রাজ্যে নতুন করে এল আরও ভ্যাকসিন ডোজ। রবিবার দুপুরের বিমানে পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কলকাতায় এল কোভিশিল্ড। এবার রাজ্যে এল ১৬ লক্ষ ৭০ হাজার ডোজ কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন। এর আগে কোনওবারই রাজ্যে একসঙ্গে এত ভ্যাকসিন ডোজ আসেনি। এবারই এত ডোজ একসঙ্গে এল। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে কোভিশিল্ড নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাগবাজার সেন্ট্রাল স্টোরে।
এদিকে, সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভ্যাকসিন নিয়ে দালালচক্রের রমরমা কারবারের অভিযোগ তুললেন খোদ সরকারি চিকিৎসক। হুগলির পুড়শুড়া ডিহিবাতপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘটনা। সরকারি চিকিৎসকের অভিযোগ, সাধারণ মানুষ ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশ দালাল চক্র চালাচ্ছেন। সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভ্যাকসিন তাঁরা বাইরে বিক্রি করছেন। দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তাঁকে হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে বলেও অভিযোগ এই চিকিৎসকের। গোটা ঘটনা ই-মেল করে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ও জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, এমনটা ঘটা অসম্ভব। তবে চিকিৎসকের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হবে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও ভ্যাকসিন না মেলার অভিযোগে রাস্তা অবরোধ করল ক্ষুব্ধ জনতা। অবরোধস্থলে শাসক দলের পুরপ্রধানের উপস্থিতি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি বেঁধে যায়। যদিও অবরোধের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বুনিয়াদপুরের পুরপ্রধান।
রশিদপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য এদিন ভোর থেকে লম্বা লাইন পড়ে। অভিযোগ, বেলা ১২টার পর জানানো হয়, এদিন ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরেও ভ্যাকসিন না পাওয়ায় হাসপাতালের ভিতরে শুরু হয় বিক্ষোভ। উত্তেজিত জনতা হাসপাতালের বাইরে ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। অবরোধস্থলে দেখা যায় তৃণমূল পরিচালিত বুনিয়াদপুর পুরসভার পুরপ্রধানকে। তাহলে কি শাসক দলের পুরপ্রধানও অবরোধে সামিল? শুরু হয় বিতর্ক। বংশীহারি থানার আইসি অবরোধ তুলতে এলে, শুরু হয় কথা কাটাকাটি। যদিও পরে পুরপ্রধান দাবি করেন, তিনি অবরোধে সামিল হননি। এ নিয়ে শাসক দলকে খোঁচা দিয়েছে বিজেপি।
দেশে করোনার (COVID-19) তৃতীয় ঢেউ রুখতে জোরকদমে চলছে টিকাকরণ। শুক্রবার ঐতিহাসিক নজির গড়ল ভারত। এই প্রথম দেশে এক দিনে এক কোটিরও বেশি করোনা ভ্যাকসিন ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে। শেষ পাওয়া খবরে, এক কোটিরও বেশি ভ্যাকসিন সংখ্যা অতিক্রম করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ভারত। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
করোনা মহামারি ছেয়ে যাওয়ার পর গতবছরই দেশে করোনার ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। চলতি বছর জানুয়ারিতে, সরকার প্রথম পুণের কোম্পানি সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার কোভিশিল্ড এবং তারপর ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনকে অনুমোদন দেয়। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে টিকাকরণ শুরু হয়।
নরেন্দ্র মোদী ট্যুইট করে জনগণকে একথা জানান। তিনি লেখেন,”এক কোটি অতিক্রম করে দেশ একটি উল্লেখযোগ্য স্থান অর্জন করেছে। যাঁরা টিকা পেয়েছেন এবং যাঁরা টিকাকরণে সফল হয়েছেন তাদের অভিনন্দন।”
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডবীয়াও দেশে একদিনে এক কোটি ভ্যাকসিন ডোজ অতিক্রম করার কথা জানান। তিনি ট্যুইটে জানান, “সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রার্থনা। এই একই প্রচেষ্টা যার মাধ্যমে দেশটি একদিনে এক কোটিরও বেশি ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্য অতিক্রম করেছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং প্রত্যেককে টিকা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীজির সংকল্প, বিনামূল্যে টিকাকরণের লক্ষ্য কার্যকর হচ্ছে।”
একই সময়ে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ট্যুইট করেছেন, ” ১ দিনে ১ কোটি টিকা। দেশ করোনার সঙ্গে যেভাবে লড়াই করছে তা বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী মোদীজির নেতৃত্বে এই নতুন ভারত বিশ্বকে দেখতে সক্ষম হয়েছে।”
এখনও পর্যন্ত, দেশে মোট ৬০ কোটিরও বেশি করোনা ভ্যাকসিন ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে। দেশের প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে দুটি ডোজই দেওয়া হয়েছে।