ঘূর্ণিঝড় আমফান পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার প্রচুর ক্ষতি সাধন করেছে। গাছপালা, মাটির বাড়ি ,বাড়ির চাল সব উড়ে গিয়েছে ,যোগাযোগ ব্যবস্হা , মোবাইল যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রায় সম্পূর্ণ রুপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ।
এই অবস্থায় বর্তমানে১) বিদ্যুৎ ও মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্হা পুনরায় চালু করার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। পানীয় জলের সরবরাহে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
২) হাসপাতাল গুলিতে জল, বিদ্যু ও খাদ্য সরবরাহ যাতে অক্ষুন্ন থাকে তা দেখতে হবে।
৩) অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ,ডিজেল ও বিদ্যুৎ চালিত কাটিং মেশিন দিয়ে রাস্তার পড়ে যাওয়া গাছ কেটে সরাতে হবে ,এক্ষেত্রে ক্রেন ও জে সি বি মেশিনের সাহায্য নিতে হবে ।
৪) শহরাঞ্চলে যাতে জল সরবরাহ ঠিক থাকে দেখতে হবে ।
৫) সমস্ত হার্ডওয়্যার , বিভিন্ন মেরামতির দোকান ,পাইপ ও প্লাস্টিক জাত জিনিসের দোকান ,ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক সরঞ্জামের দোকান খুলে রাখতে হবে যাতে মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সবাই কেনাকাটা করতে পারে ।
৬) সমস্ত ক্লাব, সামাজিক সংগঠন ,সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ইলেকট্রিক মিস্ত্রী ,নলকূপের মিস্ত্রী ,রাজমিস্ত্রি ,ছুতোর ( কাঠের কাজের মিস্ত্রী ) সঙ্গেযোগাযোগ করে জরুরী অনুসারে বিভিন্ন জায়গায় মেরামতের ব্যবস্হা করতে হবে ।৭) শুকনো খাওয়ার ( মুড়ি, বিস্কুট, চিড়েভাজা, ছোলাভাজা, আলু চিপস প্রভৃতি ) , গুড়ো দুধ ,চিনি ,গুড় ,লবন , জল বিশুদ্ধকরনের বড়ি ,অত্যবশ্যকীয় ও জরুরী ঔষধ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে পাঠাতে হবে।৮) জনগণ ও সবাই কে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরে কাজ করতে হবে। করোনার জন্য সমস্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ।৯) সমস্ত রাজনৈতিক দল , সমস্ত ধর্মের সমস্ত নাগরিক , ধনী, গরীব ,সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা কে একযোগে যে যতটা পারে কাজ করতে হবে।১০) যারা আর্থিক ভাবে খুব স্বচ্ছল তাদেরকে যতটা সম্ভব স্বেচ্ছায় অর্থ ,জিনিস পত্র ,খাদ্য ,পোশাক প্রভৃতি দান হিসাবে ,ধার হিসাবে অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল মানুষ দের সাহায্য করতে হবে । সরকারি সাহায্যের উপর সবকিছু ছেড়ে দেবেন না । সরকার সবার সাহায্যে চলে , করোনা ও লকডাউনের জন্য সমস্ত সরকারি কোষাগার বিপর্যস্ত ,বিক্রি তলানিতে তাই রাজস্ব নেই , সবাই কে উদ্যোগ নিতে হবে যে যার মতো করে । মনে রাখতে হবে আমরা সবাই পরস্পরের উপর নির্ভরশীল ।
সমস্ত বিপর্যয় কাটলে অর্থাৎ পরবর্তী সময়ে ১) সমস্ত বিদ্যুৎ যোগাযোগ ব্যবস্হার আধুনিকীকরণ করতে হবে ,মাটির নীচ দিয়ে বা কেবিল লাইনের মাধ্যমে বিদ্যু যোগাযোগ ব্যবস্হা গড়ে তুলতে হবে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির খুব শক্তিশালী লোহার বৈদ্যুতিক খুঁটি ব্যবহার করতে হবে ,ও সমস্ত পাওয়ায় স্টেশন কে এমনভাবে যুক্ত করতে হবে যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী এলাকা ভেদে চালু ও বন্ধ করা যায় ।A) সৌরবিদ্যুৎ, জৈব গ্যাস ,ব্যাটারী ও ডিজেল চালিত ছোট বড় সব ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ও আলো উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরী করতে দেশীয় কোম্পানি গুলিকে উৎসাহিত করা।
২) সমস্ত মোবাইল যোগাযোগ মাটির নীচের কেবিল ও টাওয়ার যুগ্ম ভাবে দুটো পদ্ধতির সাহায্য নিতে হবে । টাওয়ার বিপর্যস্ত হলেও যাতে স্যাটেলাইট বা মাটির নীচে কেবিলের মাধ্যমে কাজ চালানো যায় সেই বিকল্প ব্যবস্হা রাখতে হবে। A) উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে যাতে মোবাইল সেটগুলোর গঠনগত পরিবর্তন করে ব্যাটারী একবার চার্জ দিলে একমাস ব্যবহার করা যায় বা বারবার ব্যাটারী সহজে পরিবর্তন করা যায় এমন ব্যবস্হা রাখা ।B) টেলিফোন ব্যবস্হা কে মাটির নীচের কেবিলের মাধ্যমে বৃহৎ যোগাযোগ ব্যবস্হা গ্রামস্তর পর্যন্ত গড়ে তোলো। যার মাধ্যমে টেলিফোন, ইন্টারনেট, ব্যাঙ্কিং সবকিছুই সম্ভব হয় , খুব কম খরচে টেলিফোন সেট সরবরাহ করা ৩) রেডিও সিগন্যাল ব্যবস্হা কে আরও আধুনিক করা ,
A) খুব কম খরচে মোবাইলের মতো ব্যাটারী বা সৌরশক্তিচালিত ,স্ক্রিন টাচ টিউনিং ও অটোটিউনিং সহ অত্যাধুনিক রেডিও সেট ( SW,MW, TV ও FM সহ ) তৈরিতে দেশীয় কোম্পানি গুলি কে উৎসাহিত করা ।B) অত্যাধুনিক রেডিও স্টেশন ( SW,MW ও FM ) স্হাপন করা যাতে দেশের সমস্ত এলাকা আওতায় থাকে । এক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী যৌথ উদ্যোগ নিয়ে করলে ভালো হবে । যাতে ভূমিকম্প, বন্যা,ঘূর্ণিঝড় ও যুদ্ধ বিগ্রহের সময় যোগাযোগ অক্ষুন্ন থাকে ।এবং অবস্থা ভেদে রেডিও সংকেত ব্যবস্হা চালু বা বন্ধ করা যায় । অর্থাৎ পর্যাপ্ত মাত্রায় যাতে রেডিও স্টেশন থাকে ,বিশেষ করে উপকুল এলাকায় ও সীমান্ত এলাকায় ।
৪) গ্রামাঞ্চলে ও শহরাঞ্চলে সমুদ্রের জলস্তর বা ভূমিস্তর থেকে বেশ উঁচু তে ছোট ছোট এলাকা অনুসারে বা প্রতিটি প্রাইমারি বিদ্যালয়ে পানীয় জলের জন্য হ্যান্ডপাম্প স্হাপন করা ,যেটা বিদ্যু না থাকলে ও কাজ করবে এবং বন্যার সময় ও জলে ডুববে না।৫) এলাকা অনুসারে উঁচু স্হানে পর্যাপ্ত সংখ্যায় জল,বিদ্যুৎ ,টেলিফোন যোগাযোগ ,রান্নার ব্যবস্হা ও খাদ্যের স্টোর রুম সহ মজবুত কংক্রীটের ছাদসহ আশ্রয় স্হল নির্মাণ ,এক্ষেত্রে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোকেই আর পরিকাঠামো বাড়িয়ে করা যেতে পারে।
৬) উপকুল এলাকায় ও নদীর বাঁধ বরাবর ঝাঁউ, ম্যানগ্রোভ ( সুন্দরী, গরাণ ইত্যাদি) ,নারিকেল ও শক্ত কাঠের গাছ লাগাতে হবে যাতে বাঁধ রক্ষা হয় ও ঝড়ের গতি কে রোধ করা যায় ।A) উপকুল ও সীমান্ত বরাবর বাঁধ ,রাস্তা ও পরিকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে এবং বেশি গুরুত্ব দিতে হবে ।এক্ষেত্রে বড় বড় সরকারি সংস্থা ও দেশীয় বেসরকারী সংস্থা কে টেন্ডার দিয়ে কাজ করানো যেতে পারে ।৭) ঘূর্ণিঝড়ের কারনে প্রচুর পরিমানে গাছের ক্ষতি হয়েছে , তাই দেশের সমস্ত জনগন, সরকারি ও বেসরকারি সকল সংস্থা ,নার্শারি ,ফল,বীজ ও চারাগাছ তৈরী ফার্মগুলিকে উদ্যোগ নিতে হবে যাতে প্রচুর পরিমাণ নারিকেল, আম,জাম,পেয়ারা ,আমলকী লেবু, কলা প্রভৃতি গাছ ও অন্যান্য ভেষজ গাছ লাগানো যায় ।
সোমনাথ ওঝা