লোকসভা নির্বাচনের আগে ইভিএম মেশিন নিয়ে অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ২১টি বিরোধী দল। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর ডিভিশন বেঞ্চ এই অভিযোগের ভিত্তিতে নোটিস পাঠালো নির্বাচন কমিশনকে। নোটিসে বলা হয়েছে, ইভিএম নিয়ে বিরোধীদের করা প্রশ্নের জবাবে ২৫ মার্চের মধ্যে দেশের শীর্ষ আদালতের কাছে রিপোর্ট পেশ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সেই রিপোর্ট দেখেই হবে পরবর্তী শুনানি।
ইভিএম মেশিনকে সুরক্ষিত রাখার দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় কংগ্রেস, চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি, শরদ পাওয়ার এনসিপি, অখিলেশ যাদবের সপা, মায়াবতীর বসপা, অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আপ এবং বামপন্থী দলগুলি। শুধুমাত্র ইভিএম মেশিনের সুরক্ষা নয়, বিরোধী দলগুলি আরও দাবি জানায় অন্তত ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে ইভিএম-এর সঙ্গে ভিভিপ্যাট যুক্ত করতে হবে।
গত রবিবার উনিশের লোকসভা নির্বাচনের সূচি ঘোষণা হওয়ার পর প্রথমে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিরোধীরা। নির্বাচন কমিশনের তরফে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়, বাইরে থেকে ইভিএম মেশিনে কারচুপি করার কোনও সম্ভাবনা নেই। যদি কেউ মেশিন চুরি করে তার মাদারবোর্ডে কিছু কারচুপি করে তাহলেই তা সম্ভব। তার আগে নয়। এমনকী কমিশনের তরফে এও জানানো হয়, বর্তমানে নির্বাচনে কোনও দল হেরে গেলে তার প্রথম লক্ষ্য হয় ইভিএম মেশিন। হেরে গেলেই ইভিএম মেশিনে কারচুপির অভিযোগ তোলা সোজা বলেই এটা করা হয়। কারণ, ইভিএম মেশিন তো আর নিজের সাফাই গাইবে না। এমনকী নির্বাচন কমিশনের তরফে চ্যালেঞ্জ করা হয়, কেউ ইভিএম মেশিন হ্যাক করে দেখাক। কিন্তু সেই চ্যলেঞ্জ নিতে কেউ এগিয়ে আসেনি।
ভিভিপ্যাট নিয়ে বিরোধীদের করা প্রশ্নের জবাবে নির্বাচনের কমিশনের তরফে তখন বলা হয়েছিল, কমিশনের তরফে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, প্রত্যেক কেন্দ্র অনুযায়ী কত শতাংশ ভিভিপ্যাট ইভিএম-এর সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব হবে। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, আইএসআই যে তথ্য দেবে, সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে।
ইভিএম মেশিনে কারচুপির অভিযোগ বিরোধীদের অনেকদিনের। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার অভিযোগ করেছেন, ভোটিং মেশিনে কারচুপি করতে পারে বিরোধী। এমনকী লোকসভা নির্বাচনের আগে দলীয় কর্মীদের বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন, মেশিন পরীক্ষা করার সময় ভালো করে দেখে নিতে। ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জেতার পরে একই অভিযোগ তুলেছিলেন সপা নেতা অখিলেশ যাদব ও বসপা নেত্রী মায়াবতী। মায়াবতী তো ব্যালট পেপার ফিরিয়ে আনারও দাবি জানিয়েছিলেন। আম আদমী পার্টি নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়াল এর আগে বহুবার ইভিএম মেশিনে কারচুপির অভিযোগ করেছেন। এমনকী কংগ্রেসের তরফেও নির্বাচনী প্রচারে দাবি করা হয়েছে, নিজেদের হার বাঁচাতে ভোটিং মেশিনে কারচুপি করতে পারে বিজেপি।
এখন দেখার বিরোধীদের দলগুলির প্রশ্নের জবাবে নির্বাচনের কমিশন কী রিপোর্ট পেশ করে সুপ্রিম কোর্টে।