ে তাদেরও এই যুদ্ধ প্রচেষ্টায় সামিল করে নিতে। আর শুধু এখনই না‚ এর আগেও ১৯৬২ তে চীন যখন ভারত আক্রমণ করে তখন চীনে চলছিলো টানা চার বছর ধরে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ। অসংখ্য মানুষ মারা গিয়েছিল মাওসেতুং এর খামখেয়ালিপনার ফলে তৈরী সেই দুর্ভিক্ষে। আর তখনই সাধারণ মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে ভারত আক্রমণ করে বসে চীন।

এই সময়ে চীনের জিডিপি আর মানুষের সন্তুষ্টি – এই দুইএর উপর নির্ভর করছে সেখানে কমিউনিস্ট শাসন ও চীন সাম্রাজ্যবাদের ভবিষ্যৎ! যদি একবার জিডিপি পড়ে যায় তবে মানুষ অবধারিতভাবে অর্থনৈতিক দুরবস্থা সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। প্রসঙ্গত যে সোভিয়েত এর ভেঙে যাওয়ার পেছনেও অন্যতম কারণ ছিলো গ্লাস্তনস্ত ও পেরেস্ট্রাইকার ফলে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুরাবস্থা মানুষের সামনে ফাঁস হয়ে যাওয়া

আর চীনের এই জিডিপির পতন ঘটাতে পারি আমরাই। আমাদের সেনাবাহিনী করবে বুলেট ওয়ার আর আমরা করবো ওয়ালেট ওয়ার। অর্থাৎ সোজা ভাষায় চীনের সামগ্রী কেনা বন্ধ করে দেবো আমরা। একটু ভেবে দেখুন আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের কত জিনিস‚ জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠের উপকরণ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত জিনিসই আমরা আনি চীন থেকে। বিকল্প ভারতীয় দ্রব্যগুলির না ব্যবহার করে‚ ভারতীয় ইন্ড্রাস্টির ক্ষতি করে তুলনামূলকভাবে সস্তা কিন্তু অত্যন্ত কম সময় টেকা চীনা দ্রব্যগুলোই কিনি আমরা। আর এর ফলে প্রতি বছর চীনে কত টাকা যাচ্ছে জানেন আমাদের পকেট থেকে ? ৫.২ লক্ষকোটি টাকা। আর চীন থেকে ভারতে আসছে? মাত্র ১.২ লক্ষকোটি টাকা। অর্থাৎ চীন ও ভারতের বানিজ্যিক ঘাটতি হলো ৪.২
লক্ষকোটি টাকা। আর এই টাকা সরাসরি অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে যা কিনা তাক করা আছে আমাদেরই দেশের দিকে‚ আমাদের জওয়ানদের দিকে‚ আমাদের স্বাধীনতার দিকে।

এই মূহুর্তে ভারতের ১৩০ কোটি জনগণ ও ৩ কোটি প্রবাসী ভারতীয় যদি একসাথে চীনা সামগ্রী বয়কটের আন্দোলন শুরু করে তবে খুব শিগগিরই তা চীনকে একটা বড়সড় ধাক্কা দেবে। এমনিতেই করোনা ভাইরাস জনিত ঘটনায় সারা পৃথিবী চীনের উপর ক্ষেপে আছে‚ যদি ভারতীয়দের এই বয়কট চীনা সামগ্রী আন্দোলনে তাদেরও সামিল করা যায় তবে বৃহত্তর আকারে এই বয়কট সেটাই ঘটিয়ে দেবে যার ভয় চীন চিরকাল পেয়ে এসেছে। অর্থাৎ সোভিয়েত এর মতোই তাদের অর্থনীতি ধ্বসিয়ে দেবে‚ চীনের জনগণ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে ও ভারতবিরোধী কমিউনিস্ট সরকার পড়ে যাবে। এই মূহুর্তে ভারতের জন্য সবথেকে হুমকি থেকে মুক্ত হবো আমরা।

আর এতো গেলো হার্ডওয়্যারের কথাএবার আসি সফটওয়্যার ও অ্যাপসের ব্যাপারে। আমরা প্রতিনিয়ত যে অ্যাপস ও সফটওয়্যার ব্যবহার করি তার একটা বড় অংশই চীনের তৈরী। ক্লাব ফ্যাক্টরি‚ জেন্ডার‚ টিকটক‚ শেয়ার ইট‚ বিউটি প্লাস‚ ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যান‚ ইউ সি ব্রাউজার সহ অসংখ্য অ্যাপস আছে যা চীনা প্রোডাক্ট। এর বিকল্প ভারতীয় অ্যাপস অবশ্যই আছে। কিন্তুু সেগুলোর বদলে আমরা চীনা অ্যাপস ব্যবহার করি‚ আর এর ফলে কোটি কোটি টাকা চলে যাচ্ছে চীনে। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিলেই ভারতের উপর চীনা অ্যাপস গুলোর নির্ভরতা বোঝা যাবে। এই মূহুর্তে ৪৬৬.৮ মিলিয়ন ভারতীয় টিকটক অ্যাপ ব্যবহার করে‚ আর চীনে ব্যবহার করে মাত্র ১৭৩.২ মিলিয়ন। অর্থাৎ এই সব অপ্রয়োজনীয় অ্যাপসের ব্যবহারের ফলে চীনের অর্থনীতিত আমরা ঠিক কতটা অবদান রাখছি তা আপনারা সহজেই অনুমান করে নিতে পারেন।

এখন যেটা সবথেকে বেশী প্রয়োজন তা হলো চীনের বিরুদ্ধে জবরদস্ত নাগরিক জবাব। আর এই বয়কট চীনা সামগ্রী আন্দোলন ভারতের জন্যেও বরদান হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমাদের সামনে এই ভিশন রেখেছেন‚ আত্মনির্ভরতা। অর্থাৎ চীনের বা অন্য কোনো বিদেশি শক্তির উপর নির্ভর না থেকে নিজেদের ব্যবহৃত সামগ্রী ভারতেই উৎপন্ন করা। আর সেটা তখনই সার্থক হবে যখন আমাদের দেশের উদ্যোগপতিরা চীনা দ্রব্যের বিকল্প উৎপাদন করে লাভবান হবেন‚ আমরা চীনা দ্রব্য বয়কট করে তাদের কারখানায় তৈরী স্বদেশি জিনিস ব্যবহার করবো। এতে আমাদের দেশের আয় বাড়বে‚ বাজেট বাড়বে ফলে ভারত সীমান্তে আরও জোরদার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আয়োজন করতে পারবে। আর চীনও অর্থের অভাবে তাদের সমর সরঞ্জামের পেছনে কম খরচ করতে বাধ্য হবে।

তাই সবার কাছে আমার আবেদন‚ আপনারা চীনা দ্রব্য বয়কট করুন। আমাদের উচিৎ ১ সপ্তাহের মধ্যে চীনা অ্যাপস ও সফটওয়্যার ও ১ বছরের মধ্যে চীনা হার্ডওয়্যার বর্জন করা। স্বাভাবিকভাবেই হার্ডওয়ার প্রতিস্থাপন ও বিকল্প খুঁজে পেতে সময় লাগবে‚ তাই অন্তত এক বছর প্রয়োজন‚ কিন্তু অ্যাপস ও সফটওয়্যার তো আমরা এখনই বর্জন করতে পারি। তাইনা?

আমরা শুধু নিজেরাই চীনা দ্রব্য বয়কট করবো তাই নয়‚ অন্যেদেরও উৎসাহিত করবো ও যুক্তি দিয়ে বোঝাবো কেন চীনা দ্রব্য বয়কট করা প্রয়োজন। আমাদের মনে রাখা উচিৎ যে এর আগেও একবার আমরা ভারতীয়রা বয়কট ও স্বদেশি (ভারতীয় সামগ্রী ব্যবহার ) এর মাধ্যমে ভেস্তে দিয়েছিলাম বাংলাকে ভাগ করার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী কুটিল চক্রান্ত। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বাধ্য হয়েছিল আমাদের সামনে ঝুঁকতে। আর এবার চীনা সাম্রাজ্যবাদের পালা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.