প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বেয়ার গ্রিলসের ‘Man vs Wild’ অরণ্য অভিযান এর পিছনে লুকিয়ে ছিল কিছু উদ্দেশ্য। যা এখন সামনে আসতে শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দফতর ও ডিসকভারি চ্যানেল জানিয়েছে যে এই অভিযানের কারণ শুধু পর্যটনের প্রসার নয়, এর সাথে জাতীয় উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী দফতর জানিয়েছে এই অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য হলো দেশের মাটিতে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের কথা গোটা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা, এছাড়া এই অনুষ্ঠান থেকে যা টাকা আসবে সেটিকে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে জমা করা হবে। মোদি ও গ্রিলসের এই ‘ম্যান ভার্সাস ওয়াইল্ড’ এর পর্বটি বিশ্বের ১৬৫টি দেশে সম্প্রচারিত হয়েছে।
ডিসকভারি চ্যানেল জানিয়েছে যে বাঘ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভারতের চেষ্টা সত্যি প্রশংসনীয়, তাই বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও ভারতকে সাহায্য ও সমর্থন করা এই শো এর প্রধান উদ্দেশ্য। এছাড়া জানানো হয়েছে এই শো দিয়ে পাওয়া সব টাকা যাবে দেশের বাঘ বাঘ সংরক্ষণ খাতে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে এবং নমামি গঙ্গে প্রকল্পে-এরকমটাই জানিয়েছে ডিসকভারি চ্যানেল ও প্রধানমন্ত্রী দফতর।
স্যামন মাছ ধরে এই শো এর জন্যপ্রিয়তা অনেকটাই, আর এই শো এর ইন্সট্রাক্টর হলো ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সদস্য অ্যাডভেঞ্চারার বেয়ার গ্রিলস। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ‘ম্যান ভার্সাস ওয়াইল্ড’ এর এই শুটিং করেছিল তখন কাশ্মীরে পুলওয়ামা হত্যাকান্ড হয়েছিল যেখানে ভারতের ৪০ জনের বেশি সেনাদের পাকিস্থানের সন্ত্রাসবাদীরা মেরে দেয়। তাই কাল যখন এই শো দেখে অনেক লোক অনেক ধরনের তীক্ষ্ণ মন্তব্য দেয় সোশ্যাল মিডিয়াতে, কেউ বলে যে যখন পুলওয়ামা সেনাদের রক্তে ভাসছিল মোদি শুটিং করতে ব্যস্ত ছিল, কেউ বলে এটা শুধু পর্যটকের প্রসার ছাড়া কিছু না। কিন্তু জানিয়ে দি প্রধানমন্ত্রী দফতর দিয়ে জানানো হয়েছে মোদি সরকার বন্য প্রাণ সংরক্ষণের জন্য অনেক ধরনের প্রকল্প নিয়েছে। যেমন গোটা দেশ জুড়ে বাঘ সংরক্ষণের প্রচার করে চলেছে মোদি সরকার এবং ডিসকভারি চ্যানেল ভারতের এই বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতেই ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আর এই প্রচেষ্টা পএকটু একটু করে সফলের পথে এগোচ্ছে, যেমন- ২০১০ এ উত্তরাখণ্ডে বাঘের সংখ্যা ছিল ৩৪০ টি যেটা এখন বেড়ে ২০১৮ তে ৪৪২ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রিলসের ‘ম্যান ভার্সাস ওয়াইল্ড’ শো-এর অংশ এর আগে অনেক দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছে, যেমন- আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ওবামার সাথে গ্রিলস আলাস্কার দুর্গম জঙ্গলে অ্যাডভেঞ্চারে গিয়েছিল এবং এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে।
মোদি-গ্রিলসের ‘ম্যান ভার্সাস ওয়াইল্ড’ শো কাল ৯ টায় টিভিতে আসার পর প্রায় গোটা দেশবাসীর চোখ ছিল টিভিতে। কালকের এই শো দেখার পর অনেকে এর নামকরণ করেছে সোশ্যাল মিডিয়াতে “বন কি বাত!” ন্যাশনাল পার্কের এক চক্কর খেয়ে হেলিকপ্টারকে কিছু দূরেই ল্যান্ড করলেন গ্রিলস। এই অভিযানের অংশ ছিল পিএমও দফতরের অফিসারদের কথা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী মোদিকে হাতির মল শুঁকে খুঁজতে খুঁজতে এগিয়ে যেতে হবে। তারপর জল আর নিম পাতার চায়ের সাথে চর্চার বিষয় শুরু হয় কাঠকুটো, বাঁশ, প্লাস্টিক দ্বারা বানানো ছোট ভেলায় চেপে নদী পার হওয়ার সময়। অফিসারেরা জানিয়েছিল নদীতে ভয়ের কারণ ছিল না কারণ স্পেশাল প্রটেকশন গ্রূপ ছিল তাদের আশেপাশে। তারপর কুমিরছানা ধরার গল্প, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা চলতে থাকে। প্রধানমন্ত্রী মোদি যেহুত নিরামিষ ভোজী তাই নিম পাতার চা দিয়ে শুরু হয় তাদের গল্প কিন্তু যখন এর আগে ওবামার সাথে গেছিলো আলাস্কার জঙ্গলে তখন নদী থেকে স্যামন মাছ ধরে খেয়েছিলেন গ্রিলস।
গ্রিলসের সাথে এই ‘ম্যান ভার্সাস ওয়াইল্ড’ অরণ্য অভিযানে জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কের কোর এলাকায় বিপদের ঝুঁকি থাকার সম্ভবনা আছে জেনেও মোদি নিজের সাথে কোনো সুরক্ষা ব্যাবস্থা নেননি ও যেই পোশাক পড়েছিলেন সেটিও নিজের পছন্দের পড়েছিলেন। পিএমও-র অধিকারীরা এই শো তে তিনটি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল- দুর্গম অরণ্যে পদযাত্রা, কাঠকুটো, বাঁশ, প্লাস্টিক দিয়ে বানানো ছোট ভেলায় চেপে নদী পার হওয়া এবং প্রকৃতি সংরক্ষণের বিষয় চর্চা। এছাড়া এসপিজি, বন দফতর, অভিযানের ছায়াসঙ্গী হয়ে তো পাশে ছিলেনই। প্রধানমন্ত্রী মোদি এই শো তে তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেছেন- জীবনে ওঠা নামা থাকবে। কিন্তু ইতিবাচকতা যেন না চলে যায়।” আমি কে, আমি কী, কখনও তা নিয়ে ভাবিনি। শুধু ভেবেছি কাজ নিয়ে। উন্নয়ন নিয়ে।”