প্রধানমন্ত্রীর সর্বদল বৈঠকে জম্মু ও কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর দাবি

প্রধানমন্ত্রীর সর্বদল বৈঠকে জম্মু ও কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর দাবি ।জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে তাঁদের জানানো হয়েছে,”এই বিষয়টি সঠিক সময়ে বিবেচনা করা হবে। সেই সঠিক সময় এখনও আসেনি।”  জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক শেষে যৌথ ভাবে এমনটাই দাবি করলেন বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতারা।২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা তুলে নেওয়া হয়েছিল। প্রত্যাহার করা হয়েছিল সংবিধানের ৩৭০ ধারা। তারপর জম্মু ও কাশ্মীরকে দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখকে আলাদা দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। এই পরিবর্তনের পর বৃহস্পতিবার প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখোমুখি হলেন উপত্যকার রাজনীতিবিদরা।  এদিন কাশ্মীরের ৮টি স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের ১৪ জন প্রথম সারির নেতাকে নিয়ে সর্বদল বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী  । উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুখ এবং ওমর আবদুল্লাহ, পিডিপি’র মেহবুবা মুফতি, কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ-সহ কাশ্মীরের তাবড় শীর্ষনেতারা। সরকারের তরফে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার এই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে মূলত কাশ্মীর এবং জম্মুর বিধানসভার পুনর্বিন্যাস এবং দ্রুত নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা নিয়ে। তবে, এসবের মাঝে শিরোনামে উঠে এল কাশ্মীরের পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর দাবি। বৈঠকে গুপকার জোট অর্থাৎ ফারুখ আবদুল্লাহ, মেহবুবা মুফতিদের নেতৃত্বে যে সাত দলীয় জোট তৈরি হয়েছে, সেই জোটের তরফে কাশ্মীরের পূর্ণরাজ্য এবং বিশেষ মর্যাদা ফেরানোর জোরাল দাবি তোলা হয়। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুখ আবদুল্লাহ উপত্যকার বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর দাবিতে সরব হন। একই সুর শোনা যায় কংগ্রেসেরগলাতেও। তবে সূত্রের খবর, কেন্দ্র এখনও কাশ্মীরের পূর্ণরাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর ব্যাপারে কোনও আশার বাণী উপত্যকার নেতাদের শোনায়নি। তাঁদের জানানো হয়েছে,”এই বিষয়টি সঠিক সময়ে বিবেচনা করা হবে। সেই সঠিক সময় এখনও আসেনি।” তবে, সরকার যে উপত্যকার রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর, সেটা স্পষ্টত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবং তাতে অধিকাংশ বিরোধী নেতাই আশ্বস্ত হয়েছেন বলে সূত্রের দাবি। কেন্দ্র আপাতত কাশ্মীরে দ্রুত নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করার ব্যাপারে তৎপর। উপত্যকার দলগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এলাকা পুনর্বিন্যাস সম্পূর্ণ হলেই নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে উল্লেখ করেন যে, জম্মু ও কাশ্মীরে ফের কীভাবে গণতন্ত্র স্থাপন করা যায়, সেই দিকে নজর দিতে হবে। সেখানকার উন্নয়নমূলক দিকগুলিতে মনোনিবেশ করা দরকার বলে মত প্রকাশ করেন মোদী। পাশাপাশি তিনি উপত্যকার তরুণদের কর্মসংস্থানের বিষয় নিয়েও কথা বলেন। তাছাড়া তিনি স্কিল ইন্ডিয়ার উদ্যোগ নিয়েও কথা বলেছেন।
এদিক, আজ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠক শেষে বিরোধীদের হয়ে কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ‘‘আমাদের পাঁচটি দাবি ছিল। অবিলম্বে জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিধানসভা নির্বাচন করাতে হবে, কাশ্মীরী পণ্ডিতদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, সব রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে ও আধিপত্য আইনে বদল আনতে হবে। বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।’’
এদিন বৈঠক শেষে মোদী এবং শাহ দু’জনেই টুইট করেন। প্রধানমন্ত্রী টুইটে লেখেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রের সবথেকে বড় শক্তি হল আলোচনায় বসে মতামত আদান-প্রদান করতে পারা। আমি জম্মু ও কাশ্মীরের নেতাদের বলেছি যে সেখানকার যুব সমাজকে সেখানে রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে তাঁদের আকাঙ্ক্ষাগুলি যথাযথভাবে পূরণ হয়।’
পাশাপাশি অমিত শাহ তাঁর টুইটে লেখেন, ‘আমরা জম্মু ও কাশ্মীরের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জম্মু ও কাশ্মীরের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংসদের আলোচনা মত পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পুনরুদ্ধারে ডিলিমিটেশন মহড়া এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.