মন্দির যখন ধর্মনিরপেক্ষতার সংকটে

মন্দির – শ্রদ্ধা-ভজনে বিমুগ্ধ বন্দনা

মন্দির – পরমেশ্বরের শুদ্ধতম প্রসাদ

মন্দির – আত্মার জাগরণী উজ্জ্বল কণা

মন্দির – ধরণীর বুকে ভগবানের প্রাসাদ।

সেই মন্দিরের দেশ হল ভারতবর্ষ। ভারতের প্রতিটি রাজ্যের অসংখ্য সুপ্রাচীন মন্দিরের অবস্থান রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো  কর্ণাটক।

কর্ণাটক ভারতের এক মন্দিরময় রাজ্য, যেখানে ৩৫০০০ সুন্দর, ঐতিহাসিক এবং ঐতিহ্যবাহী হিন্দু মন্দির গুলির অবস্থান করছে। মন্দিরগুলিতে সারা ভারত থেকে প্রচুর ভক্তদের সমাগম হয়। ফলে,  নগদ অর্থাগমও ঘটে। এই প্রচন্ড মহামারীর দিনে এধরনের বড় মন্দিরগুলি বহু পরিমান অর্থ প্রদান করে সাহায্য করেছে সে প্রমাণও আমরা পেয়েছি।  তবে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মন্দিরগুলি বারবার সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনিক উচ্চ-হস্তের শিকার হয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব দ্বারা সমস্ত প্রধান মন্দিরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। মন্দিরগুলির সুযোগ সুবিধা  বিলাসবহুল  মানুষজন একচেটিয়াভাবে উপভোগ করে।

মন্দির গুলি সরকারকে সাহায্য করার পরেও বিভিন্ন রাজ্য সরকার মন্দিরের সম্পত্তি দখল করে তার ভাগ একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে প্রদান করতে চাইছে। কারন, বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের রমজান পালনের জন্য সেই অর্থ দিতে বলা হয়েছে। এদিকে তারাই কোভিড -১৯ মহামারীতে ‘একক উৎস’ হয়েছে সেই বিশেষ সম্প্রদায় (তাবলীগী জামাত পড়ুন)।

রাজ্য সরকার নির্লজ্জভাবে হিন্দু মন্দিরগুলির অর্থ লুট করছে, অন্যদিকে মসজিদগুলি সরকারের নিকট ভ্যানিশ হয়ে গেছে। তাদের অর্থ ও প্রভূত সম্পত্তিতে চোখতো পড়ছেই না উপরন্তু তাদের রমজান মাসে বিনামূল্যে চাল সরবরাহ করা হচ্ছে । কর্ণাটকও এর ব্যতিক্রম হয় নি।

 কিন্তু সরকার দ্বারা এই লুট কেন? কেন করোনা মহামারীর জন্য সাহায্য না নিয়ে কেবল একটি সম্প্রদায়কে খুশি করার প্রচেষ্টা? তাও, যে সম্প্রদায় একটা মহামারীর কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে….কেবলমাত্র ভোটব্যাংক ? হিন্দুদের থেকে টাকা নিয়ে রোজার চাল খাওয়া কি হারাম নয় ?

 যদিও গোড়ায় কিছু গলত থেকেই যায় । যদিও সরকার মন্দির থেকে নগদ অর্থ আদায় করতে পারে, খ্রিস্টান, মুসলমান বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের থেকে সেই অর্থ আদায় করতে পারে না।   এটির কারণ গীর্জা, মসজিদ ইত্যাদি গুলি সরকারের অধীনে আসে না এবং এ জাতীয় স্থানগুলি কীভাবে পরিচালিত হবে সে বিষয়ে তাদের নির্দেশ দেওয়ার কোনও অধিকার সরকারের নেই।  সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ধর্মীয় স্থান পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়টি হ’ল সংবিধান দ্বারা হিন্দু মন্দিরগুলিতে এই জাতীয় লুটপাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলি তাদের উপাসনাস্থলগুলি সরকার থেকে নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা উপভোগ করে।


উক্ত সাংবিধানিক নিয়মটি আমাদের পরাধীন ভারতের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই সময় ব্রিটিশরা যখন যে মন্দির ইচ্ছে হতো উক্ত রূপে অধিগ্রহণ করত।  মাদ্রাজ হিন্দু ধর্মীয় ও অনুদান আইন ১৯২৭-এ প্রাথমিকভাবে মুসলিম ও খ্রিস্টানদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়েছিল, তবে, বিক্ষোভের পরে, তাদেরকে এই বিধিমালার আওতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, কেবলমাত্র হিন্দুদের জন্য প্রযোজ্য মন্দিরগুলির উপর সরকার নিয়ন্ত্রণ তৈরি করা হয়েছিল।

এদিকে কর্ণাটকে প্রায় ৩৫৫০০ মন্দির রয়েছে যা ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ বিভাগে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।  ‘এ’ এবং ‘বি’ হ’ল উপার্জন-উপার্জনকারী মন্দির এবং সরকার এই মন্দিরগুলিকে তার অর্চক ও মন্দির কর্মীদের বেতন দিচ্ছে । কিন্তু…..


তবে গ্রামীণ অঞ্চলে মন্দিরগুলি যা মোট মন্দিরের ৯৯% অধিকার করে আছে, কিন্তু তাতে রাজস্ব আয় হয় না, সুতরাং সরকার তাদের কোনও মাসিক বেতন বা অর্থ প্রদান করে না।  যা প্রদান করা হয় তা হল একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ – ৪৮,০০০ / – প্রতি বছর বা  ১৩১ টাকা   প্রতিদিন দেবতা, মন্দির এবং তাদের পরিবারের খরচ বাবদ ।

ফলস্বরূপ, এই মন্দিরগুলির অর্চকরা সর্বদা নিরুপায়ে থাকেন এবং সম্পূর্ণরূপে ভক্তদের দেওয়া ‘দক্ষিনার’ উপর নির্ভর করেন।  এখন, কোভিড -১৯ পরিস্থিতিতে কেউ মন্দির পরিদর্শন করেন না এবং এই পুরোহিতরা তাদের জীবন যাত্রার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন এবং মন্দিরের দেবতার জন্য প্রয়োজনীয় অনুষ্ঠান করারও কোনও উপায় নেই।

সুতরাং নিম্নলিখিত বিস্তৃত ভিত্তিতে পিটিশন দায়ের করা হয়েছে: (ক) অর্চক/ মন্দির কর্মচারীর বেতন / অর্থ প্রদান না করা মন্দির ব্যবস্থার একেবারে স্নায়ু কেন্দ্রের উপর পড়ে, কারণ অর্চক এবং দেবতা উভয়ই অস্তিত্বের হুমকির মুখোমুখি হন ..

 (খ) “সি’ বিভাগের মন্দিরের পুরোহিত / মন্দিরের কর্মচারীদের সঙ্গে ‘এ’ এবং ‘বি’ মন্দিরের বৈষম্য করার ফলে সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদের অধীন উল্লিখিত পুরোহিত / মন্দির কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।

(গ) খালি-আবশ্যকীয় আচার-অনুষ্ঠানের ব্যর্থতার কারণে দেবতাকে দূর্বল করা ছেড়ে দেওয়ার ফলে সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ এবং ২৫  অনুচ্ছেদের অধীনে দেবতার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়।

 (ঘ) কর্ণাটক সরকার অর্চক এবং মন্দিরের দেবতা উভয়েরই সুস্থভাবে বেঁচে  থাকার জন্য , সঠিক পরিচালনা করার জন্য দায়বদ্ধ….


ঙ) সংগ্রামরত পুরোহিত  ইউনিয়ন  ত্রাণ সরবরাহ করার জন্য সরকারকে বারবার অনুরোধ করলেও, সরকার তাদের করুণ অবস্থার অবসান ঘটাতে কিছুই করেনি।  তাই কর্ণাটকের পুরোহিতদের জন্য জরুরি ত্রাণ চেয়ে জরুরি আর্জি পেশ করা হয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.