জার্মানরা নিজেদের শুক্রাচার্যের সন্তান হিসেবে সনাক্ত করে ‘স্বস্তিক’ চিহ্নটিকে উল্টোমুখে ঘুরিয়ে (anti-clockwise) নাৎসি দর্শনের প্রধান প্রতীক করে নিয়েছিল ও দাবি করেছিল যে ওরাই আদি ও অকৃত্রিম আর্য। সেই অজুহাতেই ওরা তৈরি করল ওদের উন্নত জাতিসত্তার তত্ত্ব। বৈদিক বিচারে যে অদ্বৈত দর্শন, সে ওরা বুঝলোও না, বোঝার চেষ্টাও করল না। সেদিক দিয়ে ওরা কট্টর ক্রিশ্চান, যীশুর আগে কোন সভ্য চিন্তা হয়ে থাকতে পারে, এ কথা ওরা মানতে নারাজ। বৈদিক ভারতে যত বহির্বিঁজ্ঞানের নমুনা, সে সবের কারিগর ওরাই, এমন এক মিথ্যা মায়াজাল তৈরি করতেই ওদের পাঠ্যসূচিতে এত ভারততত্বের রমরমা।
সপ্তর্ষিমণ্ডল যেভাবে ধ্রুব তারাকে (Polaris) প্রদক্ষিণ করে মহাকাশে সেই গতি ও দিশা বোঝাতেই এই স্বস্তিক চিহ্ন প্রকাশে এসেছে। এ ছাড়াও চারটি দিক ও পৃথিবীর ঘুর্ণণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একই সাথে ভাষার এক কাব্যিক ও বৈজ্ঞানিক ভূমিকা ও ব্যবহার লক্ষ্য করার মত। যেমন ‘উত্তর’ দিক আবার ‘উত্তর’ কাল। হিমালয়ের দিকে যাচ্ছেন মানে আপনি উত্তর দিকে যাচ্ছেন, আবার সেখানেই আপনি জীবন জিজ্ঞাসার ‘উত্তর’ খুঁজছেন। প্রশ্ন আসে আগে, উত্তর আসে পরে। স্বাধীনতা-উত্তর যুগ অর্থাৎ স্বাধীনতার পরবর্তী। একইভাবে, ‘পূর্ব’ দিক, আবার পূর্ব কাল। যা আগে হয়ে গেছে। সূর্য আগে যেখান থেকে ওঠে, পূর্ব। আর একটু বিস্তৃত করলে পূর্ব মানে ‘অতীত’, যা আগে হয়ে গেছে। স্থান এবং কাল, দিশা ও গতি কেমন একাকার কারণে বাস্তবেও তাই হয়। এই বৈশিষ্ট’কেই আইনস্টাইন বলেছিলেন ‘Space Time curvature’. একে অপরের সাথে আপেক্ষিক। আপনি আমার থেকে দূরে আছেন, আমি যত সেই দূরত্ব ঘোচাচ্ছি তত দেখা হওয়ার ক্ষণ’টিকে কাছে টেনে আনছি।
সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতার মহেনজোদারো, রাখিগড়ি বা হারাপ্পাতে বহু স্বস্তিক চিহ্ন পাওয়া গেছে। অনেক প্রমাণের মধ্যে এও আর এক অকাট্য প্রমাণ যে ‘পূর্বে’ দ্রাবিডিয় নগর সভ্যতা ও ‘উত্তরকালে’ গ্রামীণ আর্য সংস্কৃতির গল্পটা আগাগোড়া ভূয়ো।
অগ্নিতে আহুতি দেওয়ার সময় আমরা ‘ওঁ স্বস্তি’ বলি, যে গতি আমাদের ধারণ করে। স্বস্তি থেকেই স্বস্তিক বা স্বস্তিকা। স্বস্তি থেকেই এসেছে ইংরেজি শব্দ ‘sustain’ ও ‘sustainability’. জ্যোতির্বিজ্ঞান, কালজ্ঞান, দিশা-বিজ্ঞান, পরিবেশ ও ভাষাতত্ত্বের কেমন হৃদয়গ্রাহী ও কাব্যিক সমীকরণ।
✍️- জয়দীপ