একবার বলে দেখুন প্রতিবাদে পার্ক সার্কাস থেকে রাজাবাজার হাঁটতে, একবার বলে দেখুন খিদিরপুর থেকে মেটিয়াবুরুজ হাঁটতে কিম্বা গার্ডেনরিচ থেকে তোপসিয়া হাঁটতে এঁরা পরের বার পোস্ট করাই ছেড়ে দেবেন ।

নতুন স্টাইলে ভন্ডামি ।
নিজের নাম যুক্ত করে নিজের প্রোফাইলে পোস্ট করুন ।
কলকাতার বামপন্থী কিছু বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশে ৫ দিন ধরে নৃশংস হিন্দু নিধনের পর কলমের খাপ খুলে একটি বার্তা দিয়েছেন । অনেক রথী মহারথী নিজেদের নাম বার্তার তলায় দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন । এবং বার্তা শেষে লেখা হয়েছে ” নিজের নাম যুক্ত করে নিজের প্রোফাইলে পোস্ট করুন ” ।

অনেকে করছেনও । অনেক বামপন্থী করছেন । অনেক তৃণমূলের হাতে তামাক খাওয়া, প্যাকেট নেওয়া লোকজনও দেখছি নিজের নামটা সযত্নে যোগ করে পোস্ট করে রাতে শুতে যাচ্ছেন । ভালো লাগছে বেশ, এটা দেখে যে এরা বুঝতে পারছেন যে পাবলিক mood বাংলাদেশ নিয়ে একটু অন্য রকম ভাবছে এবং বলছে । তাই কিছু বলা দরকার, লেখা দরকার এবং পোস্ট করে শুতে যাওয়া দরকার । সেটিই তারা করছেন ।

এঁদের একবার বলে দেখুন প্রতিবাদে পার্ক সার্কাস থেকে রাজাবাজার হাঁটতে, একবার বলে দেখুন খিদিরপুর থেকে মেটিয়াবুরুজ হাঁটতে কিম্বা গার্ডেনরিচ থেকে তোপসিয়া হাঁটতে এঁরা পরের বার পোস্ট করাই ছেড়ে দেবেন । তাহলে এঁরা করছেন কেন ? করলেনই বা কেন ? করলেন এই কারণে এঁরা বুঝেছেন বাংলাদেশে যা হয়েছে সেটা নিয়ে জনমত ক্রমশ প্রশ্ন করতে শুরু করেছে । মানুষ প্রশ্ন করতে শুরু করেছে ওই ১০ বছরের মেয়েটাও তো বাংলা ভাষায় কথা বলত । ওর অপরাধ ও হিন্দু ঘরে জন্মেছিল ? ওই ২৬ বছরের ছেলেটার একমাত্র অপরাধ কি ছিল যে সে ৮.৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর সে একজন ছিল ? সেটাই কি তার একমাত্র অপরাধ ?

উত্তর এঁদের কাছে একদমই নেই । বাংলাদেশ নিয়ে যাঁদের বিবেকের তাড়না হঠাৎ দেখা দিয়েছে তাঁরা আজ বেশ কনফিউজড । কি বলবেন, কি করবেন নিজেরাই দিশাহীন ।

এঁরা যেমন উত্তর কিছুতেই দিতে পারবেন না আরও বেশ কিছু প্রশ্নের ।

১৯৫১ সালে বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠীর বিন্যাস ছিল ২২ শতাংশ । ১৯৬১ তে তা দাঁড়ায় ১৮.৫ শতাংশ, ১৯৭৪ এ এই সংখ্যা নেমে এসে দাঁড়ায় ১৩.৫ শতাংশ, ১৯৮১ তে ১২.১৯ শতাংশ, ১৯৯১ তে ১০.৫ শতাংশ, ২০০১ এ তা দাঁড়ায় ৯.৩ শতাংশ ।২০১১ তে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার শতাংশ নেমে দাঁড়িয়েছিল ৮.৫ শতাংশে । আর ২০২১ এর হিসেব তাহলে কি দাঁড়াবে ? হয়তো তা নেমে এসে দাঁড়াবে ৫ থেকে ৬ শতাংশে ।

এঁদের প্রশ্ন করুন এই অত্যাচার চললে তো খুব অদূরেই বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী বিলীন হয়ে যাবে । দায় তখন কার থাকবে ? কে নেবে ? বাংলাদেশ তখন শুধুই তো একটি ধর্মের লোকেদের বসবাস হবে ? প্রশ্ন করে দেখুন এঁদের । কথা ঘুরিয়ে নিশ্চিতভাবে তাত্বিক হয়ে যাবেন এঁরা ।

এঁদের প্রশ্ন করুন এপার বাংলা থেকে একটি পরিবার দেখান শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে পশ্চিমবঙ্গে জমি, সম্পত্তি সব ছেড়ে চলে গিয়েছেন পূর্ববঙ্গে । আর ওপার বাংলা থেকে কত লক্ষ মানুষ ভিটে মাটি ছেড়ে চলে এসেছেন এদেশে ? এঁদের প্রশ্ন করুন । এঁরা তখন দেখবেন আবারও কিরকম দার্শনিক হয়ে যাবেন ।

খেয়াল করে দেখবেন এঁরা এতদিন হিন্দু মৌলবাদ নিয়ে খুব গলা ফাটাতেন । গেরুয়া সন্ত্রাস নিয়ে সোচ্চার হতেন । বাংলাদেশে ৭০ টির ওপর মন্দির ভাঙার পর, ৬ জন মানুষের মৃত্যুর পরও এঁরা এখন একবারও ” ইসলামিক মৌলবাদ ” শব্দটি মুখে আনছেন না ।

এখন এঁদের মুখে নতুন এক ধরণের তত্ব – মৌলবাদ আসলে নিজেই একটা ধর্ম । কোন ধর্মের নাকি মৌলবাদ হয় না ।

অন্যতম স্বাক্ষরকারী অংশুমান কর আজ টি ভি চ্যানেলে বসে ইনিয়ে বিনিয়ে সেটাই সবাইকে বোঝালেন ।

আমরাও বুঝলাম । সম্যক বুঝলাম । না বুঝে আর যাই কোথায় ?
অতঃপর আমাদের তাহলে আর কি কর্তব্য বাকি থাকে ? কর্তব্য তখন একটাই থাকে ” নিজের নাম যুক্ত করে নিজের প্রোফাইলে লম্বা পোস্ট করুন সবাই “

  • আহা তোমরা কি বুদ্ধিমান !!

সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় (৯৮৩০৪২৬০৭৮)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.