বিকাশ দুবে একটি এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে। যে গাড়িটা থেকে পালাতে গিয়েছিলো‚ তার উল্টে পড়ে থাকা ছবিও পুলিশ আমাদের দেখিয়েছে। যারা কোনো প্রমাণ ছাড়াই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলতে শুরু করেছে‚ সেই সন্দেহবাতিকদের থেকে পুলিশকেই আমি স্বাভাবিকভাবে বেশী বিশ্বাস করি। এই লোকগুলোই বাটলা হাউজ এনকাউন্টারকে মিথ্যে বলে সন্দেহ করেছিলো‚ যে এনকাউন্টার করার সময় একজন নিবেদিতপ্রাণ পুলিশ অফিসার নিহত হন। এই কংগ্রেসী পার্টি তখন নিজেদের পুলিশকেই সন্দেহ করেছিলো। নিজেদের ইসলামিস্ট মালিকদের অনুকরণে কুখ্যাত শাহাবুদ্দিন আর “বিহার কি বেটি” ইশরাত জাহানের এনকাউন্টারকে তারা মিথ্যে বলে প্রচার করে।
পুলিশরা যখন গুন্ডা বা সন্ত্রাসবাদীদের হাতে মারা পড়ে তখন আমাদের তথাকথিত মানবাধিকার কর্মীরা মুখে কুলুপ এঁটে থাকে। কেউ কেউ তো আবার এই হত্যাগুলোতে আনন্দ প্রকাশও করে‚ বিশেষতঃ যদি সেগুলো মাওবাদীদের দ্বারা ঘটে‚ তাহলে। ছত্তিশগড়ে অতিরিক্ত মানবিকতা দেখাতে গিয়েই নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচুর জওয়ান শহীদ হয়েছিলেন। আমরা এমন অনেক উকিলকেই জানি যারা গুজরাট দাঙ্গায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে জড়িত দেখানোর জন্য সাক্ষীদের মিথ্যে সাক্ষ্য দিতে বলেছিলেন। যদিও হাইকোর্টের গ্রেফতারি পরোয়ানার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি জামিন পেয়ে যান।
যখনই কোনো পুলিশ এনকাউন্টার ঘটে‚ তক্ষুনি একটি রেডিমেড বিতর্ক শুরু হয়ে যায় যে এনকাউন্টারটি মিথ্যে ছিলো।
সাধারণত মোদীপন্থী এবং বিজেপিপন্থী অবস্থানের জন্য পরিচিত একজন টিভি প্যানেলিস্ট এই ঘটনাকে কাঠুয়ার মিথ্যে ধর্ষণ মামলার সঙ্গে তুলনা করেছেন‚ যার কোনও অপরাধের ইতিহাস নেই। এবার বরং একটু অন্য প্রসঙ্গে যাওয়া যাক।
অনেকেই জানেন না যে মুম্বাইয়ের পুলিশ কমিশনার মি. ওয়াই সি পাওয়ারের সময়ে এনকাউন্টারই স্বাভাবিক হয়ে গেছিল। আর এর সমর্থনে ছিলো রাজ্য সরকার। তার বাহিনী ভারদারাজন মুদালিয়র গ্যাঙের সদস্যদের ১৯৮০-র দশকে এনকাউন্টার করে। চূড়ান্ত খারাপ অবস্থায় বরদারাজন মারা যান। কুখ্যাত হাজি মস্তান শেষকৃত্যের জন্য তার দেহ ভারতে ফিরিয়ে আনে। এর থেকেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের ক্ষমতা আমরা অনুমান করতে পারি।
বর্তমানে উদারপন্থী, বামপন্থী, ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির নয়নের মণি মিঃ জুলিও রেবেরো‚ এনকাউন্টারের সাহায্যে মুম্বাই শহরকে গুন্ডা এবং তোলাবাজদের অত্যাচার থেকে মুক্ত করেছেন। মধ্যবিত্ত মানুষরাও আগে এদের ভয়ে রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারতো না। মুম্বাই সিনেমার জগত কয়েক দশক ধরে ছিলো আন্ডারওয়ার্ল্ডের দখলে। হয়তো বর্তমানেও কিছুটা আছে। একমাত্র গুলশান কুমার এর প্রতিবাদ করেছিলেন। আর তাকেও এর মূল্য চোকাতে হয়েছিলো চরম ভাবে। আমাদের আইন ব্যবস্থা যে কতটা বেহাল তা বোঝা যায় এখান থেকেই যে‚ তার খুনীর জামিন হয়ে যায় ও তারপর ২২ বছর পর তারা ধরা পড়ে।
বর্তমানে উদারপন্থী, বামপন্থী, ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির নয়নের মণি মিঃ জুলিও রেবেরো‚ এনকাউন্টারের সাহায্যে মুম্বাই শহরকে গুন্ডা এবং তোলাবাজদের অত্যাচার থেকে মুক্ত করেছেন। মধ্যবিত্ত মানুষরাও আগে এদের ভয়ে রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারতো না। মুম্বাই সিনেমার জগত কয়েক দশক ধরে ছিলো আন্ডারওয়ার্ল্ডের দখলে। হয়তো বর্তমানেও কিছুটা আছে। একমাত্র গুলশান কুমার এর প্রতিবাদ করেছিলেন। আর তাকেও এর মূল্য চোকাতে হয়েছিলো চরম ভাবে। আমাদের আইন ব্যবস্থা যে কতটা বেহাল তা বোঝা যায় এখান থেকেই যে‚ তার খুনীর জামিন হয়ে যায় ও সে ২২ বছর পর ধরা পড়ে।
সমালোচকরা পাপ্পু যাদব বা রাজা ভাইয়াদের নিয়ে কান্নাকাটি করলেও‚ শেষ পর্যন্ত তাদের কোনো ক্ষতি হয় না। আমরা দেখেছি একজন মুখ্যমন্ত্রী কিভাবে নির্ভয়া ধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্তকে সেলাই মেশিন উপহার দিতে পারেন। কিন্তু এর পরেও সমালোচকরা চায় না যে পুলিশ কঠোর আচরণ করুক‚ অবশ্য যতক্ষণ না সে নিজেই সমাজবিরোধীদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে‚ ততক্ষণই। অন্য আরেক ক্রিমিনাল আবু সালেমকে মিডিয়া রীতিমতো সেলিব্রিটি বানিয়ে দিয়েছিলো। তার জন্ম‚ তার বেড়ে ওঠা‚ তাকে শুভেচ্ছা জানানো সহ এমন কিছু মিডিয়া বাদ দেয়নি যাতে তাকে সেলিব্রিটি না বানানো হয়। হয়তো এই বিকাশ দুবেও একজন সেলিব্রিটি হয়ে উঠতো‚ হয়ে উঠতো কোনো বিখ্যাত রাজনীতিবিদ। আর তারপর এই জনতাই চাইতো যাতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এই ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায় যে পুলিশ এনকাউন্টারগুলির পেছনে কোনও রাজনৈতিক ছায়া নেই। অনেকেই জানেন না যে‚ ২০০০-২০০৮ সালের মধ্যে ইউপি, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, দিল্লি এবং অন্ধ্র প্রদেশে সর্বাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিলো। প্রায় সমস্ত রাজ্যে সরকারগুলি বেশিরভাগ বর্তমান বিরোধী দলের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
পাঞ্জাবে যখন চরম বিশৃঙ্খলা চলছিলো‚ তখন পাঞ্জাব পুলিশ পুরোপুরি হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। নিয়মিতভাবে তাদের হত্যা করা হচ্ছিলো। ছাড় পাচ্ছিলো না তাদের পরিবারও। কোনো মানবাধিকার কর্মীই সেদিন তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। জঙ্গিদের বন্দুক নামিয়ে রাখতেও আহ্বান জানায়নি তারা। আর তারপরই সুপার কপ কে.পি.এস. গিল মাঠে নামেন আর পাঞ্জাবের দৃশ্য পুরোপুরি বদলে যায়। না তিনি জঙ্গীদের উদ্দেশ্যে শান্তির বাণী শোনাননি। তিনি বন্দুকেই তাদের জবাব দিয়েছিলেন। আর তারপরেই পাঞ্জাবে দেখা মিলেছিলো মানবাধিকার কর্মী নামের শকুনদের। পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে ১০০ এরও বেশি মানবাধিকার হরণের ফৌজদারি মামলা করে তারা। এদের কারণে লাঞ্ছিত হয়ে দু’বার রাষ্ট্রপতির পদক বিজয়ী এ. এস. সন্ধু আত্মহত্যা করেন। সেদিনের সরকারও পুলিশের পাশে দাঁড়ায়নি। তাদের জন্য কেউ শোক প্রকাশ করেনি। যে পুলিশ রাষ্ট্রকে চিরকাল সন্ত্রাসের থেকে রক্ষা করেছে‚ তাদের সমর্থনে কেউ এগিয়ে আসেনি।
নিরাপত্তা বাহিনীকে কিভাবে বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয় তার সবথেকে ভালো উদাহরণ বোধহয় কাশ্মীর। সবাই জানে কিভাবে একজন করিৎকর্মা মেজরকে ক্রমাগত আক্রমণ করে যাওয়া হয়েছে‚ যতদিন না তাকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়। তার দোষ এটাই ছিলো যে‚ সে নিজের সহকর্মীদের বাঁচিয়েছিল। তার দোষ, তিনি তার লোকদের সন্ত্রাসবাদী ও পাকিস্তান দ্বারা প্ররোচিত ভারতবিরোধী জনতার থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন।
এই সমাজেই বিকাশ দুবেদের এনকাউন্টার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। হতেই পারে যে কিছু বাড়াবাড়ি হয়েছে। তবে আজ থেকে আমাদের এই অভ্যাস করতে হবে যে এনকাউন্টার দেখলেই আমরা আর মিথ্যে বলা অভিযোগ জানাবো না। পুলিশকে এমনিতেই প্রচুর বাধা নিয়ে কাজ করতে হয়। তারউপর আমাদের এই আচরণ তাদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। যদি আমাদের সন্দেহ হয় তো আমরা নিয়ম মেনেই তথ্য জানতে পারি। কিন্তু কিছু না জেনেই অভিযোগ একদমই নয়।
কেবল গুন্ডা বা সন্ত্রাসী নয়‚ সাধারণ মানুষ আর আইনের রক্ষকদেরও জীবনের দাম রয়েছে। আমরা অন্ধভাবে পুলিশের বিরোধিতা করি আবার আমরাই চাই যে তারাই আমাদের অপরাধী‚ লুটেরা আর সন্ত্রাসবাদীদের হাত থেকে রক্ষা করবে। এগুলো ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। আমাদের এর থেকে মুক্ত হওয়া উচিত।
রতন শারদা (Ratan Sharda)
https://kreately.in/vikas-dubey-episode-shows-our-jekyll-hyde-mentality/