সাত সকালেই মার্কিন এয়ারস্ট্রাইক। আর তারপর থেকেই তোলপাড় গোটা বিশ্বের রাজনীতি থেকে অর্থনীতি। বাড়ছে তেলের দাম, পড়ছে টাকার দাম, কেউ কেউ বলছেন যুদ্ধের ইঙ্গিত। কারণ এই এয়ারস্ট্রাইকে মৃত্যু হয়েছে কাশিম সোলেমানির। মধ্যপ্রাচ্যে সব কূটনীতির খেল নাকি খেলতেন ইনিই, বলে দাবি একাধিক সংবাদমাধ্যমের।

আদতে তিনি ইরানের সেনাবাহিনীর অন্যতম শীর্ষ সেনা অফিসার। তবে ইরানের প্রেসিডেন্টের কাছের লোক ছিলেন এই সোলেমানি। আরও ভালোভাবে বলতে গেলে, খাতা-কলমের পিছনে তিনিই ছিলেন ইরানের সর্বেসর্বা, বলেও দাবি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের।

৮০-র দশকে ইসলামিক বিপ্লবের পরনতুন যে ইরানের জন্ম হয়েছিল, সেই দেশের এলিট ফোর্স ছিল এই ‘কুদশ ফোর্স’। তারই একজন শীর্ষ কমান্ডার ছিলেন মেজর জেনারেল কাশিম সুলেমানি।

ইরানের বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর এলিট ‘কুদস ফোর্সের’ কমান্ডার ছিলেন মেজর জেনারেল কাসেম সোলেমানি। বাগদাদ এয়ারপোর্টে মার্কিন এয়ারস্ট্রাইকে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।

জানা যায়, সোলেমানি নিছক একজন সেনা অফিসার ছিলেন না। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান কি ভূমিকা নেবে, তার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন সোলেমানি। বিবিসি জানাচ্ছে, দেশটির বিদেশমন্ত্রীর ভূমিকা তিনিই কার্যত পালন করতেন। বিশেষত যুদ্ধ কিংবা শান্তির ক্ষেত্রে তিনিই শেষ কথা। বলা হয়, সিরিয়ার যুদ্ধের কারিগরও নাকি তিনি। ইরাকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মেজর জেনারেল সোলেমানি।

১৯৯৮ সাল থেকে মেজর জেনারেল কাসেম সোলেমানি ইরানের কুদস ফোর্সের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইরান রেভোলিউশনারি গার্ডসের এই অভিজাত বাহিনীটি দেশের বাইরে কভার্ট অপারেশন চালিয়ে থাকে। আগে গোপনেই থেকেই কাজকর্ম চালাতেন সুলেমানি। পরে তাঁকে একের পর এক খবর ছাড়াও তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র। এমনকি পপ গানেও জায়গা পেয়েছেন ইরানের এই ‘হিরো’।

২০১৩ তে প্রাক্তন সিআইএ অফিসার বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাধিক একক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি সোলেমানি।

অতি সাধারণ, নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে তিনি। পড়াশোনাও খুব বেশি নয়। ১৯৯৮ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তার করতে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। ইরনা-পন্থী বাহিনীর হাতে তিনি গোপেন অস্ত্র তুলে দিয়েছেন বলেও জানা যায়। শিয়া মুসলিম ও কুর্দিশদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করতেন বলেও শোনা যায়।

আমেরিকাতে হামলা চালাতে গোপনে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়। মার্কিন স্বরাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেও এই কুদশ বাহিনীকে জঙ্গিগোষ্ঠী বলে উল্লেখ করেছেন।

ইরান ও আমেরিকার মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘসময় ধরে শত্রুভাবাপন্ন হলেও ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আদর্শগত দিক বিবেচনায় পরোক্ষভাবে একে অপরকে সহায়তা করেছিল তারা। জেনারেল সোলেমানি দুই বৈরি ভাবাপন্ন দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, মধ্যপ্রাচ্যে লেবাননের মদতপুষ্ট হিজবুল্লা জঙ্গি গোষ্ঠীর অভিযান ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন করতে ইরানের প্রাথমিক অস্ত্র কুদস ফোর্স। এসব সংগঠনকে তারা অর্থ, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে বলে অভিযোগ আমেরিকার।

কিন্তু যেদিন ইরানের পরমাণু ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা করেছে আমেরিকা, সেদিন থেকে সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকতে শুরু করে।

ইরানি সংবাদ সংস্থা ইরনা জানাচ্ছে, দেশের সর্বচ্চো নেতা তথা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই আমেরিকাকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। তাঁর নির্দেশ মতোই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে তেহরান।

ইরানি বিদেশমন্ত্রী জানান, দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই পালন করবে ইরান বিদেশ মন্ত্রক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.