আমার কিশোর বেলার অনেকটাই কেটেছে তাবলীগি জামাতে। এমন কি এক সময়ে ওই সংগঠনের আমীর-ও (স্থানীয় শাখার প্রধান) হয়ে উঠেছিলাম। দিল্লির (Delhi) মারকাজে কিছুদিন থেকেওছি। ফলে খুব কাছ থেকে ওদের দেখার সুযোগ হয়েছিল। ওদের ভাবনা-চিন্তাগুলো অনেকটা এরকম:-
১) মুসলমানরা ভুগছে, ক্ষমতা হারিয়েছে। তার কারণ হল এই, যে মুসলিমরা মহান ইসলামের গোঁড়া আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে।
২) তাই আমাদের ফিরে যেতে হবে সেই কঠোর, ধার্মিক, সংঘবদ্ধ, আপোষহীন ইসলামী রীতিনীতিতে। অন্য মুসলিমদের ধর্ম শেখাতে গিয়ে নিজেকেও শিখতে হবে। সেজন্য নিজেকেও সৎ, ধার্মিক, ভদ্র, নম্র হতে হবে, বিশেষ করে অন্য মুসলমানদের কাছে।
৩) যখন তুমি এবং অন্য মুসলিমরা আবার ইসলামের পথে ফেরত আসবে, তখনই তোমাদের খিলাফত (মুসলমানদের হাতেই শাসন ক্ষমতা) প্রাপ্তি হবে। আল্লা আগেও এটা বহুবার করেছেন এবং আল্লা মুসলিমদের এই প্রতিশ্রুতিই দিয়েছেন। ততদিন পর্যন্ত রাজনীতিতে অংশ নেওয়া দূরে থাক, এই নিয়ে কথা বলারও দরকার নেই।
৪) একবার তাবলীগিরা ক্ষমতায় চলে এলে, ইসলামী আইন চালু করা হবে। ওরা যেটা প্রচার করে বেড়ায়, তারই এক ঝলক নীচে দিলাম:-
ক) নাচ-গান ইত্যাদি হারাম, অতএব এগুলোকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে।
খ) মদও হারাম, তাই এটাকেও পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হবে।
গ) আধুনিক শিক্ষাদীক্ষা হল ইহুদি এবং নাসরানী (বিলিতি) দের বানানো। তাই এগুলোর বদলে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হবে।
ঘ) কাফের-দের (যারা অমুসলিম) ইসলামী আইন দিয়ে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
ঙ) মেয়েদেরকেও ইসলামী আইনের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
চ) কাফের এবং মহিলাদের সাথে বন্ধুত্ব করা হারাম, ফলে এগুলোকেও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে।
ছ) মূর্তি পূজাও হারাম, একেও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে।
জ) সমস্ত মুর্তিগুলোকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ধ্বংস করতে হবে।
ঝ) খুব ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মগজ ধোলাই করে দিতে হবে।
ঞ) আক্ষরিক ভাবে এবং ব্যবহারিক অর্থে ইসলামী/শরিয়তি আইনকে সর্বত্র বলবৎ করতে হবে।
এদের সাথে আমার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় এই দুটো ঘটনার পরে। দুটো ঘটনা প্রায় পরপর ঘটেছিল।
১) ওরা আমার মিউজিক প্লেয়ারটাকে চুরি করে ওটাকে নষ্ট করে দিয়েছিল। ধরা পড়ার পরে ওরা প্রথমে মিথ্যে বলে, অস্বীকার করে, তারপর শুরু হয় ভয় দেখানো আর হুমকি দেওয়া।
২) আমাকে বলা হয়েছিল আমার কাফের বন্ধুর সাথে কোন সম্পর্ক না রাখতে। কারণ ওদেরকে মারতে হবে, বন্ধু বানানো যাবে না। এটাই আদেশ।
করোনা মহামারী বিষয়ে তাবলীগি–দের মতামত হল:-
আল্লা মানুষকে শাস্তি দিতে এই জীবাণু বানিয়েছেন। কারণ নবী যে রাস্তা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন, মানুষ সেটা থেকে বিচ্যুত হয়েছে। কিন্তু আল্লা অবশ্যই বিশ্বাসীদের রক্ষা করবেন, তাই আল্লার পথেই পুরোপুরি ফিরতে হবে।
জাতি বিষয়ে তাবলীগি-দের মতামত:-
জাতি আবার কি? ইসলাম কোন জাতিতে বিশ্বাস করে না। পৃথিবীতে শুধু দুটোই জাতি। মুসলিম আর অমুসলিম।
তাবলীগি জামাতকে ইসলামী ভাবধারার বিশুদ্ধবাদী, কট্টর, দক্ষিণপন্থী রাজনীতি বলা যেতে পারে। মূলতঃ সৈয়দ, শেখ, পাঠানরাই এর স্রষ্টা এবং প্রধান। এরা কোনোভাবেই বোকা বা গাধা নয়। বরং অন্যদের থেকে আরেকটু বেশি চালাক। তাবলীগিদের মধ্যে যাদের রাজনৈতিক আকাঙ্খা আরেকটু বেশি, তারা জামাত ইসলামীতে ঢুকে পড়ে। ভারতে সৃষ্টি হলেও, তাবলীগীরা আজকে বিশ্বের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে পড়েছে। এদেরকে কিছুতেই হালকা ভাবে নেওয়া যাবে না। এরা সুযোগ পেলেই মারাত্মক।
(আজাদ কবিরের মূল লেখা থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন স্মৃতিলেখা চক্রবর্তী)
মূল রচনা:- আজাদ কবির (Azad Kabir)
অনুবাদ:- স্মৃতিলেখা চক্রবর্তী (Smritilekha Chakraborty)
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=3150676444951797&id=100000284165062