ভিডিও কলিংয়ে কোভিড উপসর্গ শুনে কোভিড টেস্ট করতে বলা হয়েছিল রোগীকে। তা শুনেই অগ্নিশর্মা রোগীর স্বামী! ফোন করে চিকিৎসককে রীতিমতো হুমকি দিলেন। “কী ভেবে আপনি কোভিড টেস্ট করতে বলেছেন? আমি এরপর কী করি আপনি দেখুন।” এভাবেই ভয় দেখানো হল চিকিৎসককে। এমন ঘটনায় শঙ্কিত দক্ষিণ বারাকপুরের বাসিন্দা ডা. শতাব্দী সরকার ভট্টাচার্য।
তাঁর কথায়, “ভিডিও কলিংয়ে টিটাগড়ের বাসিন্দা দেবশ্রী পাল নামে এক মহিলা জানান তাঁর নাক বন্ধ, স্বাদ পাচ্ছেন না। স্বাভাবিকভাবেই এই করোনা আবহে কোভিড টেস্ট করিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল সাধারণ কিছু এন্টিবায়োটিকও।” কিন্তু আচমকাই মারমুখী হয়ে ওঠেন দেবশ্রীর স্বামী অর্ণব পাল। চিকিৎসককে ফোন করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। হুমকি দেওয়া হয়, “এই চেম্বার ক’দিনের মধ্যেই বন্ধ করে দেব।” দক্ষিণ বারাকপুরের গ্রিনপার্কে দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে একাই থাকেন চিকিৎসক। স্বামী কর্মসূত্রে অন্য জেলায়। এমন হুমকিতে সন্ত্রস্ত হয়ে তিনি টিটাগড় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
কোভিড টেস্ট করাতে বলায় চিকিৎসকের উপর ক্ষেপে যাওয়াকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাব বলেই মনে করছেন অনেকে। কোভিডকে অনেকক্ষেত্রেই মারণ রোগ ভাবছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু আর পাঁচটা সাধারণ ফ্লুর মতো কোভিডও (COVID-19) যে সেড়ে যায়, তা ভাবতে পারছেন না। ফলে চিকিৎসক কোভিড টেস্ট করতে বলায় তাঁর উপর অযথা ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন রোগীর পরিবার।
অভিযুক্ত রোগী ও তাঁর স্বামী
এদিকে কোভিড আবহে বন্ধ সিংহভাগ চেম্বার। মোবাইলের ভিডিও কলিংয়ে সামাজিক দূরত্ব মেনেই চলছে রোগী দেখা। এমনভাবে রোগী দেখতে গিয়েই হুমকি মেলায় ক্ষুব্ধ অন্যান্য চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের প্রশ্ন, “রোগীর স্বার্থেই চিকিৎসকরা ভিডিও কলিংয়ে রোগী দেখছেন। সেখানে যদি রোগী দেখার পর এইরকম হুমকি আসতে থাকে তাহলে তো রোগী দেখাই বন্ধ করে দিতে হয়।” ওয়েস্টবেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সম্পাদক ডা. কৌশিক চাকি জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি তাঁরা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল এসোসিয়েশনকে জানিয়েছেন। অত্যন্ত নোংরা ভাষায় ওই চিকিৎসককে অপমান করা হয়েছে।
চিকিৎসককে ফোন করে শুধু হুমকিই দেননি অর্ণব পাল। নিজেই তা রেকর্ড করে সেই রেকর্ড ভাইরাল করে দেন। যেখানে শোনা গিয়েছে, হুমকিতে মহিলা চিকিৎসককে এও মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, “আপনার বাড়িতে ছোট মেয়ে আছে।” ডা. মাখনলাল সাহার কথায়, “এ ঘটনা অত্যন্ত নক্ক্যারজনক।” তবেসমালোচনার ঝড় উঠতেই সোশ্যাল সাইটে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন অর্ণব পাল আর তাঁর স্ত্রী।