সেদিনের বিজয়ীরা আজ 3%+3%, কিন্তু কৌশিকবাবুরা কিভাবে নীরব থাকেন? দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট কে করছে কৌশিকবাবু? তথ্য বিকৃতির প্রমান দিতে পারবেন?

বাঙালী অর্থনীতিবিদরা প্রত্যেক ভোটের আগেই এই ধরনের কথা হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন l একসময় মমতা ব্যানার্জীও এর কুফল ভোগ করেছেন (2004)l এখন অবশ্য উনি উল্টো দিকে l কৌশিক বসু এবার যোগ দিলেন এই ব্রিগেডে l অথচ কোন দিন এঁরা নিজের রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের তথা অশোক মিত্র, অসীম দাশগুপ্ত কিম্বা অমিত মিত্রকে প্রশ্ন করেন নি, কেন এই রাজ্যের লোকজন রোজ হাওড়া থেকে ট্রেন ধরছে দুমুঠো চালের জন্য? যে কেন্দ্র সরকার সাধারণ নির্বাচনের আগে ঘোষণা করতে ভয় পায় না, দেশের বেকারত্ব 45 বছরে সর্বোচ্চ, তাদের কি তথ্য লুকোনোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা যায়? 20% আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে আপনি প্রশ্ন তুলছেন l কিন্তু সরকার তো গত বছর 24% কমার কথা লুকোতের পারতো? আপনি (-)24% এর গল্প বলতে পারেন, অথচ আপনার বিরোধীরা +20% র গল্প বললে দোষ? আপনি জানেন না এদেশে এখনো ট্রেন চলছে না, কেউ রেস্টুরেন্টে খেতে যাচ্ছে না, লোকাল ট্রেন চলছে না, কেউ বেড়াতে যাচ্ছে না, বিমানে লোক নেই, দূরপাল্লার ট্রেনে লোক নেই, লোকজন সম্ভব হলে নতুন জামাকাপড় কিনছে না, এমনকি দরকার না হলে ডাক্তার বাবুর কাছে দাঁত তুলতেও যাচ্ছে না? জিডিপি পুরোনো জায়গায় রাতারাতি আসবে কিভাবে? এটা কি রিগিং করে ভোটে জেতা? আর যদি সরকারের তথ্য গোপনের ইচ্ছে থাকতো তাহলে তো +30% দেখাতে পারতো l আপনি প্রশ্ন তুলছেন টিকাকরণের সংখ্যা নিয়ে আর অনুপ্রাণিত আনন্দবাজার সানন্দে সেটা লিখছেও l টিকাকারণের সংখ্যা COWIN এ আসে এবং প্রতিটি সংখ্যা আধার কার্ডের সঙ্গে যুক্ত l আপনার সাধের ‘আইএএস’ তথা কলকাতা কর্পোরেশনের প্রাক্তন যুগ্ম সচিব দেবাঞ্জন দাস মহাশয়ের ক্যাম্পের তথ্য যে COWIN এ নেই সেটা তো আপনি আশাকরি জানেন l এবার আসি জিডিপিতে l আপনি বলছেন, 2016 র পর থেকে ভারতের জিডিপি নাকি কমছে l ভারত একা? যদি সেটাই হত তাহলে আমাদের 200 বছর লুটে চলে যাওয়া ফ্রান্স এবং ব্রিটেনকে জিডিপির পরিমাপে আমরা ছাড়ালাম কিভাবে 2019 এ?

কিন্তু অবাক লাগে যখন আপনারা নিজের রাজ্যের তথ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ নীরব থাকেন l পশ্চিমবঙ্গ সরকার বলছে, 80 লক্ষ মানুষকে চাকরি দেয়া হয়েছে l আপনার চেনা কেউ পেয়েছেন? নাকি আমেরিকা যাবার পর আত্মীয়সজনদের কোন খোঁজ রাখা হয় না? আমাদের মা মাটি মানুষের সরকার আগে 100 দিনের কাজকে চাকরি হিসেবে গন্য করতো, আগামীদিনে সম্ভবতঃ লক্ষীর ভান্ডারকেও চাকরি বলে চালানো হবে l রাজনৈতিক দল তো এটা করতেই পারে, কিন্তু অবাক লাগে যখন আপনি বা আপনার মত মানুষ এই ব্যাপারে নীরব থাকেন l

এই প্রসঙ্গে ডঃ অর্জুন সেনগুপ্তের একটা বিখ্যাত মন্তব্য মনে করা যাক l সম্ভবতঃ 2004 সাধারণ নির্বাচনের আগে ( যেই বার মানুষ অটলজিকে প্রত্যাখ্যান করে সোনিয়া গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য ভোট দেন ) l উনি বললেন, দেশের 80% মানুষ নাকি দিনে 20 টাকার বেশী আয় ও খরচা করেন না l আমাদের পাড়ার এক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক নাচতে নাচতে সেই খবর সবকটা চায়ের দোকানে বলতে লাগলেন l ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার ফ্ল্যাটের দারোয়ানের মাইনে কত? বললেন, মাসে 1500 টাকা, সঙ্গে থাকার জায়গা l পাশের অন্যান্য বাড়ি? উত্তর দিলেন, মোটামুটি ওই রকমই l ওনাকে বললাম, যদি অর্জুনবাবু ঠিক হন, তবে এখানকার প্রতিটি দারোয়ান 600 টাকা (20×30) মাসে নিতেন বাজারের নিয়ম অনুসারে l অধ্যাপক মহাশয় বললেন, “ভেবে দেখিনি, তবে ডঃ সেনগুপ্ত যখন বলছেন……..” l সেইবার পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-বিজেপি জোটের মমতা ব্যানার্জী বাদে প্রায় সবাই এই ধরনের প্রচারে হেরে গিয়েছিলেন l সেদিনের বিজয়ীরা আজ 3%+3%, কিন্তু কৌশিকবাবুরা কিভাবে নীরব থাকেন? দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট কে করছে কৌশিকবাবু? তথ্য বিকৃতির প্রমান দিতে পারবেন?

সুদীপ্ত গুহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.