চীনের জীবাণু-যুদ্ধ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহড়ামাত্র

করোনা ভাইরাস। একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকেই এই মারণ-ভাইরাস গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে বিশ্বের সমস্ত দেশের অর্থনীতির ভিত। বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানরা পর্যন্ত আক্রান্ত। ইংল্যান্ডের রাজকুমার প্রিন্স চার্লস আক্রান্ত। স্পেনের রাজকুমারী মারিয়া টেরোসা করোনা ভাইরাসের আক্রমণে মৃত। ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে আর মেরামত করা যাবে না, এই শঙ্কায় আত্মঘাতী জার্মানির দ্ৰেহসে প্রদেশের অর্থমন্ত্রী থমাস শেফার। রানি এলিজাবেথ-সহ ইংল্যান্ডের রাজ পরিবারের প্রায় সকলেই ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে। সেখানকার স্বাস্থ্যমন্ত্রীও আক্রান্ত।

স্পেন, ইতালি, আমেরিকায় পিলপিল করে মরছে মানুষ। ইন্দোনেশিয়া-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে জাপান ছাড়া প্রায় প্রত্যেকেই কম-বেশি আক্রান্ত। জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস। কী এই ভাইরাস, কত তার শক্তি? কীভাবে সমস্ত মহাদেশ উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ল এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রকোপ। কে দায়ী? কোনও মানুষ? কোনও গোষ্ঠী? কোনও দেশ? পিছনে রয়েছে কোনো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব? সে ষড়যন্ত্রের গভীরতা কতটা?

না, এখনও পর্যন্ত কোনও ষড়যন্ত্রের প্রতি সঠিক দিকনির্দেশ করা যায়নি। কবে তা সম্ভব কীভাবে তাও বলা শক্ত। কিন্তু যেটা চোখে দেখা যাচ্ছে—গোটা বিশ্ব তর্জনি তুলে ধরেছে একটি দেশের প্রতিই। দেশটির নাম চীন। হ্যা চীন। মাও-জে-দং-এর চীন নয়। কমরেড জিনপিং-এর নেতৃত্বাধীন চীনকেই গোটা বিশ্ব দাঁড় করাতে চাইছে কাঠগড়ায়। কেন?

কারণ, চীনেই করোনা ভাইরাস আক্রমণ হেনেছিল প্রথম। উহান প্রদেশে। আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ৮২ হাজার। মৃত্যু হয়েছে কম-বেশি সাড়ে তিন হাজার মানুষের। সময়কাল ও চীনের সরকারি তথ্যমতে, ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে। সাধারণভাবে হিসেব করলে, চীনকে এভাবে দায়ী করাটা সমীচীন নয়। কারণ ভাইরাসটা চীনে প্রথম সংক্রামিত হলেও, অস্বীকার করা যাবে না ওই সংক্রমণেই দেশের সাড়ে তিন হাজার মানুষ মারা গেছে। গোটা দেশ জুড়ে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৮২ হাজার মানুষ। তাহলে?

উত্তর খুঁজতে গেলে, অনেকগুলি প্রশ্ন তুলতে হবে যে প্রশ্নগুলির সঠিক উত্তর বিবেচনা করলেই মিলে যাবে অঙ্ক—কেন চীনকে দায়ী করছে গোটা গ্রহের মানুষ।

প্রশ্ন ১ : চীনে করোনা ভাইরাস প্রথম আক্রমণ করে ২০১৯-এর নভেম্বরে। অথচ চৈনিক প্রশাসন ডিসেম্বর মাসের মধ্যভাগের আগে তা বিশ্বকে জানতে দেয়নি। এমনকী এখনও যখন গোটা বিশ্ব আক্রান্ত তখনও চীনে বাস্তব পরিস্থিতি কী, সে ব্যাপারে কোনো সরকারি তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এত গোপনীয়তা কেন?

প্রশ্ন ২ : চীন থেকে সংক্রামিত ভাইরাস গোটা পৃথিবীকে গ্রাস করে নিল মাত্র দু’মাসের মধ্যে, অথচ উহান-হুবেই ছাড়া বাকি চীন অক্ষত রইল। কোন অঙ্কে ?

প্রশ্ন ৩ : হুবেই প্রদেশের দেড় কোটি মানুষের মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ। এঁরা কি জীবিত ? জৈব মানববোমা? নাকি এদের শোয়ানো হয়েছে কবরের অন্ধকারে।

প্রশ্ন ৪ : বেশ কিছু বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কেন চীন থেকে বিতাড়ন করা হলো? খবর প্রকাশ হয়ে যাবার ভয়ে?

প্রশ্ন ৫ : বেশ কিছু বিদেশি সাংবাদিককে কেন দেওয়া হয়েছে বিনা পয়সায় ফ্ল্যাট, নগদ অর্থ, গাড়ি ও জীবন যাপনের নানা উপকরণ? ভুল খবর প্রচারের জন্য?

প্রশ্ন ৬ : ভাইরাসের পর্দা ফাস করার জন্য দুই কারিগর-জনৈক সাংবাদিক এবং এক নামজাদা ডাক্তার লি ওয়েনলিয়াং-কে কেন মরতে হলো ওই করোনার আক্রমণেই।

প্রশ্ন ৭ : ইতালিতে ‘সিটি অব জয়’ শীর্ষক পর্যটক কেন্দ্রে ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখে Hug a Chinese (এজন চীনাকে আলিঙ্গন করে), I am a Chinese, not virus-hug me’-975 অনুষ্ঠানে কেন মদত দিল চীন?

প্রশ্ন ৮ : কেনই-বা ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনে সরকারি মদতে নববর্ষের মোচ্ছব হয়েছিল ?

প্রশ্ন ৯ : যখন কোরোনা ভাইরাসে উজাড় হয়ে গেল উহান প্রদেশ, তারপরেও সেখানকার ল্যাবরেটরিতে কেন রক্ষা করা হলো কোরোনা ভাইরসের স্যাম্পল?

প্রশ্ন ১০ : করোনা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পরেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) যখন ‘বিশ্বজোড়া মহামারী’ ঘোষণা করতে উদ্যত হলো তখন কেন চীন ভেটো দিয়েছিল?

প্রশ্ন ১১ : কেনই বা উন্নত দেশগুলি প্রতিষেধক বানানোর জন্য করোনা সম্পর্কে তথ্য চাইলেও চীন সাড়া দিল না?

প্রশ্ন ১২ : কোন স্বার্থে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কমিউনিস্ট অধিকর্তা টুইট করেছিলেন, কোরোনার হিউম্যান ট্রান্সমিশন হয় না?

প্রশ্ন ১৩ : চীন নিজেই কি প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ফেলেছে? এ প্রশ্নেও চীন নীরব কেন?

প্রশ্নগুলির প্রত্যেকটির পিছনে আছে কতকগুলো সত্য কাহিনি সেগুলিকে কোনোভাবেই চীন কোনোদিনই বানানো গপ্পো বলে প্রচার করতে পারবে না। কারণ আগুন ছাড়া কোনও ধোঁয়াই সৃষ্টি হতে পারে না।

চৈনিক ভাইরাস করোনার সংক্রমণের একেবারে শুরুর দিক থেকেই গোটা বিশ্বে ভাইরাল হয়ে যায় একটি উপন্যাসের নাম “The Eyes of Darkness’ । ডিন কুনজ-এর লেখা এই উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮১ সালে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন মা যিনি তাঁর সন্তানের আচমকা নিখোঁজ হওয়ার তদন্তে নেমে জানতে পারেন, তার সন্তানকে ছাত্র শিবির থেকে নিখোঁজ করে দিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল চীনের উহান প্রদেশে যেখানে তখন চলছিল প্রাণঘাতী উহান-৪০০ নামক ভাইরাসের ভয়াবহ প্রকোপ এবং ওই ভাইরাসটিকে উহানের বাইরে অবস্থিত RDNA জৈবিক রসায়নাগারে কৃত্রিমভাবে ৪০০ গুণ বেশি শক্তিতেশক্তিশালী করে তোলা হয়েছিল। ভাইরাসটির ক্ষতিকারক প্রভাব মানব শরীরে কতটা তার বিবরণ পড়তে গিয়ে গায়ে কাঁটা দেয়। এবং ঘটনাটিকে এবারও ঘটনাস্থল সেই উহান এবং অভিযোগ, ওই উহানেই করোনা ভাইরাস নিয়ে গবেষণা চলছিল কীভাবে ভাইরাসটির শক্তিবৃদ্ধি করা যায়। গবেষণা চলাকালীনই কোনোভাবে তা ছড়িয়ে পড়ে উহানে যে সম্ভাবনার কথা আগেই ব্যক্ত করেছিলেন ৮ জন। চিকিৎসকযাঁদের অন্যতম ছিলেন ৩৪ বছর বয়স্ক প্রতিবাদী ডাক্তার লি ওয়েনলিয়াং। কেউই বিশ্বাস করছেন না, উপন্যাসটির কাহিনি এবং এবারের করোনার আক্রমণ নেহাতই কাকতলীয় ঘটনা।

চীন বরাবরই বিশ্বের কাছে একটি স্বার্থপর এবং যুদ্ধবাজ দেশ বলে পরিচিত। চীন কোনোদিনই চায়নি, তাদের পিছনে ফেলে আর কোনো দেশ এগিয়ে যাক অর্থনৈতিক উন্নতিতে, শিল্পে, স্বাস্থ্যসেবায়। যার জন্য চীনের কাছে ভারত যতটা শত্ৰু, আমেরিকাও ততটাই সমান শত্রু। তাবড় বিশ্ব নেতারা এটাও বিশ্বাস করেন, চীন একমারাত্মক অস্ত্রে ঘায়েল করতে চায় গোটা বিশ্বকে। না, পরমাণু বোমা নয়, চীন চায় জৈবিক মারাণাস্ত্র বা বায়োওয়েপনের সাহায্যে বিশ্বের সবশক্তিকে ধ্বংস করতে।বিশিষ্ট বায়োওয়েপন বিশেষজ্ঞ এবং বায়োওয়েপন ব্যবহারের ওপর আইনি নিষেধাজ্ঞা বলবকরণের প্রবক্তা ডাঃ ফ্রান্সিস বয়েল (Dr. Francis Boyle) কোরোনা ভাইরাস চীনে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছিলেন, চীন কোরোনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চালাচ্ছিল সংগোপনে। অতি সাধারণ ফ্লু-র মতো ভাইরাসটিকে তীব্র শক্তিধর করে তোলার কাজ শেষ করার পর কনোরকমে ভাইরাস সমৃদ্ধ একটি ক্যাপসুল ফেটে যায় এবং তা ছড়িয়ে পড়ে উহানে। তিনি স্পষ্টতই দাবি করেন, “……. the coronavirus is an offensive biological warfare weapon with DNA- genetic engineerias”। চীন যে এ ব্যাপারে বহুদিন ধরেই উদ্যোগী হয়ে উঠেছিল, তারও প্রমাণ মেলে একদফা চীনা গবেষক যখন কানাডার একটি গবেষণাগারে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে ধড়া পড়ে যান কয়েক মাস আগেই।

উহান প্রদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে যায় উহানের সামুদ্রিক প্রাণী বিক্রির বাজারের এক বীভৎস ভিডিয়ো যেখানে দেখা গিয়েছিল, মানুষ নির্বিচারে কিনছে সব ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী—এমনকী অজগরের মতো বিশাল বিশাল সাপের খণ্ডিত দেহাংশও। গোটা বিশ্বে প্রচার হয়ে গিয়েছিল, ওই বাজার থেকেই ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। কিন্তু সে তথ্যকে অচিরেই মিথ্যা প্রমাণ করে দেন মার্কিন সেনেটর টম কটন যিনি টেলিভিশন সংবাদ ফক্স নিউজ-এ বসে দাবি করেন, সংক্রামণটি ঘটেছে উহানের ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে। প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল চীনের জনসংখ্যা কিছুটা কমিয়ে ফেলা পরোক্ষে গণহত্যা ঘটানোর মাধ্যমে। এখনও শোনা যাচ্ছে—ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিয়ে চীন হত্যা করেছে বিশাল সংখ্যক চীনাকে যা চৈনিক প্রশাসন প্রকাশ্যে আনছে না এবং বিদেশি সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করে রেখেছে টাকা, বাড়ি, গাড়ি ও জীবনযাপনের সবরকমের বিলাসবহুল উপকরণ উপঢৌকন দিয়ে।

গত বছর ১ নভেম্বর চীনে চালু হয় ৫ জি মোবাইল নেটওয়ার্ক। তারপরেই কোরোনার বিষ ছড়িয়ে পড়ে। জনপ্রিয় আমেরিকান গায়ক কেরি হিলসন তার ৪.২ মিলিয়ান অনুগত সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধুদের টুইটারে জানিয়ে দেন, ৫জি-র ট্রান্সমিশন রেডিয়েশনই করোনা ভাইরাসকে শক্তিশালী করে তুলেছে। চীনও এই প্রচারকে তাদের ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের আঙ্গিক করে তুলতে চেয়েছিল। কিন্তু পরে তদন্ত সাপেক্ষে গ্রেট ব্রিটেনের শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফুলফ্যাক্ট ওই তত্ত্বকে নস্যাৎ করে দেয়।

আমেরিকার জনপ্রিয় অ্যানিমেশন শো ‘সিম্পসনশ’ গত ৩০ বছর ধরে এমন কিছু গল্প প্রচার করেছে যা পরবর্তীকালে সত্য ঘটনা হিসেবেই ঘটে গেছে। যেমন, ১১ বছর আগে সিম্পসনশ একটি শোতে দেখিয়েছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হয়েছেন। একটি শো-তে দেখিয়েছিল, একটি জলাশয়ে ধরা পড়েছে তিন চোখওয়ালা একটি মাছ। অনেক বছর পরে আর্জেন্টিনার একটি জলাশয়ে সত্যিই ধরা পড়েছিল তিন-চোখো একটি মাছ। সিম্পসনশ এবারেও কামাল করেছে। ১৯৯৮ সালের একটি এপিসোডে দেখা গিয়েছিল, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ পাঠক বোল্ট ব্রকম্যান কোরোনাভাইরাস মহামারি থেকে বাঁচতে নিজের বাড়িতে বসে খবর পড়ছেন। অর্থাৎ সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং যা এবারেও হয়েছে বিশ্বের বহু দেশে। কার্যত বহু দেশই লকডাউন ঘোষণা করে এক ধরনের কাফু-পরিবেশে দিনাতিপাত করছে।

এই সমস্ত ঘটনাগুলির কোনোটাই অলৌকিকত্ব অথবা চীনের দায় প্রমাণ করে না। কিন্তু একথাও সত্য—সবটাই কাকতলীয় নয়। কোথাও না কোথাও অদৃশ্য সংযোগ তো রয়েছেই। আমেরিকা সহ বিশ্বের ক্ষতিগ্রস্ত বেশিরভাগ দেশই এখন দোষারোপ করছে চীনকে। এর মূল কারণ, করোনার আক্রমণকে মহামারী ঘোষণা করতে বাধা দিয়েছিল চীনই। কারণ অভিযোগ হল, একবার মহামারী ঘোষিত হলে প্রথম সংক্রামক দেশটিই দায়ী হবে। সংক্রমণের জন্য এবং তার জন্য চীনকে ক্ষতিপূরণের দায়ভার ঘাড়ে নিতে হবে।

অদূর ভবিষ্যতে চীন দায়ী হবে কিনা বা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হবে কিনা, সে কথা এখনই বলা যাবে না। তবে চোখ কান বুজে একটা কথা নিশ্চিন্তে বলা যায় যে, এই ভাইরাস সংক্রমণ একটি জৈব অস্ত্র এবং চীন সেই অস্ত্র পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করেছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহড়া হিসেবে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন? একটাই কারণ যুদ্ধবাজ একনায়কতন্ত্রের তথাকথিত সাম্যবাদী রাষ্ট্র চীনের বিশ্বজুড়ে একাধিপত্য কায়েম করা।

গত দু’তিন দশক ধরে গোটা বিশ্বের বাজার দখল করেছে চীন। সস্তায় মজুর এবং মগজের জোরে ছোটদের খেলনা থেকে যুদ্ধাস্ত্র—সব কিছুতেই অধিকার কায়েম করেছে চীন। একসময়ে চীনের তৈরি জিনিসপত্র বিশ্বের অন্যত্র প্রবেশ করতো চোরাপথে। বিশ্বায়নের সুযোগে চীন প্রশাসন গোটা বিশ্বকেই চীনা বাজারে পরিণত করেছে। এমনকী অভিযোগ উঠেছে। নকল ডিম, নকল চাল, নকল দুধেও ভরিয়ে দিয়েছে পৃথিবী। এহেন অবস্থায় গত কয়েকবছর ধরেই বিশ্বের বহু দেশ একত্রিত হচ্ছিল চীনে উৎপাদিত সামগ্রীর নিম্নমান এবং বাণিজ্যিক উপনিবেশ স্থাপনের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে। তার সঙ্গে মিশেছিল সন্ত্রাসবাদে চীনের মদতদান প্রসঙ্গও। যেমন ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ প্রয়োগে চীন বহুদিন ধরেই মদত দিয়ে আসছে। পাকিস্তানকে। চীনও রাস্তা খুঁজছিল বাঁচার জন্য। তার কাছে খোলা ছিল একটা রাস্তা—জীবাণু যুদ্ধ। নিজের দেশে তার একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ প্রয়োগ করে নিজেকে আড়াল করার নাটকটা অবশ্য মানুষ ধরে ফেলেছে। প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে আমেরিকার মতো সচেতন দেশে রাতারাতি করোনোয় আক্রান্ত হচ্ছেন লক্ষাধিক মানুষ, ইতালি বা স্পেনের মত স্বাস্থ্য-সচেতন দেশে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্চে, সেখানে চীন এমন কোন জাদুমন্ত্রে বশীভূত করল কোরোনাকে যে মাত্র তিনহাজারের কিছু বেশি মানুষকে মেরেই সে শান্ত হয়ে গেল? তাহলে কি চীন করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক ইতিমধ্যেই তৈরি করে ফেলেছে? সন্দেহটা তীব্র হচ্ছে যখন দেখা যাচ্ছে, উহানের মতো করোনা সংক্রামিত প্রদেশে চীনের রাষ্ট্রপতি জিনপিং ঘুরে বেড়াচ্ছেন শুধুমাত্র একটা মাস্ক পরে। এবার হয়তো দেখা যাবে, চীনই করোনার প্রতিষেধক ছাড়বে বাজারে এবং বিশ্বের মানুষ ধন্য ধন্য করে উঠবে চীনের নামে জীবনদাতা হিসেবে বরণ করে নিয়ে।

যে কোনো যুদ্ধবাজ জাতিই তাই করে। প্রথমে মারে, তারপর মলম লাগায়। চীনও হয়তো সে পথেই হাঁটছে। কিন্তু বিশ্ব কি ভুলবে। এই মায়াবী জাতিটির নৃশংস খেলায়? বিশ্ব কি মেনে নেবে জীবাণু-যুদ্ধের প্রয়োগকারী এই পীত-জাতিটিকে যারা বিশ্ব থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখে চিরকাল? যারা মানুষের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়। যারা মানুষের শ্রমের দাম দিতে জানে না। যারা অন্যায়ের প্রতিবাদকারীদের। ওপর নিদ্ধিধায় চালিয়ে দেয় ট্যাঙ্ক। যারা দেশের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের অবদান মনে না রেখে তাদের নিখোঁজ করে রাখে। যারা কমিউনিজমের নামে সন্ত্রাসী একনায়কতন্ত্র চালায় দেশের মানুষের ওপর ? যারা অর্থকরী লাভ ছাড়া অন্য কোনো কিছুতেই আগ্রহী নয় ?

না, চীনের এই আগ্রাসন নীতিতে বিশ্ব কিছুতেই সায় দেবে না। ইতিমধ্যেই বিশ্বের ৮৫টি দেশ একত্রিত হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। একত্রিত হওয়ার উদ্দেশ্য, চীনের এই জীবাণু-যুদ্ধের বিরুদ্ধে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের দরবারে অভিযোগ তোলা। বিচার চাওয়া। নির্বিচারে মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার জন্য চীনের বিরুদ্ধে শাস্তি চাওয়া।

করোনা ভাইরাসের আক্রমণে এখন যখন গোটা বিশ্ব বিধ্বস্ত, তখন কিন্তু চীন ঘর গোছাতে শুরু করেছে। আমেরিকা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং ইওরোপের বহু দেশের অধিকাংশ অঞ্চলই যখন কোরোনা বিধ্বস্ত তখন চীন কিন্তু কোরোনাকে আটকে দিয়েছে উহানেই। বাকি চীনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল করোনার ছোবল খায়নি। অতএব গোটা বিশ্বের মানবশক্তি যখন ঘরবন্দি, অর্থনীতি যখন এক বিরাট প্রশ্নচিহ্নের মুখোমুখি, মানুষে মানুষে যখন বিচ্ছিন্নপ্রায়, শিল্পসংস্থাগুলি তালাবন্দি, মানুষ দুমুঠো খাদ্য না পেয়ে অনাহারে দিনযাপন করছে, চীন কিন্তু তখন নির্ভয়। কারণ তার বিশ্বজয় হয়ে গেছে। যদি এখনও বিশ্ব চীন-বিরোধী মনোভাব নিয়ে এককাট্টা না হয়ে থাকে, তাহলে হয়তো অচিরেই আরও শক্তিশালী জীবাণু যুদ্ধে নামবে চীন। এ জাতটাকে বিশ্বাস করা মানে নিজেদের হাত পোড়ানো। মাটির সাড়ে চার হাজার মিটার গভীরে যারা ল্যাবরেটারি বানিয়ে জীবাণু সৃষ্টি করে, আমেরিকা ও ইউরোপের মতো মহাদেশগুলিকে উপনিবেশে পরিণত করতে তাদের হাত কাপবে না। যে প্রচেষ্টায় সফল হওয়ার আগে বিশ্বকে এক হতে হবে। বিশ্বের মানুষকে একসঙ্গে আওয়াজ তুলতে হবে–“চীন তুমি দূর হঠো। জিনপিং নিপাত যাও।

ভারতবর্ষের সামনে আরও বড়ো সমস্যা—ভারতীয় চীনাপন্থীরা। কখনও কমিউনিস্ট, কখনও নকশাল, কখনও মাওবাদী, কখনও মানবাধিকারীর ছদ্মবেশে এই সব চৈনিক ভারতীয় রা এখনও ভোলেননি সেই স্লোগান—চীনের চেয়ারম্যান আমাদের। চেয়ারম্যান’। আজ যখন গোটা বিশ্ব কোনঠাসা, করোনা আক্রমণ সামলাতে তখন প্রায় সব দেশই হিমসিম খাচ্ছে, ভারতও চিন্তিত, তখন এইসব ভারতীয় চীনাপন্থী বিশ্বাসঘাতকের দল মুখোশ খুলে পথে নেমে পড়তে পারে যে কোনও সময়। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এরাই সংখ্যালঘুদের দিয়ে আক্রমণ হেনেছিল পশ্চিমবঙ্গে। এরাই দিল্লিতে দাঙ্গা বাধিয়েছে। এরাই সমর্থন যুগিয়েছে শাহিনবাগ কিংবা পাকসার্কাসের নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে। ধর্নায়। এখন চীন যখন বিশ্বের সব শক্তির বিরুদ্ধে তখন এই দেশীয় বিশ্বাসঘাতকরা ছোবল মারতে পারে যে কোনও সময়ে।

এখন সতর্ক থাকার সময়। করোনা ভাইরাস থেকে যেমন তেমনই এইসব মাওবাদী, কমিউনিস্ট, নকশালরূপী চীনা ভাইরাসদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কিন্তু সেই সঙ্গে নজরও রাখতে হবে এদের ওপর। নজর রাখতে হবে—কোন বিষ এরা ছড়াচ্ছে ভারতের অভ্যন্তরে। কারণ বিষাক্ত রাজনীতির নজির এই চীনাপন্থীরা স্বাধীনতার আগে যেমন রেখেছে, স্বাধীনতার পরেও রেখেছে। এদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন মানে নিজের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা।

অতএব সাধু সাবধান। আসুন, আমরা আজ গোটা বিশ্বের আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই রাজনীতি ও ধর্মের ভেদাভেদ সরিয়ে। একসুরে গলা মেলাই আরও একবার—“বিশ্ব জুড়ে চৈনিক উপনিবেশ স্থাপনের ষড়যন্ত্র মানছি না মানব না।

‘চীন তুমি মানুষের পৃথিবী থেকে দূর হঠো’।

‘জিনপিং নিপাত যাও, নিপাত যাও’।

শান্তি আসুক বিশ্বে। শান্ত হোক বিশ্ব। আমার মানবতার ধ্বনি উঠুক দিকে দিকে। পৃথিবী হোক মানুষের। হ্যাঁ শুধুই মানুষের। বিশ্বাসঘাতকদের ছোঁয়া বাঁচিয়ে সে পৃথিবী হোক সত্যের পূজারি, সুন্দরের পূজারি। সত্যম শিবম্ সুন্দরম্।

সুজিত রায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.