মুসলিম অধ্যুষিত কেন্দ্রে এবার বিজেপির মুখ এই মহিলা

আসন্ন ২১ অক্টোবরের তারিখে হরিয়ানা জুড়ে শুরু হচ্ছে বিধানসভা নির্বাচন। গত বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রের শাসক দল এই রাজ্যে ঘুঁটি সাজাতে না পারলেও, কিন্তু আসন্ন ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে শাসকদলের মোদী-শাহ জুটি যে কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছে তা বলা বাহুল্য।

আগামী ২১ অক্টোবর হরিয়ানা রাজ্যের নব্বইটি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে বিধানসভা নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে পাখির চোখ করে জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে মোদী পদ্বফুল না ফোটাতে পারলেও আসন্ন নির্বাচনে পালা-বদলের ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং।

সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, হরিয়ানার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা মেওয়ায় এবার আশি শতাংশ মুসলিম ভোট ব্যাংক টানতে ওই এলাকার বাসিন্দা বিলেত ফেরত বছর সাতাশের এক তরুণীকে প্রার্থী করছে বিজেপি।

হরিয়ানার মেওয়া হল মুসলিম অধ্যুষিত অনুন্নত একটি অঞ্চল। একসময় মেওয়ার অঞ্চলের অলিতে গলিতে লুকিয়ে ছিল ইতিহাস। প্রাচীন ঐতিহাসিক কাহিনী নিয়ে সকলের কাছে বেশ জনপ্রিয় হরিয়ানার এই মেওয়া অঞ্চল। জানা গিয়েছে, এককালে মুসলিম রাজপুত্রদের সুদীর্ঘ শাসন ও ঐতিহ্যে ভরপুর ছিল আজকের এই মেওয়া। বর্তমানে মেওয়াতে না আছে রাজা না আছে তাঁর সভাসদ। কালের নিয়মে সবই স্মৃতির পাতায়। আর অতীতের মেওয়ার সঙ্গে আজকের মেওয়ার আকাশ-পাতাল পার্থ্যকে পৌঁছে গিয়েছে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে মেওয়ার বাসিন্দারা কুসংস্কার, অশিক্ষা এবং অপুষ্টিতে জরাগ্রস্ত। এমনকি নেই আগের সেই ঐতিহ্য জৌলুস। কালের নিয়মে সবই হারিয়ে গিয়েছে মেওয়া থেকে। আর হরিয়ানার এই মেওয়া অঞ্চলে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে বিজেপি। জানা গিয়েছে, মেওয়ার অনুন্নত এলাকাকে একহাত করে এবার কংগ্রেস প্রার্থী মহম্মদ ইলিয়াসের বিরুদ্ধে ভোটের ময়দানে লড়বেন নওকশাম চৌধুরী। সূত্রের খবর, গত ২০০৯ সালের বিধান সভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হন মহম্মদ ইলিয়াস। সেই সময়ও বিজেপি এই কেন্দ্রে পদ্বফুল ফোটাতে পারেনি।

এদিকে কংগ্রেস প্রার্থী মহম্মদ ইলিয়াস জানিয়েছেন, মেওয়া কেন্দ্র থেকে নওকশাম তার বিরোধী প্রার্থী হওয়ায় এই বিষয়ে মোটেও মাথা ঘামাতে রাজী নন তিনি। বর্তমানে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে মেওয়া এলাকার মানুষের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থার মানউন্নয়ন সহ এই এলাকার পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নতিকে পাখির চোখ করে ভোটে লড়তে চান তিনি।

বিজেপির হয়ে ওই এলাকায় দাঁড়ানো প্রার্থী নওকশাম চৌধুরী হল একজন বিলেত ফেরত উচ্চশিক্ষিত নারী। জানা গিয়েছে,

ইতিহাসে স্নাতক নওকশাম দিল্লির বিখ্যাত মিরান্ডা হাউস কলেজের একজন কৃতি ছাত্রী। ইতিহাসে স্নাতকের পাঠ শেষ করে ‘লাক্সারি ব্র্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’এর উপর মাস্টার্স করতে চলে যান ইতালিতে। পরে সেখান থেকে পাবলিক কমিউনিকেশনের পাঠ নিতে পাড়ি জমান বিলেতে। শুধু তাই নয় ঝকঝকে কেরিয়ার এবং বিদেশের মোটা বেতনের চাকরি ছেঁড়ে দিয়ে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দেশে ফিরে আসেন নওকশাম। আর দেশে ফিরে একেবারে সোজা রাজনীতিতে প্রবেশ তাঁর। সূত্রের খবর, হাই প্রোফাইল বিজেপির এই প্রাথীর মা হলেন হরিয়ানা রাজ্যসরকারের উচ্চপদস্থ আমলা। তাঁর বাবা হলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।

বিজেপির এই প্রার্থী জানিয়েছেন, একসময় এই মেওয়া অঞ্চলেই তাঁর বেড়ে উঠা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটলেও এই মেওয়া অঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার কোনও পরিবর্তন হয়নি। ফলে মেওয়ার অনুন্নত এলাকা বিশেষ করে মহিলা এবং শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে কাজ করতে চান তিনি। জানা গিয়েছে , মেওয়া জেলার পুনহানা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয় জেলার এই কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখের কাছাকাছি। শুধু তাই নয় এখানে মুসলিম ভোট রয়েছে গড় ভোটের আশি শতাংশ। বাকি কুড়ি শতাংশ ভোট রয়েছে হিন্দুদের।

বিরোধী দলগুলিকে তাক লাগিয়ে পুনহানা কেন্দ্র থেকে দাঁড়ানো এই প্রার্থীর বিশ্বাস আসন্ন নির্বাচনে মেওয়ার বাসিন্দারা তাকেই নির্বাচিত করবেন। এর সপক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, মেওয়ার সাধারণ মানুষ এখন বুঝতে পারছেন যে, কেন্দ্র এবং রাজ্যের বিজেপি সরকার তাঁদের উন্নয়নে এই অঞ্চলে কাজ করতে চাই। ফলে আসন্ন নির্বাচনে লোকজন যে তাকেই নির্বাচিত করবেন সেই বিষয়ে আশাবাদী নওকশাম। এখন শুধু অপেক্ষা ফলাফলের হরিয়ানার জল কোন দিকে গড়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.