কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের চিকিৎসা ও মৃতদের সৎকার সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রীম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করল

আজ ১২ জুন দেশের সর্বোচ্চ আদালত স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করল।কেন্দ্র ও পাঁচটি রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যে জারি করা এই নির্দেশিকায় করোনায় আক্রান্তদের সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা দেবার করা বলা হয়েছে।সেই সাথে মৃতদের সম্মানজনক ভাবে সৎকারের ব্যবস্থা করতেও নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রীম কোর্ট (Supreme Court)।
সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে তিন বিচারপতি অশোক ভূষণ,সঞ্জয় কিষাণ কাউল ও শ্রী শাহ’র বেঞ্চে শুনানি চলছিল।
বিচারপতিগণ এ-ও লক্ষ্য করেন যে জাতীয় রাজধানী দিল্লীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক কোভিড-১৯ এর পরীক্ষা করা হচ্ছে না।

বেঞ্চ বলেছেন যে,”আমরা মৃতদের চেয়ে জীবিতদের নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।মুম্বাইতে প্রতিদিন ১৬-১৭ হাজার মানুষের করোনার টেস্ট করা হচ্ছে।অথচ দিল্লীতে সেটা ৭ হাজারের নিচেয়!কিছু কিছু হাসপাতালে তো মৃতদেহ ওয়ার্ডেই ফেলে রাখা হচ্ছে!গণ প্রচার মাধ্যম বিষয়টিকে সামনে এনেছে।”

বিচারপতি শ্রী ভূষণের পর্যবেক্ষণ,কিছু রাজ্যে মৃতদের আবর্জনার স্তূপে ফেলে দেওয়া হচ্ছে!তিনি বলেন যে," পশুদের চেয়েও হীন ভাবে করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসা হচ্ছে!"

সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা আদালতে বলেন,”জীবিত রোগীদের পাশেই মৃতরা ঘুমাচ্ছেন!কোথাও দড়িতে বেঁধে মৃতদের টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে!”
এ-নিয়ে তুষারবাবুর কাছে বিচারপতি শ্রী শাহ জানতে চান,” বিষয়টি নিয়ে আপনারা কী ভাবছেন”?

উল্লেখ্য যে,দিন দুই আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।তাতে দেখা যায়,গলিত মৃতদেহের গলায় হুক বিঁধে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের করোনায় মৃতদের দেহ বলে দাবি করা হয়।বিষয়টি সামনে আসতেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানায় যে,দেহগুলি করোনায় মৃতদের নয়।সেগুলি দাবিদার হীন দেহ

 সর্বোচ্চ আদালত ১০ জুন "ইন্ডিয়া টিভি"-তে সম্প্রচারিত একটি খবরের বিষয়েও উল্লেখ করে।খবরে দিল্লীর একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডের ছবি দেখানো হয়েছিল।তাতে দেখা যায় যে,ওয়ার্ডেই করোনায় মৃতদের ফেলে রাখা হয়েছে!লবি,প্রতীক্ষালয়েও মৃতদেহ রাখা!রোগীরা শ্বাস কষ্টে ছটফট করলেও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয় নি!এমন-কি সামান্য স্যালাইনও দেওয়া হয় নি হতভাগ্য করোনায় আক্রান্তদের!

 "এটা ছিল দিল্লীর এল.এন.জে.পি.হাসপাতাল।যেটাকে সরকার ২০০ শয্যার কোভিড-১৯ হাসপাতালে রূপান্তরিত করেছিল"।বেঞ্চের আরও পর্যবেক্ষণ যে,"দেশে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে।বিশেষ করে মুম্বাই-চেন্নাই-আহমেদাবাদে রোজই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।অথচ পর্যাপ্ত সংখ্যায় টেস্ট করা হচ্ছে না! টেস্ট না-করাটা কোনো সমাধান নয়।"বেঞ্চ মনে করে,"প্রত্যেকেরই অধিকার আছে নিজের শারীরিক পরিস্থিতির কথা জানার"।

 শ্রী ভূষণ মনে করেন,জনগণ করোনার টেস্ট করাতে চাইলে,তাঁদের কোনো অজুহাতেই ফেরানো উচিৎ নয়।প্রয়োজনে পরীক্ষার পদ্ধতি সরল করতে হবে।

করোনায় মৃতদের সৎকার বিষয়ে কেন্দ্র গত ১৫ মে-তেই নির্দেশিকা জারি করে।দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হল সেই নির্দেশিকা রাজ্য সরকারগুলি মানছে না!এমন-কি মৃতের আত্মীয়-পরিজনদের সময় মতো মৃত্যুর খবরটাও ঠিকঠাক দেওয়া হচ্ছে না!

সুপ্রীম কোর্ট আজ কেন্দ্রের সাথে পাঁচ অঙ্গরাজ্য,যথা– দিল্লী,মহারাষ্ট্র,পশ্চিমবঙ্গ,তামিলনাড়ু ও গুজরাটের উদ্দেশ্যে একই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে
বিজ্ঞপ্তিতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্য সচীব অথবা স্বাস্থ্য সচীবের স্বাক্ষর করা উত্তর চাওয়া হয়েছে।এবং তা ১৭ জুনের মধ্যে জানাতে হবে।

কয়েকদিন আগে দিল্লীর একটি খবর সামনে আসে। করোনায় আক্রান্ত ষাট বছরের এক বৃদ্ধ কোনো হাসপাতালে “বেড” না-পাওয়ায় ভর্তি হতে পারেন নি।কার্যত তিনি বিনা চিকিৎসায় মারা যান।খবরে আরও জানা যায় যে,করোনায় মৃতদের ঠিক মত সৎকারও করা হচ্ছে না।কখনও-বা সৎকার করা হলেও মৃতের পরিবারের অনুমতি নেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি সামনে আসতেই সুপ্রীম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি মামলা রুজু করে।এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই আদালত আজ এই বিজ্ঞপ্তি জারি করে।

     সুজিত চক্রবর্তী

https://www.barandbench.com/news/sc-issues-notice-in-suo-motu-case-on-covid-19-treatment-and-disposal-of-bodies-takes-note-of-deplorable-conditions-decreased-testing

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.