হিজবুল মুজাহিদিন নামক টেরর গ্রুপটির মাথা হল Sayeed Salahudeen। এর উদ্দেশ্য গোটা কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা। ভারতের NIA’র Most Wanted List এ এই টেররিস্টের নাম আছে। US Department of States এর Specially Designated Global Terrorist হিসেবেও তার নাম আছে। এ হেন সালাহউদ্দিনের দুই ছেলে জম্মু কাশ্মীরের সরকারি কর্মচারী ছিল। গত জুলাই মাসে তাদের স্যাক করে জম্মু কাশ্মীরের বর্তমান প্রশাসন। তখন প্রশ্ন ওঠে বাপের অপরাধে ছেলেদের চাকরি যাবে কেন? প্রশ্ন তোলেন কারা? অনেকেই। তাঁদের মধ্যে অন্যতম মেহবুবা মুফতি, আসাদউদ্দিন ওয়েইসি প্রভৃতিরা। আজ সেই ধরনের লোকেরাই প্রশ্ন তুলছেন যে শাহরুখ-পুত্রের অপরাধ তো প্রমাণিত হয় নি। একটা 23 বছরের (দামড়া = fully grown up adult beyond marriageable age) ‘বাচ্চা ছেলে’ আদৌ কোনো অন্যায় করেছে কি না তা-ই জানা গেল না, আর BYJU শাহরুখ খানের বিজ্ঞাপন চালানো বন্ধ করে দিল? বলছেন তাঁরা। এমন বক্তব্যে সমর্থন জানিয়েছেন হর্ষ গোয়েঙ্কার মত শিল্পপতিও (এদেশে কে যে কি কি অ্যাক্টিভিটির সঙ্গে যুক্ত, you never know)।
এবার উল্টো গল্প। উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর। অভিযোগ উঠেছে ভারতের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনীর পুত্র আশিষ মিশ্রই নাকি তাঁর ড্রাইভারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন কৃষকদের (মানে সেই কৃষকদের যারা গত 2020 সালের 26শে নভেম্বর থেকে ক্ষেতে কাজ করছেন না, বরং রাস্তায় আন্দোলন করছেন) গাড়ি চাপা দিয়ে মারতে। অভিযোগ কারা করেছে? গত এক বছর যাবৎ চাষ না করা “কৃষক”রা। (please also note, এরা চাষ না করা সত্ত্বেও ভারতের কারেন্ট ইয়ারের শস্য উৎপাদন গত বেশ কয়েক বছরের গড় উৎপাদনকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ যে “কৃষক”রা গত এক বছর যাবৎ রাস্তায় আন্দোলন করছেন, চাষের ক্ষেতে তাদের অনুপস্থিতির কারণে ভারতবর্ষের কোনো উৎপাদন-হ্রাস তো হয়ই নি, কিছুমাত্র ক্ষতিও হয় নি, বরং তাৎপর্যপূর্ণভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছে। তৎসত্ত্বেও আমাদের মেনে নিতে হবে যে তারা “কৃষক”। কারণ লবি এবং ইকোসিস্টেম তাদেরকে “কৃষক” আখ্যা দিয়েছে। যারা প্রশ্ন তুলবেন ‘তবে কি এরা আদৌ চাষী?’ তারা ‘ইডিয়ট’, ‘মূর্খ’, ‘হিন্দু বাঙালীর লজ্জা’ এবং অবশ্যই ‘রিগ্রেসিভ’ ও ‘কৃষক-বিরোধী’ (এই সবকটি বিশেষণেই ব্যক্তিগতভাবে আমি ভূষিত হয়েছি টুইটারে)। সে যা-ই হোক, এ হেন “কৃষক”দের কথা এতই বিশ্বাসযোগ্য, তারা এতখানিই “সততার প্রতীক” যে তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে আশিস মিশ্রকে গ্রেফতারের তীব্র দাবী তোলে ভারতের গোটা সংবাদমাধ্যম। শেষ পর্যন্ত আশিস মিশ্র নিজে এসে দেখা করেন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে এবং জেরার পর একসময়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এই ঘটনার পর আসাদউদ্দিন ওয়েইসি প্রশ্ন তোলেন যে আশিস মিশ্র যখন গ্রেফতার হয়েছে তখন অজয় মিশ্রকে মন্ত্রীত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে না কেন? এ সেই ওয়েইসি যে বলেছিল ‘সালাহউদ্দিন টেররিস্ট বলে তার ছেলেদের সরকারি চাকরি যাবে কেন’? আজ সেই একই ওয়েইসি বলছে আশিস মিশ্র গ্রেফতার হয়েছে, তাহলে অজয় মিশ্র থাকবে কেন? অন্যদিকে যারা প্রশ্ন তুলছে যে আরিয়ান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া সত্ত্বেও শাহরুখের brand endorsement contract টি চলে গেল কেন, তারাও কিন্তু আশিস মিশ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই অজয় মিশ্রের ইস্তফা দাবী করছে।
সব দেখেশুনে দু’মুখো সাপেরা সব লজ্জায় রাজস্থানের মরুভূমির বালির মধ্যে ঢুকে গিয়েছে। আগামী দু’তিন সপ্তাহ তারা আর বেরোবে না।
দেবযানী ভট্টাচার্য