মনে পড়ছে #দামিনীর কথা!! হ্যাঁ, ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমাটির কথা বলছি। এই ছবিটি বলিউডের অন্যতম সেরা নারীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র হিসাবে বিবেচিত হয়েছিলো। এখনও এটি ক্লাসিক নারীবাদী চলচ্চিত্র বলেই পরিগণিত হয়। একজন গৃহবধূ তাঁর অদম্য মানসিক শক্তির দ্বারা সাধ্যাতীত লড়াই চালিয়ে গেছেন কেবলমাত্র সত্যের জন্য, ন্যায়বিচারের জন্য।

একটি গণধর্ষণকে চাপা দেওয়ার প্রবল চেষ্টা কে প্রতিহত করে অবশেষে জয়ী হয় দামিনী। এবার নিশ্চয়ই বলবেন তো কাল্পনিক গল্প ফেঁদে বসেছি। না, একেবারেই কাল্পনিক যে নয় তার জ্বাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ ২৫ বছর পরেও আমরা ক্রমাগত পেয়ে যাচ্ছি। দামিনীর প্লট এবং চিত্রনাট্য N.B.C. ( National Broadcasting Company ) তে 1985 সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সাইলেন্ট উইটনেস থেকে তৈরি অনুলিপি যার ভিত্তি একটি বাস্তবে ঘটে যাওয়া গণধর্ষণের ঘটনা ও মামলাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিলো। এতকিছুর অবতারনা দুটি কারণে।

প্রথমত সত্যের গুরুত্ব বোঝাতে এটি একটি জোরালো পয়েন্ট। অনেকেই বলছেন, “ফেসবুকে প্রতিবাদ করে কী লাভ! কবিতা লিখে বা গল্প-প্রবন্ধ লিখে এসব বন্ধ করা যাবে না।” অনেকে কয়েক কদম এগিয়ে ব্যঙ্গোক্তির চরম নমুনা দেখিয়ে কবিদের একেবারে আদ্যশ্রাদ্ধ করে ছেড়েছেন। এমন একটা ভাব যেন নিজেরা এই গ্রহে ( পড়ুন ফেসবুকে ) বাস করার উপযুক্তই নন; নেহাত দয়া করে আমাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে চাকরিটা ছাড়তে পারছেন না তাই ! তাঁদের সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়ে বলি, আমরা কবি নই, কবি বলে নিজেদের দাবিও করিনা। দু-লাইন মনের কথা লিখলেই কেউ কবি হননা। ঐ তকমাটা আপনারাই উপহার দিলেন। আপনারা মনে করেন অন্যের লেখা ধার করে কয়েকটি শব্দ এধার ওধার করাকেই বোধহয় কবিতা বলে। আর এই কাজটা এতই সোজা যে আপনারা ইচ্ছে করলেই পারেন কিন্তু ওসব ছুঁচো টুচো মারা আপনাদের ধাতে সয় না। তার বদলে একে খোঁচা মেরে, ওকে বিদ্রুপ করে ভালোই দিন কাটে। তো ভাই আপনারাও রাস্তায় নামুন! নামছেন না কেনো? বারণ কে করলো!

কবি আর লেখকরা কী আপনার মনোরঞ্জনের খোরাক? তাই যদি হয় তাহলে বিভিন্ন সময় এতো আগুন ঝরানো লেখা বা গান কেনো সৃষ্টি হয়েছিলো? বিদ্রোহী কবি নজরুলের লেখনী কী তাহলে মূল্যহীন? আমরা সবাই জানি “PEN IS MIGHTER THAN SWORD”. বিখ্যাত ফরাসি বিপ্লব ও বাস্তিল দুর্গের পতনের পিছনে প্রধান অবদান কাদের ছিলো? ভলতেয়ার, মন্তেস্কু, রুশো প্রমুখ দার্শনিকদের লেখাই কিন্তু জনমানসে বিদ্রোহের সূচনা ঘটিয়েছিলো। তাঁদের লেখা পড়েই জনচেতনা জাগ্রত হয়েছিলো। প্রমাণিত হয়েছিলো অসির থেকে মসির শক্তি বেশি। আবার ঠাট্টা করবেন এই নিয়ে জানি, স্বভাব ছাড়বেন কিকরে!

দ্বিতীয়ত, দামিনী সিনেমার একটি বিখ্যাত ডায়লগ সবাই জানেন আশা করি।….তারিখ পে তারিখ…..তারিখ মিলতি রাহি লেকিন ইনসাফ নেহি মিলা।

অধিকাংশ মামলার ক্ষেত্রে দেখা যায় বহুদিন ধরে শুনানি চলতে থাকে। অর্থ আর সময়ের অপচয়ের সাথে সাথে ধৈর্য আর ন্যায়ের আশাও হারিয়ে যেতে থাকে। দোষীরা জামিন পেয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর কন্যাহারা পরিবারটি বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ডুবে যায় চরম হতাশায়। ধারণা আছে কীভাবে কাটে তাদের দিন? কীভাবে বিনিদ্র রাত পার হয়? উত্তর আছে আপনাদের কাছে? বিচারব্যবস্থায় এই দীর্ঘসূত্রতাই আমাদের হয় চরম অবসাদগ্রস্ত নয়তো প্রবল অসহিষ্ণু করে তোলে। শুধু তাই নয়, কোর্টরুমে সওয়াল জবাবের নামে যা চলে সেটাও আরেকপ্রকার ধর্ষণ; মানসিক ধর্ষণ।

বহু পরিবার ঠিক এই কারণেই মামলা থেকে সরে দাঁড়ায়। ধর্ষণের নারকীয় বীভৎসতায় মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতিত ধর্ষিতার কাছে যখন ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ ও তৎসহ আরো কিছু অভিযোগ আরোপ করা হয় তখন শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলা একেবারেই অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মানসিকতা খুব একটা থাকে না বললেই চলে। সুতরাং আবার কম্প্রোমাইজ। এরপরেও যে বা যারা এই লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারেন তাদের স্নায়ু বোধহয় ইস্পাতের মতো কঠিন। তাঁদের জন্য হ্যাটস অফ।

নন্দিনী কর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.